
সহকারী শিক্ষক

১২ মে, ২০২৫ ১১:২১ অপরাহ্ণ
সহকারী শিক্ষক
কান্না
নাম জামিলা। ১ম শ্রেনীতে পড়ে।বর্ষা শুরু হয়ে গেছে। বৃষ্টির ছোয়া পেয়ে আরো বেশি সবুজ হয়ে উঠলো গ্রামের বৃক্ষ আচ্ছাদিত পরিবেশ।
বাড়িটা ঠিক সবুজ মাঠের মাঝে। আশে-পাশে কোনো বাড়ি ঘর নেই। সেই জামিলাদের বাড়ি গেলাম কাদা রাস্তা পেড়িয়ে। গিয়ে দেখি জামিলা মাঠে বল খেলে। ডাক দিলাম- জামিলা এদিকে এসো
-কি বলবেন?
-কেমন আছো তুমি?
-ভালো
-স্কুলে যাওনাই কেনো?
-না
-বলো। কেন যাওনি?
কোনো কথা নেই। নিরবে দাড়িয়ে আছে। মনটা খারাপ হয়ে গেলো জামিলার।
-তোমার আম্মু কই?
-ঢাকা
-তোমার দাদি?
-বাড়ি
-চলো বাড়ি চলো। তোমার দাদির সাথে কথা আছে।
বাড়িতে গেলাম। দাদির সাথে দেখা হলো। কেনো যায়নি স্কুলে জিজ্ঞেস করলাম।
স্কুলের কথা শুনলেই কান্না করে স্যার
কেনো কান্না করে
জানিনা। স্কুলের নাম শুনলেই কান্না জুড়ে দেয়।
ওর আম্মু কোথায়?
ঢাকায়
চাকরী করে?
না
ওর ছোট বোনের বয়স কত?
৩ বছর। দুই নাতনিকে নিয়ে সময় চলে যায়।
স্কুলে কেনো যায়না জামিলা
স্কুলের কথা শুনলেই কান্না করে দেয়।
জামিলা ওর দাদিকে জড়িয়ে কান্না করতে শুরু করে দিলো। ক্রমেই কান্না বেশি করতে লাগলো। জানিনা এটা কিসের কান্না। এক ম্যাডাম আছে তার ভয়ে অনেকেই স্কুলে আসতে ভয় পায়। তার ভয়েই হয়তো কাঁদে। অন্য কারনও থাকতে পারে।
চলো। তোমাকে আজ বাইকে নিয়ে যাবো।
তাতেও কান্না থামে না। ওর দাদি ঘরে নিয়ে গেলো। ড্রেস পড়ানোর জন্য। ঘরে গিয়ে আরো জোরে কান্না শুরু করে দিলো।এমন কান্না হয়তো কখনও কাঁদে নাই।
এই জামিলা সব সময় স্কুলে হাসি-খুশি থাকে। অনেক সুন্দর করে নাচতল পারে। গাইতেও পারে। পড়ালেখায় ভালো। তবে কেনো স্কুলের কথা শুনলেই কান্না করে জানিনা।
কান্না করতে করতে আসলো ড্রেস পরে। চোখে পানি। বাইকে উঠালাম। জামিলার প্রিয় গানটা গাইতে শুরু করে দিলাম।
একটু স্বাভাবিক হলো। স্কুলে আসলাম।
স্কুলে এসে আবার কান্না। খেলতে দিলাম। তাতেও কান্নার শেষ নেই। কান্নার মাঝে হারিয়ে গেলো ওর হাসি। অনেক চেষ্টার পরেও কান্না থামে না। শিশুদের এই কান্নার কী রহস্য হয়তো একমাত্র বিধাতাই জানে। কোনো মানুষ এটা হয়তো এখনও আবিস্কার করতে পারেনি কেনো শিশুরা কান্না করে।
৫৫
১০৭ মন্তব্য