তালগাছের অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী।The palm tree has miraculous powers

মোঃ আকতারুজ্জামান ০৩ ডিসেম্বর,২০২২ ৩৭ বার দেখা হয়েছে লাইক কমেন্ট ৫.০০ ()

 অলৌকিক ক্ষমতার  অধিকারী  তালগাছ,The palm tree has miraculous powers.

 

তাল বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অপ্রচলিত ফল। একক লম্বা কাণ্ড তার আগায় সুন্দরভাবে এক গুচ্ছ পাতার সমারোহে সুশোভিত তাল গাছ দেখতে অপূর্ব লাগে। নারিকেল, খেজুর, সুপারির মতো তাল একইপামীপরিবারভুক্ত। উদ্ভিদ এক দল বীজ পত্র দলীয় এবং গাছের শিকড় গুচ্ছ মূল বিশিষ্ট। তাল গাছের শিকড় মাটির বেশি গভীরে পৌঁছে না তবে শতাধিক গুচ্ছ মূল চারদিকে সমানভাবে ছড়িয়ে মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখে। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা (ঝড়, সাইক্লোন) থেকে গাছকে রক্ষা ভূমির ক্ষয় রোধ করে। বয়স্ক গাছ ৬০-৮০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। গাছের আগায় ৩৫-৫০টা শক্ত পাতা থাকে। পাতার আগা সূচালো হওয়ায় বজ্রপাত রোধক গাছ হিসেবে ফলের আবাদ অতি জনপ্রিয়। একই কারণে বজ্রপাতের কবল থেকে প্রাণিকুলকে রক্ষা করার জন্য গাছের বহুবিধ ব্যবহার সুবিধাকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে তাল ফল সম্প্রসারণে অনেক দেশেই প্রাধান্য দেয়া হয়। একই গুরুত্বে বাংলাদেশ সরকার চলতি বছরে (২০১৬-২০১৭) ১০ লাখ তাল চারা রোপণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। চলতি ২০১৭ সালে ডিএই লাখ তাল বীজ/চারা সারা দেশে রোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
 

পুষ্টিগুণ : তাল অতি পুষ্টিকর ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ। সব ধরনের ফলে দেহের জন্য উপযোগী বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন মিনারেলস সমৃদ্ধ হলেও তালে এর বহির্ভূত কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদন রয়েছে। অন্য ফলের তুলনায় ফলে ক্যালসিয়াম, লৌহ, আঁশ   ক্যালোরির উপস্থিতি অনেক বেশি। বয়স্কদের জন্য ফলের উৎস থেকে সহজেই হজমযোগ্য পর্যাপ্ত আঁশ প্রাপ্তিতে অতি গুরুত্ব বহন করে। আখের গুড়ের চেয়ে তালের গুড়ে প্রোটিন, ফ্যাট মিনারেলসের উপস্থিতি বেশি।
 

ঔষধিগুণ :  তালের রস আমাশয় নিরাময়, মূত্রের প্রবাহ বৃদ্ধিকারক এবং পেটের পীড়া/প্রদাহ, কোষ্ঠকাঠিন্য নিরসনে সহায়ক। ফলের রস সেবনে শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে, ক্লান্তি দূর করে, দেহে শক্তি জোগায় এবং অনিদ্রা দূর করে। তালের রস থেকে তৈরি  মিসরি সর্দি-কাশি নিবারণে বিশেষ করে শিশু বৃদ্ধদের জন্য মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। এছাড়া যকৃতের পীড়া পিত্তনাশক হিসেবে ফল অতি কার্যকর।  
  
উপকারিতা : কাঁচা-পাকা  তাল গাছের প্রতিটা অঙ্গ জনজীবনে অতি গুরুত্ব বহন করে। বয়স্ক গাছের (৫০ বছর তার ঊর্ধ্ব) কাণ্ডের টিম্বারভ্যালু খুব বেশি। গ্রাম-গঞ্জে টিনের বা সেমিপাকা বাড়ি তৈরিতে গাছের শক্ত দীর্ঘস্থায়ী কাঠের ব্যবহার জনপ্রিয়তা খুব বেশি। কাঁচাঘর তৈরিতে খড়ের বিকল্প হিসেবে দরিদ্র পরিবারবর্গ তালের পাতাকে অন্যতম উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।

বিশেষজ্ঞারা বলছেন,বজ্রপাত থেকে রক্ষা করা  তালগাছে কার্বনের স্তর বেশি থাকায় তা বজ্রপাত নিরোধে সহায়তা করে। তালগাছের বাকলে পুরু কার্বনের স্তর থাকে। তাল গাছের উচ্চতা গঠনগত দিক থেকেও বজ্রপাত নিরোধে সহায়ক। তালগাছের পাশাপাশি নারকেল গাছ, সুপারি গাছের মতো উচ্চতা সম্পন্ন গাছ বজ্রপাত নিরোধে বেশ কার্যকর। প্রকৃতি দিয়েই প্রকৃতিকে রক্ষা করতে হবে।

বজ্রপাত শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য মানুষের ভাবনার অন্ত নেই। তালগাছ লাগানোর পাশাপাশি নারকেল গাছ, সুপারি গাছ লাগানোর উদ্যোগকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে।

আর ঘন সবুজে আবৃত বিস্তীর্ণ ধানখেত, মাঝখানে কর্দমাক্ত মেঠোপথ, তার দুই পাশে মাথা উঁচু তালগাছ আমাদের উপকূল গ্রামীণ জীবনের প্রতিচ্ছবি। এমন সুন্দর নৈসর্গিক দৃশ্য এখন খুঁজে পাওয়া দুর্লভ। তালগাছ স্বল্পতার কারণে বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ   আশ্রয় হিসেবে গাছ বাবুই পাখিদের বড়ই প্রিয় জায়গা। বাবুই ছাড়াও অঞ্জন, বাদুরসহ নানা প্রাণী আশ্রয় হিসেবে গাছটি বেছে নেয়। দেশে তালগাছ প্রায় বিলুপ্ত হওয়ায় মৃত্যুর ঘটনাও বাড়ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে মৃত্যু বরণ করেছে হাজার ১৬৪ জন মানুষ। ২০১১ সালে ১৭৯ জন, ২০১১ সালে ২০১ জন, ২০১৩ সালে ১৮৫ জন, ২০১৪ সালে ১৭০ জন, ২০১৫ সালে ১৬০ জন, ২০১৬ সালে ২০৫ জন, ২০১৭ সালে ৩০১ জন, ২০১৮ সালে ৩৫৯ জন, ২০১৯ সালে ১৬৮ জন ২০২০ সালে মৃত্যুবরণ করেছে ২৩৬ জন।

প্রতি বছর গড়ে ২১৬ জনের বেশি মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুবরণ করেছে। আর ২০২১ সালে বজ্রপাতে অন্তত ৩৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতি বছর মার্চ থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

চলতি বছরে ২০২২ সালের মে পর্যন্ত বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৩৫। আগস্ট সকালেও নাটোরের বাগাতিপাড়ায় একজন যুবক, গুরুদাসপুরের একজন বড়াইগামের একজন কৃষক মারা গেছে। যুবকের সাথে আরও জন আহত হয়েছে। এমনকি ঈদের দিন দেশে বজ্রপাতে মারা গেছে অন্তত আট জন মানুষ।

সাধারণত একটি তালগাছ ৯০ থেকে ১০০ ফুট উঁচু হয়। উঁচু গাছ হওয়ায় বজ্রপাত সরাসরি গাছের মাধ্যমে মাটিতে চলে যায়। ছাড়াও ভূমিক্ষয়, ভূমিধস, ভূগর্ভস্থ পানির মজুত বৃদ্ধি মাটির উর্বরতা রক্ষা করে। তালগাছের আকর্ষণে বাড়ে মেঘের ঘনঘটা; ঘটে বৃষ্টিপাতও। তালগাছের শিকড় মাটির অনেক নিচ পর্যন্ত প্রবেশ করায় ঝড়ে হেলে পড়ে না কিংবা ভেঙে পড়ে না। যেখানে কোনো কিছু চাষ হয় না সেখানেও তালগাছ তার শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে যায়। নতুন রাস্তার ল্যান্ডস্কেপ, বাঁধ নদীভাঙন ঠেকাতে এর রয়েছে সফল প্রয়োগ।

পরিশেষে, তাল গাছ শুধু বজ্রপাতের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে না, বরং তাল গাছের নানান উপকারিতা রয়েছে। মানুষ বিভিন্নভাবে তাল গাছ দ্বারা উপকৃত হয়। যেমন: তালপাতার পাটি, তালপাতার পাখা একদা ছিল জনপ্রিয়। তালের রস, তালের গুড়, তালের শাঁস দিয়ে সুস্বাদু মিষ্টি খাবার রান্না করা হয়। তাল দিয়ে ঐতিহ্যবাহী অনেক পিঠা তৈরি করা হয়। তালের গাছ পাতা ঘরের কাজে এবং জ্বালানি কাজে ব্যবহার করা হয়। তালের পাতায় সুন্দরভাবে বাসা তৈরি করে সেখানে পাখি বসবাস করে। তালগাছ মানুষ পাখি উভয়ের জন্যই উপকারী।

 মোঃ আকতারুজ্জামান

সহকারী শিক্ষক

ভূরুঙ্গামারী পাইলট  উচ্চ বিদ্যালয়।

মতামত দিন
সাম্প্রতিক মন্তব্য
প্রবীর রঞ্জন চৌধুরী
২০ ডিসেম্বর, ২০২২ ০১:২৬ অপরাহ্ণ

শুভ কামনা।


পার্থ বৈরাগী
০৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ১০:১০ অপরাহ্ণ

লাইক ও পূর্ণ রেটিং সহ আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো। আমার আপলোডকৃত কনটেন্টগুলো দেখে লাইক ও পূর্ণ রেটিং সহ আপনার মতামত প্রদানের জন্য বিনীত অনুরোধ রইলো।


পার্থ বৈরাগী
০৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ১০:১০ অপরাহ্ণ

লাইক ও পূর্ণ রেটিং সহ আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো। আমার আপলোডকৃত কনটেন্টগুলো দেখে লাইক ও পূর্ণ রেটিং সহ আপনার মতামত প্রদানের জন্য বিনীত অনুরোধ রইলো।


মোছাঃ হোসনে আরা
০৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০৮:৫৩ অপরাহ্ণ

লাইক ও পূর্ণ রেটিংসহ আপনার জন্য শুভকামনা রইলো। আমার আপলোডকৃত কনটেন্ট, ভিডিও কনটেন্ট ও ব্লগ দেখে আপনার মূল্যবান লাইক রেটিং সহ মতামত ও পরামর্শ প্রত্যাশা করছি।


রুমানা আফরোজ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০৮:০৪ অপরাহ্ণ

লাইক ও পূর্ণ রেটিং সহ আপনার জন্য শুভকামনা। বাতায়নে এ পাক্ষিকে আমার আপলোডকৃত কনটেন্ট ও ব্লগ দেখে আপনার মূল্যবান মতামত ও পরামর্শ প্রত্যাশা করছি। আমার কন্টেন্ট লিঙ্কঃ https://www.teachers.gov.bd/content/details/1321411


তন্ময় কুমার মণ্ডল
০৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০৮:০১ অপরাহ্ণ

লাইক ও রেটিংসহ আপনার জন্য শুভকামনা। আপনার প্রোফাইল দর্শন করলাম, বেশ প্রাণময় কর্ম-তৎপরতা, আপনার উজ্জ্বল ভবিষৎ কামনা করছি। উপস্থাপন অসাধারণ ও চমৎকার। সামনে এগিয়ে যান, চলার পথ সুগম হোক এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমার প্রোফাইল দর্শন করে কন্টেন্ট ও ব্লগে লাইক রেটিং দেওয়ার অনুরোধ রইল। আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য চির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।


বীণা মিত্র
০৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০৭:৪৮ অপরাহ্ণ

🌹🌺❤️ লাইক ও পূর্ণ রেটিং সহ আপনার জন্য শুভকামনা। আপনার সফলতা কামনা করি। আমার আপলোডকৃত কনটেন্ট ও ব্লগ দেখে আপনার মূল্যবান মতামত ও পরামর্শ প্রত্যাশা করছি। https://www.teachers.gov.bd/content/details/1336465 🌹🌺❤️