Loading..

খবর-দার

১৩ জুলাই, ২০২১ ০৫:১১ অপরাহ্ণ

জ্বরঠোসায় তুলসী পাতা

প্রায় সময় আমাদের ঠোঁটের কোনে কিংবা মুখের ভেতর ফুসকুড়ি হয় যা অনেক যন্ত্রনাদায়ক হয়। একে আমরা জ্বর ঠোসা কিংবা জ্বর ঠুটো বলি। এটাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ফিভার ব্লিস্টার বলে। জ্বর ঠোসা হলে আমরা মনে করি আমাদের শরীরে জ্বর আসলে জ্বর ঠোসা উঠে। কেউ কেউ আবার বলে রাতে গায়ে জ্বর বায় তাই জ্বর ঠোসা উঠে। কথাগুলো কতটা সত্য তা কি আমরা সবাই জানি??আসুন তাহলে জেনে নেই জ্বর ঠোসা উঠার আসল কারন, এবং তার থেকে পরিত্রাণের উপায়?? 


জ্বর ঠোসা কেন হয়?

জ্বরের কারনে জ্বর ঠোসা হয় কথাটা পুরোপুরি সত্য নয়।এই রোগের প্রধান কারণ হলো HSV-1 (Harpes simplex virus-1) এর ইনফেকশন।  আমাদের শরীরে  এই ভাইরাসের  ইনফেকশনের  কারণেই  মুলত জ্বর আসে। তবে জ্বরের কারণে কিংবা অন্যকোন ইনফেকশনের কারণে যদি আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যায় তাহলেও জ্বর-ঠোসা হতে পারে।  

এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রায় ৮০% মানুষ HSV-1 আক্রান্ত হয়ে থাকে,যা দেহে সুপ্ত অবস্থায় বিরাজ করে।কারও কারও ক্ষেত্রে দশ বছর বয়সে বা তারও পড়ে এর  প্রথম প্রকাশ ঘটে। এমনকি ফিভার ব্লিস্টার একবার সেরে গেলেও স্নায়ুকোষে HSV-1 ভাইরাস লুকিয়ে থাকার দরুন একজনের জীবনে বারবার এর প্রকাশ ঘটতে পারে।


HSV-1 ভাইরাস এ আক্রান্ত হতে পারে যে কেউ। কোন আক্রান্ত ব্যক্তির ঠোঁটের ব্লিস্টারের ভেতরে তরল বা লালা শেয়ার করার মাধ্যমে মুলত HSV-1 ইনফেকশন ছড়ায়।যেমনঃ . আঙুলের মাধ্যমে ব্লিস্টার স্পর্শকরে ঐ হাত দিয়ে শরীরের সৃষ্ট অন্য কোন ক্ষতস্থান স্পর্শ করলে, ব্লিস্টার ভেঙে যাওয়ার কারণে ব্লিস্টারে থাকা তরল আশেপাশের জায়গায় ছড়িয়ে পড়লে,আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা পানির গ্লাস বা চামচ ব্যবহার করলে, আক্রান্ত ব্যক্তির লিপস্টিক, লিপ-বাম বা অন্যান্য কসমেটিক্সে ইত্যাদি শেয়ার করলে ইত্যাদি। 

 সাধারণত ফিবার ব্লিস্টার কিছুদিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়। হাতের নাগালে থাকা কিছু ঘরোয়া টিপস অনুসরন করলে আমরা সহজেই সুস্থ হতে পারব।


১.আইস কিউবএকটি আইস কিউব নিয়ে কিছুক্ষণ ঘাঁয়ের ফোলা অংশে ধরে রাখুন। কিন্তু স্ক্রাচিং করবেন না। একদিনে কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করুন।আইস কিউব আপনার ফোলা ভাবকে দূর করবে এবং দ্রুত ঘা সারিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।


২.সুতির কাপড় নারিকেল তেলে ভিজিয়ে আপনার ক্ষতস্থানে হালকা চেপে চেপে লাগান। প্রত্যেক ঘণ্টায় এটি ব্যবহার করুন। নারিকেল তেল একটি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্ট।  যা ভাইরাসকে মারতে পারে। 


৩. আপনার আঙ্গুলের সাহায্যে মধু, ক্ষতস্থানে ৫ থেকে ১০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। দিনে দুবার ব্যবহার করুন। মধু অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রোপারটিস সমৃদ্ধ। এটি যে কেবলমাত্র সংক্রামিত কালশিটে নিরাময় করতে পারে তা নয়, ফুলে থাকা ত্বককেও শান্ত করে।


৪.মধু এবং আমলকী গুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে জ্বর ঠোসার ওপর লাগালে দারুন উপকার মেলে। প্রসঙ্গত, হলুদ গুঁড়োর সঙ্গে মধু মিশিয়ে লাগালেও একই উপকার মেলে।


৫.জ্বর ঠোসার ওপর কিছু পরিমাণ অ্যালোভেরার রস লাগিয়ে রেখে দিন। এতে তাড়াতাড়ি উপকার পাওয়া যায়।


৬.তুলসি পাতা কতটা উপকারি, তা তো আমরা সবাই জানি। এছাড়াও তুলসি পাতা ম্যাজিকের মতো কাজ করে জ্বর ঠোসা সারিয়ে তুলতে। জ্বর ঠোসা হলে সতেজ নিমপাতা চিবিয়ে তারপর জল খেলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও মেথি পাতা ভিজিয়ে সেই জল দিয়ে দিনে দু-তিনবার মুখ ধুলেও সমান উপকার মেলে।  


৭.এরকম সমস্যা বেশি হলে রসুন বেশি করে খান। প্রতিদিন গরম ভাতে রসুন আর কাঁচালঙ্কা ভেজে খান। খেতে পারেন রসুনের আচার। কিংবা কাঁচা রসুনও খেতে পারেন। এছাড়াও রসুনের কোয়া বেটে নিয়ে ক্ষতস্থানে লাগালেও ভালো ফল পাওয়া যায়।


জ্বর-ঠোসার সমস্যাটা জটিল না হলেও বেশ পীড়াদায়ক। যে কোনো সংক্রমণই ব্যক্তিগত প্রতিরোধের মাধ্যমে কমিয়ে আনা সম্ভব। সবাইকে মনে রাখতে হবে যে কখনও নখ দিয়ে জ্বর-ঠোসা খুটানো যাবেনা এতে হাতের মাধ্যমে ভাইরাস চোখসহ শরীরের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে  পড়তে পারে।