Loading..

প্রকাশনা

০২ ফেব্রুয়ারি , ২০২১ ০৩:৫০ অপরাহ্ণ

কাইজেলিয়া দুর্লভ ও বিরল প্রজাতির একটি বৃক্ষ

কাইজেলিয়া দুর্লভ ও বিরল প্রজাতির একটি বৃক্ষ

এশিয়ায় মাত্র পাঁচটি-বাংলাদেশের দুটিই কারমাইকেলে॥  কাইজেলিয়া দুর্লভ ও বিরল প্রজাতির একটি বৃক্ষ। গোটা এশিয়া মহাদেশে আছে মাত্র পাঁচটি। বাংলাদেশে দুটি। আর এ দুটি গাছই রয়েছে উত্তরের প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ রংপুরের কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসে। চমকে ওঠার মতো বিস্ময়কর এমন অজানা তথ্য দেশ-বিদেশের কজনেরই জানা।

ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় যেন কারমাইকেল কলেজের বিশাল ক্যাম্পাস। দিগন্তব্যাপী অজস্র বৃক্ষরাজের সবুজ সমারোহ আর মনোরম প্রাকৃতিক আলোছায়ার মাঝেই লুকিয়ে আছে মহামূল্যবান এ গাছ দুটি। দেশ বিদেশের অনেকেই জানেন না এ গাছের বিশেষ গুণাগুণ। গবেষণায় জানা যায়, এ গাছের ফল ভয়ানক বিষাক্ত হলেও তা প্রক্রিয়াজাত করে আলসার, সর্প দংশনের প্রতিষেধক, বাত, ছত্রাক, চর্মরোগ, মহিলাদের প্রসাধন সামগ্রী এমনকি ক্যান্সার রোগের চিকিৎসাতেও ব্যবহৃত হয়।

এ গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম কাইজেলিয়া আফ্রিকানা। প্রায় আট শ বিঘা জমির ওপর কারমাইকেল কলেজ চত্বরের প্রবেশ পথ পেরুতেই কলেজ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে একটি গাছের গোড়ায় দাঁড়াও পথিকবর-আমার নাম কাইজেলিয়া অঙ্কিত একটি বোর্ড চোখে পড়বে সবার। এ গাছটিই আসলে কাইজেলিয়া। প্রাচীন এমন আরেকটি গাছ রয়েছে খানিকটা অদূরে ক্যাম্পাসের মসজিদের সামনে। গাছটির উৎস কিংবা উৎপত্তি সম্পর্কে কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ, প্রবীণ শিক্ষক কিংবা স্থানীয় অনেক প্রবীণদের কাছেও সঠিক কোন তথ্য নেই।

কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক রাশেদা খাতুন জানান, কাইজেলিয়া বৃক্ষের আদি নিবাস আফ্রিকা। সম্ভবত কলেজ প্রতিষ্ঠাকাল ১৯১৬ থেকে ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠাতাদের কেউ দুর্লভ প্রজাতির তিনটি গাছ এখানে রোপণ করেছিলেন। পরবর্তীতে একটি মরে গেলেও এখন রয়েছে দুটি। আবার কারও কারও মতে, সে সময় বড় রকমের কোন ঝড় জলোচ্ছ্বাসের মাধ্যমেও কোন চারা এখানে এসে গজিয়ে উঠতে পারে। তিনি জানান, এ গাছের উচ্চতা হয়ে থাকে ২০ থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত। শীতের শেষে ফাল্গুন, চৈত্র ও বৈশাখ মাসে এ গাছে এক ধরনের ফুল ফোটে যার রং হয় মেরুন অথবা কালচে লাল। ফল দেখতে সুন্দর, লম্বা ও গোলাকৃতির অনেকটা মোটা বেগুনের মতো। একেকটি ফলের ওজন হয়ে থাকে ৫ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত।

কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক জানান, ৭৫ সালে তিনি যখন এ কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হন তখন থেকেই গাছ তিনটি দেখছেন। তখন এগুলো সবার কাছে অচিন বৃক্ষ নামেই পরিচিত ছিল। কিন্তু বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির আধুনিকায়নে ৯৪-৯৫ সালে কলেজের তৎকালীন উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. মোস্তফা কামাল পাশা এ গাছ দুটির ওপর বিষদ গবেষণা চালিয়ে আবিষ্কার করেন এর আদ্যোপান্ত। পরবর্তীতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েরশিক্ষকদের একটি দলও এর ওপর গবেষণা চালান। যেহেতু এ গাছের প্রজনন কিংবা বংশ বৃদ্ধির কোন সুযোগ নাই, তাই টিস্যু কালচারের মাধ্যমে এ গাছ থেকে তারা ১১টি চারা উৎপন্ন করেন এবং কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সামনে রোপণ করেন উৎপন্নকৃত দুটি শিশু চারা। আর বাকি ৯টি চারা রোপণ করা হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। মজার বিষয় হলো অপর ওই ৯টি চারা মরে গেলেও এখানকার দুটি বেড়ে উঠছে অনেকটাই। অর্থাৎ এখন এখানে প্রবীণ এবং নবীন মিলে চারটি কাইজেলিয়ার অবস্থান। তিনি জানান, এতেই প্রমাণ করে কারমাইকেলের মাটি ও আবহাওয়া এ গাছের জন্য অনেকটাই উপযোগী।

দুর্লভ ও বিরল প্রজাতির এ গাছ দেখতে বহুকাল আগে থেকেই দেশ-বিদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েরউদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ছাড়াও পর্যটকদের অনেকেই এখানে আসেন এবং এর সম্পর্কে জানার চেষ্টা চালান। তারা এর ছবিও তুলে নিয়ে যান। ইতোমধ্যেই কাইজেলিয়ার স্মৃতিকে ধরে রাখতে কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে কারমাইকেল কাইজেলিয়া শিক্ষা সংস্কৃতি সংসদ (কাকাশিস)। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চন্দন সাহা বাপ্পী জানান, আমরা একদিন থাকব না। হয়ত এ গাছগুলোও থাকবে না। আর তাই আমরা এর স্মৃতিকে আগামী প্রজন্মের কাছে ধরে রাখার জন্যই এ গাছের নামে সংগঠনের আত্মপ্রকাশ করেছি।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর বিনতে হুসাইন নাসরিন বানু জানান, প্রায়ই দেশ বিদেশের অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং পর্যটকরা আসেন। তাঁরা এ গাছ সম্পর্কে জানতে চান। তিনি জানান, যেহেতু এটি একটি বিরল এবং দুর্লভ প্রজাতির গাছ এবং এর ফল যেহেতু অনেক দূরারোগ্য ব্যাধির ঔষধি কাজে ব্যবহৃত হয় এবং এটাও প্রমাণিত যে এখানকার মাটি ও আবহাওয়া এ গাছের জন্য উপযোগী, সেহেতু টিস্যু কালচারের মাধ্যমেই হোক আর অন্য যেকোন উপায়েই হোক এর বংশ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আর এজন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কৃষি বিভাগকেই এগিয়ে আসতে হবে । (সংগৃহীত) 

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি