Loading..

খবর-দার

২২ জানুয়ারি, ২০২১ ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের প্রতিটি অর্জনে পথ দেখিয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুসরণ করেই দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় দেশে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখলে হবে না; এটি একটি প্রতিষ্ঠান, যেটি আমাদের প্রতিটি অর্জনের পথ দেখিয়েছে, আমাদের সব অর্জনের বাতিঘর। তার সে আলো ছড়িয়ে পড়বে সারাদেশে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত 'সেলিব্রেটিং হান্ড্রেড ইয়ারস অব দি ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা :রিফ্লেকশনস ফ্রম দ্য অ্যালামনাই- ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড ন্যাশনাল' শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তির অনুষ্ঠানে সরাসরি অংশ নিতে না পারার আক্ষেপও ঝরে শেখ হাসিনার কণ্ঠে। তিনি বলেন, আজকে করোনাভাইরাসের জন্য বিশ্ব স্থবির। আমিও ঘরে বন্দি। মাঝেমধ্যে মনে হয়, ২০০৭ সালে যখন গ্রেপ্তার হয়েছিলাম, তখন একটা ছোট কারাগারে ছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, একটা বড় কারাগারে আছি। যে কারণে আজকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন হচ্ছে, কিন্তু সরাসরি উপস্থিত থাকতে পারলাম না। এটা সত্যিই আমার জন্য খুব কষ্টের, দুঃখের। মনটা পড়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ে, কিন্তু উপায় নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার হূতগৌরব ফিরে পাক, সেটাই তার এবং সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের দেশের সর্বোচ্চ সম্মানজনক একটি বিশ্ববিদ্যালয়। কাজেই এর পূর্ব গৌরব আবার ফিরে আসবে। তিনি বলেন, এখানে জ্ঞানের চর্চা হবে, গবেষণা হবে, শিক্ষার প্রসার ঘটবে- সেটাই আমরা চাই। আসন্ন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে আমরা যেন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারি। আর সেটা পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সরকারপ্রধান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেটি আমাদের প্রতিটি অর্জনে পথ দেখিয়েছে। কাজেই এ বিশ্ববিদ্যালয় আরও সুন্দর এবং উন্নত হোক, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তার সরকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তিনি ঐতিহ্যবাহী এই বিশ্ববিদ্যালয় ভবিষ্যতে যেন আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে উঠতে পারে, সে জন্য গৃহীত মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগ সম্প্রসারণের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, যেটা আমরা আনতে পেরেছি। অন্তত এটুকু দাবি করতে পারি, আমরা সরকার গঠন করার পর থেকে আমাদের প্রচেষ্টায় প্রতি রাতে অস্ত্রের ঝনঝনানি শোনা যায় না, গোলাগুলিও শোনা যায় না, বোমাবাজিও শোনা যায় না। তিনি বলেন, অবশ্য বলা যায় না, আজকেই কথা বললাম, হয়তো আজকেই কেউ টাস করে একটা ফোটাতে পারে। এটা অবশ্য আমাদের দেশে হয়ে থাকে। ওটা কিছু না, এগুলো নিয়ন্ত্রণ করার মতো দক্ষতা যথেষ্ট আছে।

জাতির পিতা যে জাতির জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন, সে জাতির ভাগ্য পরিবর্তনই নিজের লক্ষ্য বলে জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আর এর জন্য যে কোনো বাধা অতিক্রম করতে আমি সচেষ্ট। আমি বিশ্বাস করি, এটা মানুষও উপলব্ধি করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হবো। এর পরও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি কাঠামো রেখে যাচ্ছি। ২০৭১ সালে যেদিন দেশের শতবর্ষ উদযাপন হবে, সেদিন বেঁচে থাকব না। কিন্তু যারা থাকবে, তারা যেন উন্নত দেশে সেদিনটা উদযাপন করতে পারে, এটাই আমার ইচ্ছা।

করোনাভাইরাসের টিকা উপহার দেওয়ায় প্রতিবেশী দেশ ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন, যেটা আমরা পেয়েছি ভারত থেকে উপহারস্বরূপ, সেটা এসে গেছে। এ জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আমি ধন্যবাদ জানাই। করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিবাচক প্রভাব সারাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর প্রতিফলিত হয়ে থাকে। তাই আমাদের সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সময়োপযোগী কার্যসূচি ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করে বৈশ্বিক সূচকে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি সাধন করতে হবে।

সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। এতে তিনি বলেন, আমাদের নীতিনির্ধারকরা যারা একবিংশ শতাব্দীর উন্নত দেশের মর্যাদা অর্জনের দিকে পরিচালিত করতে আগ্রহী, তাদের দায়িত্ব শুধু শিক্ষার বিস্তার নয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার মানকে সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু করা উচিত।

অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ সাইটেশন পাঠ করেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। স্বাগত বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, হলের প্রাধ্যক্ষ, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভাগের চেয়ারম্যান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।