Loading..

প্রকাশনা

২২ জুন, ২০২১ ০৫:৪৭ অপরাহ্ণ

ভার্চুয়াল জগতে নীরব বিপ্লব

অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের দেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। করোনার কারণে আজ সারা বিশ্ব কার্যত অচল। স্থবির হয়ে পড়েছে প্রায় সকল কার্যক্রম। দেশে করোনার ছুটি শুরু হলে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অনেকেই এই প্রতিকূল অবস্থায় কিভাবে শিক্ষাকার্যক্রম গতিশীল রাখা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন। এগিয়ে আসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই। ইউনিসেফ ও এটুআই-এর কারিগরি সহযোগিতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় শিক্ষা কার্যক্রম ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’। সংসদ টেলিভিশনে এই ক্লাসগুলি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুধু তাই নয় শিক্ষার্থীদের এই ক্লাসগুলির সঙ্গে যুক্ত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়। পাঠদানকারী শিক্ষক ক্লাস শেষে পাঠদানকৃত বিষয়ের ওপর বাড়ির কাজ দিচ্ছেন। প্রত্যেকটি বিষয়ের ওপর শিক্ষার্থীরা আলাদা খাতায় তারিখ অনুযায়ী বাড়ির কাজ সম্পন্ন করছে এবং স্কুল খোলার পর সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের কাছে জমা দেবে। এই বাড়ির কাজের ওপর প্রাপ্ত নম্বর ধারাবাহিক মূল্যায়নের অংশ হিসাবে বিবেচিত হবে। করোনা পরিস্থিতিতে শুরুতে এটি ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে যে সব এলাকায় সংসদ টেলিভিশন দেখতে সমস্যা হচ্ছে, সেসব এলাকার কেবল অপারেটরদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য নিতে স্থানীয় শিক্ষা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়। এই কার্যক্রম গতিশীল রাখতে সারা দেশের অ্যাম্বাসেডর শিক্ষকদের সঙ্গে এটুআই নিয়মিত ভার্চুয়াল মিটিং করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও উত্সাহ দিয়ে যাচ্ছে। এভাবে সারা দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে ভার্চুয়াল জগতে এক নীরব বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে।

শিক্ষকদের স্বতঃফূর্ত উদ্যোগে দেশে ১০০-র বেশি অনলাইন স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেমন রাজশাহী বিভাগীয় অনলাইন স্কুল, ময়মনসিংহ অনলাইন স্কুল, চট্টগ্রাম অনলাইন স্কুল প্রভৃতি। অনেক শিক্ষক ব্যক্তিগত বা প্রতিষ্ঠানের আইডি থেকেও নিয়মিত অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন। এসব ক্লাস নির্দিষ্ট রুটিন অনুযায়ী নিয়মিত নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনলাইন ক্লাস ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রতিটি ক্লাসের হাজার হাজার ভিউ হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা অনলাইনেই নানা রকম প্রশ্ন করছে। শিক্ষক সেসব প্রশ্নের সমাধান করে দিচ্ছেন। প্রতিবন্ধকতা শুরু থেকেই ছিল—কিভাবে ক্লাস নেবেন, কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন, কিভাবে ভিডিও করবেন, লাইভ ভিডিও করার জন্য কিছু যন্ত্রপাতিরও প্রয়োজন দেখা দেয়। তবে সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষক একে অপরকে সহায়তা করায় কাজটি সহজ হয়ে যায়। আর এতে বড়ো অবদান রাখছে শিক্ষকদের অনলাইন শিক্ষক বাতায়ন তথা এটুআই।

শিক্ষার্থীরা ফেসবুক গ্রুপ থেকে শুরু করে গুগল ক্লাসরুম, জুম, শিক্ষক বাতায়ন ফেসবুক গ্রুপ ও কিশোর বাতায়নসহ নানা পেজের মাধ্যমে ক্লাসে যোগ দিতে পারছে। এমনকি কেউ যদি ক্লাসে সরাসরি যুক্ত হতে না পারে ক্লাসের ভিডিও যে কোনো সময় অনলাইনেই পেয়ে যাচ্ছে। প্রথমদিকে ধারণা ছিল সারা দেশের শিক্ষার্থীদের এই ক্লাসের সঙ্গে যুক্ত করা কঠিন হবে। তবে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা অধিক মাত্রায় ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় কাজটি অনেক সহজ হয়ে যায়। আর লকডাউনের কারণে বাড়িতে থাকা বাবা-মায়ের স্মার্টফোন দিয়ে সহজেই তারা ক্লাসে অংশ নিতে পারছে। আর এভাবেই শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির একটা ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে।

তবে এটাও মনে রাখতে হবে, ইন্টারনেটের ধীরগতি ও উচ্চমূল্যের কারণে অনলাইন ক্লাসের সঙ্গে তাল মেলাতে অনেক শিক্ষার্থীর সমস্যা হচ্ছে। তারপরও যতদিন এই দুর্যোগ শেষ না হয়, এই মুহূর্তে অন্য কোনো বিকল্প সামনে নেই। যেহেতুে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়ের জন্য কিছুটা ব্যয়বহুল, তাই এ বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় আনা উচিত বলে মনে করি।

সিরাজগঞ্জ

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি