Loading..

ম্যাগাজিন

১৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ০৬:০৩ অপরাহ্ণ

কেন এই নীতি ব্যবস্থাপনার? পর্ব -১

ব্যবস্থাপনার নীতিটি নিয়ে  আলোচনা করার আগে আপনাদের সকলের  জানা একটা গল্প মনে করিয়ে দেই।  গল্পটা এক  সুখী কৃষক ও তার স্ত্রী এবং তার কিছু পোষা প্রাণির । কিন্তু তাদের পরিবারে নতুন সমস্যা হচ্ছে এক ইঁদুর ।ইঁদুর ধরার জন্য কৃষক একটি কল(ইঁদুর ধরার যন্ত্র) বাসায় আনলেন। ইঁদুর তাতে ভয় পেয়ে কৃষকের পোষা প্রাণী মুরগি ও ছাগলের কাছে গেল এবং সাহায্য চেয়ে বলেছিল কৃষককে নিষেধ করতে যাতে কলটা ব্যবহার না করে ।মুরগি  ও ছাগল বলল এটা তোমার সমস্যা , আমাদের  না।সেই  দিন রাতে কৃষকের স্ত্রী ইঁদুর ধরার কলটা রান্না ঘরে একটা অন্ধকার  কোনায়  বসাল। ভোর রাতে হঠাৎ কলটার একটা আওয়াজ  হল। কৃষকের স্ত্রী মনে করেছিল ইঁদুর ধরা পড়েছে ।কিন্তু কলে সাপ ধরা পড়েছিল। কলটা ধরতেই সাপ কৃষকের স্ত্রীকে কামড় দিলো। কৃষকের স্ত্রীকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হল। ডাক্তার কৃষকের স্ত্রীকে সুপ খাওয়াতে বলল ।কৃষক তার মুরগি জবাই করে সুপ বানিয়ে খাওয়ালো ।কয়কদিন পরে কৃষকের স্ত্রী মারা গেলো ।কৃষক তার ছাগল জবাই করে মেজবান দিল।অসহায়  কৃষকও কিছু দিন পরে মারা গেলো।  

 

 কর্মী দলই প্রতিষ্ঠানের  চালিকা শক্তি ।কর্মী দলের সাহায্যে  প্রতিষ্ঠান তার  লক্ষ্যের   দিকে এগিয়ে যায় সঠিক  ব্যবস্থাপনার   মাধ্যমে । ব্যবস্থাপনা  হলো কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এক বা একাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত কোন দলের  উপর কর্তৃত্ব স্থাপন ও নিয়ন্ত্রণ । ব্যবস্থাপনা বলতে মানব সম্পদ  ও প্রাকৃতিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণকেও বোঝানো হয়ে থাকে।  কর্মীদের   লক্ষ্যের  দিকে নিয়ে যাওয়াই ব্যবস্থাপনার কাজ।  এটা হতে পারে পারিবারিক জীবন সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা বা পেশাগত দাপ্তরিক ব্যবস্থাপনা। ব্যবস্থাপনার এই  কাজ কতগুলো নীতি মেনে পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠানে প্রচলিত সবার জন্য গ্রহণযোগ্য এবং অবশ্যই পালনীয় নির্দেশনাকে নীতি বলে।  আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক  হেনিরি ফেয়ল ১৪ টি নীতি প্রকাশ করেন। যেমন-১. কার্য বিভাগ,২. কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব,৩. নিয়মানুবর্তিতা ,৪. আদেশের ঐক্য,৫. নির্দেশনার ঐক্য ,৬. প্রতিষ্ঠানের সাধারণ স্বার্থে নিজের স্বার্থ ত্যাগ ,৭. পারিশ্রমিক , ৮. কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণ ,৯. জোড়া মই শিকল নীতি ,১০. শৃঙ্খলা ,১১. সমতা  ,১২. চাকরিকালের স্থায়িত্ব ,১৩. উদ্যোগ  এবং ১৪. একতাই বল।এর অন্যতম একটি হল “প্রতিষ্ঠানের সাধারণ স্বার্থে  নিজের স্বার্থ ত্যাগ”। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান যখন সমস্যায় পড়ে তার কর্মী দলকে তাদের স্বার্থ ত্যাগ করে প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখে ।  

 

শরীরের কোন অংশে  ব্যথা পেলে যেমন সমস্ত শারীর ব্যথা অনুভুত হয় এবং সমস্যা দেখা দেয়। তেমনি প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মী বা সেকশনে সমস্যা হলে তা কিন্তু সমস্ত প্রতিষ্ঠানের সমস্যা। করোনা সংকটে সরকার ২৫% কর্মী নিয়ে অফিস পরিচালনা করতে বলছে আর ৭৫% কর্মী অনুপস্থিত বা পালাক্রমে আসবেন । এই ২৫% কর্মী অনুপস্থিত ৭৫% কর্মীর অভাব পূরণ করবেন  ।এতেও নিজের ত্যাগ দেখা যাবে।

 

দলের বিপদে বাইশ গজে কখনো একাই লড়তে হয়েছে  তামিম ইকবালকে ।বিপদের মুহূর্তে দলকে একাই টেনে নিয়ে যান নিরাপদ জায়গায়।করোনাভাইরাসের দুঃসময়ে অসহায় হয়ে পড়া খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়িয়েছেন । দেশের ৯১ জন অসহায়-অসচ্ছল খেলোয়াড়দের আর্থিক সহায়তা করেছেন তামিম । নিজের স্বার্থ ত্যাগ করেছেন ক্রিকেট খেলোয়াড় টিকে থাকতে ,যাতে খেলাটা হারিয়ে না যায়।

 

অনেক সময় ছোট কিংবা কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে যাওয়া হয়।মানসিকতার কারণে অনেকেই  যে সমস্যার বিষয়টা এড়িয়ে যান  পরে তা কিন্তু মারাত্মক আকার ধারণ করে। । কোন ব্যক্তি যদি এমন কোন সমস্যা গোপন করেন। যা প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতির কারণ , তাহলে তিনি এই নীতি ভঙ্গ করলেন । নিজের জন্য নয় প্রতিষ্ঠানের জন্য ত্যাগ স্বীকার করলে ,  আপনার মাঝে  এই নীতি কাজ করছে । ইঁদুরের  কথা যদি মুরগি ও ছাগল অবহেলা না করত তাহলে সুখী  কৃষক পরিবার হয়তো বেঁচে যেত  । মুরগি ও ছাগল কিন্তু ইদুরের সমস্যা তাদের মনে করেনি ।  

 

সমাজের কোন সমস্যাকে অবহেলা করা ঠিক নয়। সবাই আমরা সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ। আরেক  জনের সন্তানের   সমস্যা কিন্তু আপনারই সমস্যা। সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করা যদি  না যায়  আপনার সন্তানও নিরাপধ না।সমাজের অন্যান্য সমস্যার  ক্ষেত্রেও একই ধরণ প্রভাব আছে।

 

পরিবার ব্যবস্থাপনায় বাবা- মা যে ত্যাগ স্বীকার করেন তা নিজের জন্য না ,সন্তানদের জন্য। শিক্ষক যে ত্যাগ স্বীকার করে তা নিজের জন্য না,তার ছাত্রের জন্য ।নেতা যে ত্যাগ স্বীকার করেন তা নিজের জন্য না ,দেশের জন্য। বাবা-মা, শিক্ষক ও নেতারা যে ত্যাগ স্বীকার করেন তার দ্বারা পরিবার,বিদ্যালয় ও দেশ টিকে থাকে। কারণ বাবা-মা,শিক্ষক ও নেতা তার প্রতিষ্ঠানের  ব্যবস্থাপনা করেন এই নীতি অনুসরন করে।যে কোন ব্যবস্থাপনায় “প্রতিষ্ঠানের সাধারণ স্বার্থে  নিজের স্বার্থ ত্যাগ” এই নীতি অনুশীলন ভাল ফল দেয়।

 

মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন

প্রভাষক (ব্যবস্থাপনা)

বি এ এফ শাহীন কলেজ চট্টগ্রাম

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি