সহকারী শিক্ষক
২৩ জানুয়ারি, ২০২১ ১০:৫৬ অপরাহ্ণ
যবের ছাতুর অসাধারণ গুণাগুণঃ ছাতু গ্রাম বাংলার অনেক পরিচিত একটি খাবার।
যবের ছাতুর অসাধারণ গুণাগুণঃ
ছাতু গ্রাম বাংলার অনেক পরিচিত একটি খাবার। এ খাবারের উৎপত্তি যব থেকে। যার বৈজ্ঞানিক নাম 'Hordeum
vulgare'. এটি অতি প্রাচীন কাল থেকেই আমাদের খাদ্য তালিকায় স্থান
লাভ করেছে। শহরের ফাস্টফুড খেয়ে বেড়ে ওঠা আজকের শিশু কিশোররা এই খাবারের নামই হয়তো
শোনেনি অনেকে। কিন্তু অনেক প্রবীণ রয়েছেন, যারা ছোট বেলায়
আমের দিনে দাদির হাতের যবের ছাতু আর বাড়ির গাছের আমের রস দিয়ে মেখে খাওয়ার স্মৃতি
এখনো মনে রেখেছেন। গ্রামের খুব সাধারণ এই ছাতুর উপকারিতা জানলে অবাক হতে হয়,
মনের অজান্তেই হয়তো বলে দেবেন, ছাতুর তো
জবাব নেই।
এর স্বাস্থ্যগত উপকারীতা অপরিসীম। যব দিয়ে শিশুখাদ্য, ওভালটিন হরলিক্স সহ
বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার তৈরি করা হয়। স্কটল্যান্ড ও আফ্রিকায় এর ব্যাপক চাষ ও
ব্যবহার হয়। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের শরীরের সার্বিক উন্নতিতে ছাতু অনেক
বড় ভূমিকা পালন করে থাকে । শুধু তাই নয়,গরমের সময় শরীরকে
ঠান্ডা রাখতে এবং হিট স্ট্রোকের মত সমস্যাকে দূরে রাখতেও ছাতু অনেক উপকারী। সেই
কারণেই গরমের সময় ছাতুর চাহিদা বেশ বেড়ে যায়। ছাতুতে থাকা একাধিক খনিজ, ভিটামিন ও উপকারি ফ্যাট এবং ফাইবার নানা ভাবে আমাদের শরীরের উপকারে লাগে।
ছাতুর উপকারীতা:
১. এনার্জি বাড়ায়-
ছাতুতে রয়েছে ভিটামিন, ফাইবার ও নানা রকম খনিজ উপাদান যা খাওয়ার সাথে
সাথেই আমাদের রক্তে মিশে যায়। এর ফলে আমাদের শরীরে খুব দ্রুত এনার্জির মাত্রা বেড়ে
যায়। এর ফাইবার আমাদের পেটকে রাখে ভরপুর। একই সাথে আমাদের শরীরের ভেতরে ভিটামিন
এবং খনিজের ঘাটতি পূরণ হওয়ার কারণে সার্বিকভাবে শরীর এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাও
বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তাই তো প্রতিদিন সকালে ছাতু খুবই উৎকৃষ্ট একটি খাবার।
২. ওজন কমায়:
অন্যান্য খাবারে শর্করা থাকলেও ছাতুতে রয়েছে ফাইবার এবং উপকারী
ফ্যাট। যা আমাদের ওজন বাড়তে দেয় না। ছাতুতে ফাইবার থাকার কারণে অল্প খেলেই আমাদের
পেট ভরে যায়। তাই আমাদের খাবারের চাহিদা কমায় এবং অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ থেকে
আমাদের বিরত রাখে। সেই সাথে অনেক লম্বা সময় ধরে আমাদের পেটকে ভরপুর রাখে তাই বার
বার ক্ষিধে লাগে না। যারা অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তায় আছেন তাদের জন্য ছাতু অনেক
উপকারী একটি খবার।
৩. পাকস্থলীর কর্মক্ষমতা বাড়ায়:
আমাদের প্রাত্যাহিক খাবারের তেল এবং মসলা সমূহ আমাদের পাকস্থলীর
স্বাস্থ্য অনেক খারাপ করে দেয়। প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে যে পরিমাণ তেল আমাদের শরীরে
প্রবেশ করে, তা পাকস্থলী থেকে বের করে দিতে ছাতু অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
থাকে। এর ফলে আমাদের পাকস্থলীর কর্মক্ষমতা অনেক বেড়ে যায় সেই সাথে হজম ক্ষমতার
উন্নতি ঘটে।
৪. ডায়াবেটিসে উপকারী:
ছাতুতে গ্লাইসেমি কইনডেক্স কম হওয়ায় এতে থাকা শর্করা খুব
আস্তে আস্তে রক্তে মিশে যেতে থাকে। তাই এই ধরনের খাবার খেলে হঠাৎ করে শরীরে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কোনো আশঙ্কাই থাকে না। এ জন্যই ডায়াবেটিক রোগীর জন্য অনেক উপকারী একটি খাবার।
নিয়মিত ছাতু খেলে আমাদের রক্ত চাপ অনেক কমে যায়। যারা হাই ব্লাড প্রেসারে ভুগছেন
তাদের জন্য অনেক উৎকৃষ্ট খাবার ।
৫. মেয়েদের পুষ্টিসমস্যা মেটায়:
মেয়েদের পিরিয়ডের সময় শরীর অনেক দূর্বল হয়ে যায়। এ সময় তাদের শরীরে
পুষ্টি জনিত সমস্যা দেখা দেয়। আর এই পুষ্টির ঘাটতি দূর করতে ছাতুর অনেক উপকারী
একটি খাবার। এতে থাকা
প্রচুর খনিজ এবং ভিটামিন উপাদান শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে
থাকে।
৬. বাচ্চাদের শারীরিক বৃদ্ধি:
বাচ্চাদের শরীরের সঠিক বৃদ্ধির জন্য যে উপাদান গুলোর প্রয়োজন তা সবই
রয়েছে ছাতুতে।
বর্তমানে বাজারের হেলথ ডিঙ্কের পরিবর্তে ছাতু কিন্তু বাচ্চাদের অনেক
ভালো একটি খাবার। বিশেষ করে ছাতুতে থাকা ক্যালসিয়াম, ফাইবার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রন বাচ্চাদের
হাড় এবং দাঁতের গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর পাশাপাশি বাচ্চাদের রক্ত
স্বল্পতা দূর করে এই খাবারটি।
৭. ত্বক এবং চুলের জন্য উপকারী:
ছাতুতে থাকা প্রোটিন এবং অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট আমাদের ত্বক এবং এবং
চুলের জন্য অনেক উপকারী। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এক দিকে শরীরে থাকা ক্ষতিকারক টক্সিক
উপাদান নিঃস্বরণ করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। আর প্রোটিন আমাদের শরীরের
ভেতরের ঘাটতি পূরণ করে। এর ফলে আমাদের ত্বক এবং চুলের জেল্লা বৃদ্ধি করে। তাই
আমাদের ত্বকের এবং চুলের জন্য ছাতু বেশ উপকারী।
৮. বয়স্কদের জন্য আদর্শ খাবার:
বয়স্ক ব্যাক্তিদের খাবারের ব্যাপারে বেশ সতর্ক থাকতে হয়। কারণ এ বয়সে
তাদের হজম শক্তি অনেক কমে যায়। আর এ সময় নানা শারীরিক সমস্যা বাসা বাঁধে।
এক্ষেত্রে কিন্তু ছাতু বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে
৫০ বছরের পর থেকে যদি নিয়মিত ছাতু খাওয়া যায় তাহলে একাধিক বয়সকালীন রোগ শরীরে
বাসা বাঁধার কোনও সুযোগই পায় না। ফলে শেষ বয়সটা বেজায় নিশ্চিন্তেই কেটে যায়।
উন্নতমানের পানীয় তৈরিতে যবের দানা প্রধান উপাদান। একসময় নাস্তাতে
এবং মেহমানদারিতে মুড়ির মতো ছাতুও ছিল লোভনীয় ও জনপ্রিয় খাবার। বাংলাদেশের পাহাড়ি
অঞ্চলে যবের চাষ বেশি হয়। যব ছাড়াও ভুট্রা ও বুটের ডাল দিয়ে ছাতু গুড়ো তৈরি করা
যায়।