Loading..

খবর-দার

২০ এপ্রিল, ২০২১ ০৪:৩৮ অপরাহ্ণ

করোনা পরামর্শ কখন কোন ওষুধ ও চিকিৎসা ডা. মো. রোবেদ আমিন

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে রোগীর উপসর্গ ও শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমরা রোগীকে চার ভাগে ভাগ করতে পারি : ১. উপসর্গবিহীন করোনা পজিটিভ রোগী, যাদের কোনো ধরনের ওষুধ লাগবে না।

তারা শুধু আইসোলেশনে থাকবেন এবং খুব প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে নিরাপদ দূরত্ব ও মাস্ক পরিধান করতে পারেন।

২. কম উপসর্গের করোনা রোগী, যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০-এর উপর, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাত্রা ৩০-এর কম। এই রোগীরা বাসায় আইসোলেশনে থেকে লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা নেবেন এবং অক্সিজেনের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করবেন। যদি কাশি থাকে তাহলে কাশির সিরাপ, সর্দি থাকলে অ্যান্টিহিস্টামিন, জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল খাবেন। কোনো ধরনের ইনফেকশনের লক্ষণ, যেমন অনেক জ্বর বা কাশি না থাকলে এবং নিউমোনিয়ার লক্ষণ না থাকলে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন নেই।

৩. খুব বেশি নিউমোনিয়ার লক্ষণ, অক্সিজেন মাত্রা ৯০-এর নিচে, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাত্রা ৩০-এর বেশি এবং বুকের এক্সরেতে যদি মেঘের মতো ছবি দেখা যায়-এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসা অবশ্যই হাসপাতালে নিতে হবে। অক্সিজেন মেইনটেইন যা বিভিন্ন মাস্ক ও অক্সিজেন লেভেলের মাধ্যমে করা হয়। প্রোনিং পদ্ধতিতে রোগীকে বিছানায় সঠিকভাবে রাখতে হবে।

পরবর্তী সময়ে রোগীর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও ইনফেকশন মাত্রা দেখার জন্য নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা ও সিটি স্ক্যান করে দেখা যেতে পারে। রোগীর পরীক্ষার রিপোর্টে ইনফেকশনের মাত্রা যদি বেশি থাকে এবং শারীরিক অবস্থার যদি উন্নতি না হয়, শুরুতে অক্সিজেন ২-৬ লিটার দেওয়ার পরও যদি রক্তে অক্সিজেন লেভেল পর্যায়ক্রমে কমতে থাকে, তাহলে বিভিন্ন মাস্কের মাধ্যমে অক্সিজেন ১০-১৫ লিটার পর্যন্ত দেওয়া যেতে পারে এবং তাতেও যদি মেইনটেইন না হয়, তাহলে হাইফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলা মেশিন দিয়ে ৬০ লিটার অক্সিজেন দেওয়া যায়।

রোগীর বয়স ৪০-এর বেশি হয় এবং সেই সঙ্গে যদি ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, কিডনিজাতীয় পুরোনো কোনো রোগ থাকে, তাহলে আমরা পর্য়ায়ক্রমে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি- Low Molecular Weight Heparin/Unfractioned heparin (কিডনি রোগীর জন্য নিরাপদ)। অ্যান্টিবায়োটিক যেমন Ceftriaxone অথবা Amoxicillin+Clauvlanic acid অথবা Meropenam. স্টেরয়েড যেমন Dexamethason অথবা Methylprednisolone. অ্যান্টিভাইরাল Remdisivir, যা খুব বেশি সংক্রমণের শুরুতেই দিতে পারলে ভালো।

Baricinitib- এই ওষুধটি যদি দিতেই হয় তাহলে অবশ্যই Remdisivir-এর পর দিতে হবে। Toclizumab যা আজকাল অনেকেই করোনা চিকিৎসার শুরুতেই দিয়ে দিচ্ছে।

কিন্তু আমাদের খেয়াল করতে হবে কখন এ ওষুধটি আমরা ব্যবহার করতে পারি, কারণ ওষুধটি ব্যয়বহুল। যখন রোগীর সব ধরনের চিকিৎসার পরও তার রক্তে অক্সিজেন লেভেল কমে যাচ্ছে, যখন রোগীর শারীরিক অবস্থা খারাপের দিক যাচ্ছে, লক্ষণ বা উপসর্গ কমার কোনো লক্ষণ নেই বা উন্নতি নেই, সাইটোকাইন ঝড়ের মধ্যে রোগী যাচ্ছে, CRP-এর মাত্রা যদি ১০০-এর বেশি হয়।

Convalescent Plasma therapy-এর ব্যাপারে আমরা অনেকেই খুব বেশি তৎপর। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, অনেকে না বুঝেই হুড়োহুড়ি করে প্লাজমা খুঁজেন আর প্রতারণার শিকার হন। যদি প্লাজমা দিতে হয় তাহলে সংক্রমণের প্রথম ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দিলে ভালো এবং অবশ্যই তার নিউট্রালাইজিং টাইটার দেখতে যেন না ভুলি।

৪. ক্রিটিকাল রোগীদের আইসিইউ সাপোর্ট এবং মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন দিতে হয়।

কোনো রোগী চিকিৎসকের কাছে এলে তার রোগের বিশদ বর্ণনা ও লক্ষণ শুনে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা অথবা চিকিৎসা শুরু করা উচিত। সবাই মাস্ক পরবেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।

ডা. মো. রোবেদ আমিন : প্রফেসর অফ মেডিসিন; লাইন ডিরেক্টর, এনসিডিসি, ডিজি, হেলথ