Loading..

উদ্ভাবনের গল্প

০৮ জুন, ২০২১ ০১:১৬ অপরাহ্ণ

জাম খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা

জাম খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা

জাম বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত। ব্ল্যাক প্লাম জাম্বুল জাম্বোলান জাম্বাস মালাবার প্লাম রজামান নেরেডু কালা জামুন নাভাল জামালি জাভা প্লাম ইত্যাদি নামে এটি পরিচিত। এই ফল জুন আর জুলাই মাসে পাওয়া যায়। জেনে নেওয়া যাক এই ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

. রক্তে ​​শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে  ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জাম ফল খুবই উপকারী। কারণ, এতে থাকা অ্যান্টি-ডায়াবেটিক প্রোপার্টিজ-এর কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, যা  স্টার্চ চিনিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীরে  শক্তির যোগান দেয়। আরেকটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে জামের বীজ ৩০%-এর বেশি রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে।

. হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে

জাম ফলটি ক্যালসিয়াম, লোহা, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ এতে প্রচুর পুষ্টি রয়েছে যা সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। জামে থাকা প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম লৌহ  হাড়ের শক্তি বৃদ্ধির জন্য চমৎকারভাবে কাজ করে। তাই হাড় ক্ষয়ে যাওয়া রোগীদের এবং বয়স্ক মানুষদের খাবার তালিকায় এই সুস্বাদু ফলটি রাখা উচিত।

. ইনফেকশন দূর করে

জাম উদ্ভিদের পাশাপাশি  উদ্ভিদের ফলেও ম্যালিক এসিড (malic acid)গ্যালিক এসিড (galic acid)অক্সালিক এসিড (oxalic acid) এবং ট্যানিনস (tannins)এর মতো যৌগ রয়েছে, যা ফলটিকে অ্যান্টি-ম্যালেরিয়াল, অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়া, অ্যান্টি-ইনফেক্টিভ এবং গ্যাস্ট্রো-এর প্রতিরক্ষামূলক হিসাবে তৈরি করে। জাম ফলটিতে থাকা এত সব অ্যান্টি উপাদান শরীর থেকে বিষাক্ত ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে।

8. জন্ডিস অ্যানিমিয়া নিরাময় করে

জামের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানগুলোর মধ্যে আয়রন একটি। এই আয়রন দেহের বিভিন্ন উপকার করে থাকে। জাম ফলে থাকা আয়রন অ্যানিমিয়া এবং জন্ডিসকে নিরাময় করে এবং বিভিন্ন ধরনের আয়রনঘটিত সমস্যাগুলোর জন্য যারা ভুগছেন তাদের জন্য জাম খুবই ভাল।

ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য কর

বেশ কয়েকটি গবেষণায় জামের কেমো প্রটেক্টিভ (camo protective) বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে অনেকে তদন্ত হয়েছে। জে. সি. জ্যাগেটিয়া এবং তার কলিগ-দের একটি গবেষণা অনুযায়ী এই ফলের নির্যাসে প্রোটেক্টিভ বৈশিষ্ট্য আছে, যা প্রমাণ করে যে জামের নির্যাস ক্যান্সার হওয়া থেকে দেহকে রক্ষা করে থাকে। এটি ফ্রি রেডিক্যালস-কে নষ্ট করে দেয়।

. দেহে ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে

জাম দেহে ইমিউন সিস্টেম (immune system)-কে আরো বৃদ্ধি করে তোলে। এতে থাকা প্রচুর ভিটামিন-সি এর কারণে হাই লেভেল সাধারণ সিজনাল সমস্যাগুলোর সঙ্গে যুদ্ধ করে শরীরের ইমিউন সিস্টেম-কে আরো শক্তিশালী করে তোলে। এই ফল ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ হিসাবে, এটি স্কিন-এর জন্য ভাল এবং অকাল বার্ধক্যজনিত যে কোন কিছুতে এটি বাঁধা দেয়।

. ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ভালো

জামে আছে কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (glycemic index) যা ডায়াবেটিস-এর জন্য একটি ভাল বিকল্প। ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার ফল, যা প্রমান করে যে ডায়াবেটিস-এর দ্বিতীয় জটিলতার ঝুঁকি কমায় এই ফলটি। জামের পাতা, ছাল এবং বীজ ডায়াবেটিস-এর জন্য সবচেয়ে উপকারি অংশ। এর মধ্যে জামের বীজ অ্যান্টি-ডায়াবেটিক প্রোপার্টিজ হিসেবে প্রমাণিত।

. হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে

জামে আছে অ্যালজিনিক এসিড (alginic acid) বা অ্যালজিট্রিন (algitrin)অ্যান্থোসিয়ানিন (anthocyanin) এবং অ্যান্থোসায়ানাডিনস (anthocyanidin)-এর  মতো পুষ্টিসমূহ যা রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং এই যৌগগুলো শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস-সমৃদ্ধ যা অক্সিডেশন (oxidation) প্রতিরোধ করে এবং হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভালো রাখতে  অসামান্য অবদান রাখে। এছাড়াও এটি পটাসিয়াম-এর একটি সমৃদ্ধ ভাণ্ডার, যা উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সাহায্য করে, যা হার্ট অ্যাটাক-এর ঝুঁকি, স্ট্রোক প্রভৃতির ঝুঁকির কারণ।

সবশেষে বলতে চাই, গ্রীষ্মকালীন অন্যান্য ফলগুলোর মতো জাম এতোটা জনপ্রিয় নয় কিন্তু এতে আছে প্রচুর ভিটামিন এবং পুষ্টি উপাদান যা দেহের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ থেকে দেহকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। তাই আমাদের উচিত সহজলভ্য সুস্বাদু এই ফলটিকে অবহেলা না করে আমাদের খাদ্য তালিকায় এটি আজই যোগ করা।