Loading..

মুজিব শতবর্ষ

০১ মার্চ, ২০২১ ০২:৫৫ অপরাহ্ণ

অগ্নিঝরা মার্চ

পাহাড়ের দৃঢ়তার চেয়ে দৃঢ় যাদের মনোবল সে জাতি কখনও পরাধীন থাকতে পারে না। বাঙ্গালি জাতি এমনই এক বীরের জাতি। আমাদের স্বাধীনতা আমাদের অহংকার। মার্চ মাস আমাদের গৌরবের মাস। অহংকারের মাস। স্বাধীনতা ঘোষণার মাস। আনুষ্ঠানিক সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মাস। 

একাত্তরের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণ রেডিওতে প্রচার না করায় প্রতিবাদে ফেটে পড়ে বাংলার মানুষ। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে বেতারকর্মীরা। বন্ধ হয়ে যায় রেডিওর সম্প্রচার। ফলে ৮ মার্চ সকালে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ রেডিওতে প্রচারে বাধ্য হয়। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে বাঙালি জাতি নতুন করে স্বাধীনতায় উদীপ্ত হয়ে ওঠে। ঘরে ঘরে শুরু হয় স্বাধীনতার প্রস্তুতি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সচিবালয়সহ সব সরকারি-বেসরকারি অফিস- আদালত বন্ধ হয়ে যায়। শুধুমাত্র ব্যাংকগুলো প্রতিদিন দুই ঘণ্টা খোলা থাকে স্বাভাবিক লেনদেনের জন্য। এক কথায় গোটা পূর্ব বাংলা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পরিচালিত হয়।


আজ সোমবার অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিন। বাঙালির জীবনে নানা কারণে মার্চ মাস অন্তনির্হিতি শক্তির উৎস। এ মাসেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।


এর আগে তিনি পাকিস্তানি শাসকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। মরতে যখন শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। রক্ত যখন দিয়েছি,রক্ত আরো দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো- ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।


১৯৭১ এর ৭ মার্চ সাবেক রেসর্কোস ময়দানে দেওয়া এই ঐতহিাসিক ভাষণের সময় মুহূর্মুহু গর্জনে উত্তাল ছিল জনসমুদ্র। লক্ষ কণ্ঠের একই আওয়াজ উচ্চারতি হতে থাকে দেশের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। ঢাকাসহ গোটা দেশে পত পত করে উড়ছিল সবুজ জমিনের উপর লাল সবুজের পতাকা। 


১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য যে আগুন জ্বলে উঠছেলি সে আগুন যেন ছড়িয়ে পরে বাংলার সর্বত্র। এর পরে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ এর ছয়দফা এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সিঁড়ি বেয়ে একাত্তরের মার্চ বাঙালির জীবনে নিয়ে আসে নতুন বারতা। এ বছরের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এর আগে ২৫ মার্চ রাত ১ টার অল্প পরে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি সৈন্যরা গ্রেপ্তার করে তার বাড়ি থেকে।


২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানিরা বাঙালির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার লক্ষ্যে অপারশেন সার্চলাইট নামে বাঙালি নিধনে নামে। ঢাকার রাস্তায় বেরিয়ে সৈন্যরা নির্বিচারে হাজার হাজার লোককে হত্যা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ছাত্র-শিক্ষককে হত্যা করে।


এর পরের ঘটনাপ্রবাহ প্রতিরোধের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর আহবানে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা হয়। আবালবৃদ্ধবনিতা যোগ দেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। দীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বের বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে জাতি লাভ করে স্বাধীনতা।


স্বাধীনতার মাস উপলক্ষে মাসের প্রথম দিন থেকেই শুরু হবে সভা সমাবেশ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নানা আয়োজনে মুখরিত থাকবে গোটা দেশ।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি