Loading..

শিক্ষায় অগ্রযাত্রা

২৭ অক্টোবর, ২০২০ ০৫:৫৫ অপরাহ্ণ

করোনা সংকটে অনলাইন ক্লাস শুরু করা এবং অনলাইন স্কুল প্রতিষ্ঠার গল্প

করোনা সংকটে অনলাইন ক্লাস শুরু করা এবং অনলাইন স্কুল প্রতিষ্ঠার গল্প

বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা একটি দ্বীপ হাতিয়া । নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা ট্রলার/ সিট্রাক যোগে নদী পার হয়ে যেতে হয় এ দ্বীপটিতে।জাতীয় গ্রিডের সাথে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই বলে এ দ্বীপের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।নেই উন্নত নেট সুবিধা,নেই ওয়াইফাই সংযোগ।নদী ভাংগনের সাথে সবসময়ই পরিচিত এবং অভ্যস্ত এ দ্বীপের মানুষ।তবে মনোবল সবসময়ই চাঙা,কখনও হতাশ হয়ে পড়ে না, কখনও পরাজয় মানে না। আমিও সে রকম একজন প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষক।করোনা পেন্ডামিক মার্চ থেকে শুরু হলেও সরাসরি আঘাত হানতে শুরু করে মার্চের মাঝামাঝিতে।১৭ মার্চ থেকে স্কুলসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেল।বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে অনেক মাস বিদ্যালয় আর খুলছে না। এপ্রিলের শুরু। মাথায় আসলো বসে থেকে লাভ কি! রুরাল আর আরবান প্রত্যেক জায়গায় যেহেতু ককম বেশি নেট আছে, প্রত্যেক পরিবারে যেহেতু এন্ড্রয়েড ফোন রয়েছে সেহেতু শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসের প্রতি মনোযোগী করতে হবে।নিজের আইডি থেকে পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজী ক্লাস দিয়ে যাত্রা শুরু।এরপর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির বিভিন্ন বিষয়ে পাঠ দান।নিজ স্কুলের পেইজে ক্লাসগুলো শেয়ার করি। সাথে সাথে জেলা পেজসহ বাংলাদেশের অনেক বিভিন্ন অঞ্চলের পেজে লাইভে ক্লাস দেয়া শুরু করি।যা সারা দেশে সমাদৃত হয়।সংযুক্ত হতে থাকে বাংলাদেশের বিভাগীয় শহর থেকে গ্রাম অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা। নিজের ক্লাস পরিচালনার পাশাপাশি উদ্বুদ্ধ করতে থাকি নিজ উপজেলা, নিজ জেলার শিক্ষদেরকে।নিজের এগিয়ে চলার দৃঢ় প্রত্যযে এগিয়ে আসেন অনেক সহকর্মী।খোদ হাতিয়া উপজেেলা থেকে অনেকে ক্লাস দেয়া শুরু করেন। হঠাৎ মাথায় আসলো যদি নিজের উপজেলার নামে একটা অনলাইন স্কুল ওপেন করি তাহলে তো এ দ্বীপের অনেক সহকর্মী শিক্ষক বন্ধু ঘরে বসেই ক্লাস পরিচালনার সুযোগ পাবে। তাৎক্ষণিক যোগাযোগ শুরু করি a2i জেলা এম্বাসেডরসহ a2i এর অভিজিৎ স্যার, ইমরান অভি স্যার,সাঈদুল টুটুল স্যার,নজরুল ইসলাম পবা স্যারসহ অনেকের সাথে। সবাই যখন এ প্রক্রিয়াকে স্বাগতম জানালো ঠিক পরদিনই সরাসরি যোগাযোগ করি হাতিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয় জনাব মাহবুব মোর্শেদ স্যার, UEO, AUEO স্যারদের সাথে। সকলের উৎসাহ আর সহযোগিতা পেয়ে Hatiya Online Primary School,Noakhali নামে একটি ফেসবুক পেইজ খুলে হাতিয়া উপজেলার ৩০+ শিক্ষকদের নিয়ে নিয়মিত ৬/৭ টি ক্লাসের ভার্চুয়াল জগতে নিজের মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে পুরো দেশে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখোছি।যা সারাদেশেই ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছে এবং প্রশংসিত হয়েছি সকল স্তরে।আমার বিদ্যালয়ের অথার্ৎ নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজের হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৫০% শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাস দেখছে এবং ফিডব্যাক দিচ্ছে।প্রত্যেক অভিভাবকের মেসেনজারে ক্লাসগুলো সেন্ড করে দিচ্ছি এবং পেইজের সাথে জয়েনড দিয়ে সংযুক্ত করে দিয়েছি। ২০০৬ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর থেকে তিনি মানবিকতা, আন্তরিকতা, পরিশ্রম ও নিত্য নতুন উদ্ভাবনী সৃষ্টি দিয়ে তার স্কুল, উপজেলা, জেলা এবং সারাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।শিশুদের পাঠদানের লক্ষ্যে পাশাপাশি সংসদ টিভিতে ক্লাসগুলো দেখার জন্য উদ্বুদ্ধ করি। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ঘাটতি কমানোর জন্য এছাড়াও হাতিয়া উপজেলার কমিউনিটি রেডিও "রেডিও সাগরদ্বীপ FM 99.2 তে নিয়মিত পাঠ পরিচালনার মাধ্যমে দ্বীপের শিক্ষার্থীদের দোরগোড়ায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি হাতিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব মাহবুব মোর্শেদ মহোদয় এবং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে দ্বীপ উপজেলার শিক্ষকদের লাইভ, রেকর্ডেড ক্লাস পরিচালনায় সহায়তা করে যাচ্ছেন।জাতির এ সংকট মূহূর্ত্বে হাতিয়া উপজেলার মতো একটি বিচ্ছন্ন দ্বীপ থেকে লাইভ ক্লাস পরিচালনা করে হাতিয়া দ্বীপসহ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অন লাইন ক্লাসের মাধ্যমে আমাদের কোমলমতী শিক্ষার্থীদের মাঝে এখন প্রায় এ দ্বীপের ৩০ জনের অধিক প্রাথমিকের শিক্ষক শ্রেণি পাঠের মাধ্যমে দ্বীপের শিশুসহ বাংলাদেশের প্রত্যেক অঞ্চলে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছে।ঢাকা শহরেরর পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাশরীফেরর কাছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষকদের অনলাইন ক্লাস নাকি সবসময়ই ভালো লাগে। মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ইমতিনান মাহমুদ ফোনে জানান প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষকদের পাঠ সে খুব সহজে বুঝতে পারে। নিয়মিত হোমওয়ার্ক পাঠাতে তার কোন কষ্টই লাগে না। বরং সে ক্লাস গুলো উপভোগ করে। এসব দেখতে আমারও খুব ভালো লাগে। করোনাকালীন সময়ে এপ্রিল থেকে আমার এই যে প্রচেষ্টা তা সত্যিই নিজেও উপভোগ করছি।দেশের জন্য সংকট মূহূর্ত্বে কিছু করতে পেরে নিজের এ পরিশ্রম সার্থক মনে হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১০০তম লাইভ ক্লাসের মাইলফলক স্পর্শ করে ১৫০ লাইভ ক্লাসে দ্বারপ্রান্তে। 


আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি