সহকারী শিক্ষক
১৮ জুলাই, ২০২১ ০৮:০৩ অপরাহ্ণ
আসুন গাছ লাগাই, গাছ বাঁচাই। গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান ।
বৃক্ষরোপণে বিশ্বকল্যাণ: আসুন গাছ
লাগাই, গাছ বাঁচাই। গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান । গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান ।গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান।
গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান । গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান । গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান ।
গাছ পরিবেশের সবচেয়ে উপকারী বন্ধু। মানব জীবনে গাছের উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। কাঠ, ফল থেকে শুরু করে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যা কিছু দেখতে পাচ্ছি সবই গাছের অবদান। অথচ আমরা ক’জনই বা বুঝি গাছের গুরুত্ব? আমরা শুধু মুখেই আওড়াই ‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান।’ আমরা গাছ লাগাই না। আমরা সবাই যদি অন্তত একটি করে গাছ লাগাতাম তাহলে আজ পরিবেশের এত বিরূপ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। এজন্য নাই সরকারি, বেসরকারি কোনো উদ্যোগ। শুধু কিছু দিবস যেমন পরিবেশ দিবস, ধরিত্রী দিবস ইত্যাদি এলেই আমাদের গাছ লাগানোর কথা পড়ে। আর বছরের বাকি সময় যেন আমরা কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমিয়ে কাটাই। অনেকেই বলে থাকেন—আমাদের দেশে গাছ লাগানোর জন্য উপযুক্ত জায়গা নেই। অথচ সড়ক, মহাসড়ক ও রেললাইনের পাশে প্রচুর ফাঁকা জায়গা পড়ে আছে। এগুলোতে যদি আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, আমলকি, বহেরা, হরতকি, সফেদা, বেদানা ইত্যাদি ফলের গাছ লাগানো হয় তাহলে এগুলো একদিকে যেমন আমাদের ফলের চাহিদা পূরণে বিরাট ভূমিকা রাখবে তেমনি আমরা তা থেকে পাব কাঠ। এছাড়াও দেশের আনাচে-কানাচে, চর ও নদীরপাড়সহ প্রচুর খালি, অনাবাদি জায়গা পড়ে রয়েছে। আসুন খালি জায়গাগুলোতে গাছ লাগিয়ে দেশটা সবুজে ভরে তুলি।
আজ আমাদের সামনে পরিবেশের গভীর সংকট। এই
মহা সংকট থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে কেবল সবুজ বন্ধুরা, অর্থাৎ, গাছপালা। এটা
আমাদের অজানা নয়। কিন্তু তার পরেও বৃক্ষরোপনের তুলনায় বৃক্ষনিধনই আমরা চারপাশে
বেশি দেখছি। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বারবার বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব তুলে ধরছেন। তারা বেশি
বেশি গাছ লাগানোর কথা বলছেন। তা সত্ত্বেও আজকের পৃথিবীতে বৃক্ষরোপণ ও বন সংরক্ষণের
কাজগুলো ঠিকঠাক হচ্ছে কি? আসুন, আজ
একটু ভেবে দেখি।
বিশ্বব্যাপী বৃক্ষরোপণ: ইতিহাসের এক ঝলক
ওয়াঙ্গারি মাআথাই-এর নাম হয়তো শুনেছেন। আফ্রিকার গ্রিন বেল্ট আন্দোলন-এর রূপকার মাআথাই বৃক্ষরোপণের একজন বিশ্বনায়িকা। সবুজায়নে বিশেষ অবদানের
জন্য তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারও পান। তাকে একবার আমেরিকার এক কর্পোরেট কর্তা
বলেছিলেন, তার সংস্থা বিশ্ব জুড়ে ১ মিলিয়ন (১০ লাখ) গাছ
লাগানোর প্ল্যান করছে। শ্রীমতী মাআথাই তখন তাকে হাসতে হাসতে বলেন, “তা বেশ, তবে আমাদের কিন্তু আসলে ১ বিলিয়ন (১ শ কোটি)
গাছ লাগানো দরকার”। সে প্রায় বছর পনেরো আগের কথা।
তারপর আমাজন, মিসিসিপি, কঙ্গো,
হোয়াংহো, গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। ২০০৬
সালে রাষ্ট্রসংঘ পরিবেশ প্রকল্পের অধীনে শুরু হয়েছে বিলিয়ন ট্রি ক্যাম্পেইন। উদ্দেশ্য ছিল, ফি বছর পৃথিবীতে ১ বিলিয়ন বৃক্ষরোপণ করা। পরে বৃক্ষরোপণের এই
লক্ষ্যমাত্রা আরো বাড়ানো হয়েছে। ২০১৭ সালে এই অভিযানের নামটাই পাল্টে, করা হয়েছে ট্রিলিয়ন
ট্রি ক্যাম্পেইন। বিজ্ঞানীরা অবশ্য আগে থেকেই বলে আসছেন, পরিবেশ বাঁচানোর জন্য বিশ্ব জুড়ে অ-নে-ক অ-নে-ক বৃক্ষরোপণ
দরকার।
বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব
আশা করা যায়, বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
সম্পর্কে আজ আমরা সকলেই কিছু না কিছু জানি। বৃক্ষরোপণ কেনো দরকার? দরকার, কারণ, বৃক্ষরা কার্বন ডাইঅক্সাইড নামের গ্রিনহাউস গ্যাস শুষে নিয়ে বায়ু
দূষণ কমায়। বিনিময়ে তারা
আমাদের দেয় অমূল্য প্রাণবায়ু— অক্সিজেন। বৃক্ষরোপণ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সবুজ পাতার রাশি নিয়ে বৃক্ষরা পরিবেশকে ছায়াস্নিগ্ধ করে।
মাটির ক্ষয় রোধে ও জলবায়ুর ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে। পৃথিবীতে প্রাণবৈচিত্র
সুরক্ষিত রাখতেও বৃক্ষরোপণ ছাড়া গতি নেই।
এরপর বৃক্ষরোপণের অর্থনৈতিক গুরুত্ব তো আছেই। আম, কাঁঠাল, নারকেল, খেজুর,
আপেল, পেয়ারা, ইত্যাদি
অসংখ্য ফলের গাছ থেকে আমরা পাই পুষ্টিকর খাদ্যের জোগান। বৃক্ষরোপণের আরেকটা
উদ্দেশ্য হতে পারে আর্থিক গুরুত্ব সম্পন্ন নানান উপাদান সংগ্রহ করা। যেমন,—
- তন্তু,
- ভোজ্য ও অভোজ্য তেল,
- রেজিন,
- সুগন্ধী,
- জ্বালানি, ইত্যাদি।
তবে মানবকল্যাণে বৃক্ষরোপণের সুফলকে
শুধুমাত্র অর্থনীতির মাপকাঠিতে বিচার করা একেবারেই ঠিক নয়।
বৃক্ষরোপণের বিশেষ তাৎপর্য
পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব
এতোদিনে আমরা সবাই কমবেশি জেনে গেছি। তবে একটা ব্যাপার আমাদের জানা ছিল না। সেটা
হলো, পৃথিবীর পরিবেশ বাঁচাতে
আরো কতো বৃক্ষরোপণ দরকার। সম্প্রতি এই প্রশ্নটার উত্তর দিয়েছেন সুইজারল্যান্ডের
ইটিএইচ জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থমাস ক্রওথারের নেতৃত্বে একদল গবেষক। বৃক্ষরোপণের বিশেষ তাৎপর্য তারা তুলে ধরেছেন।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গত কয়েক শতকের লাগামছাড়া বৃক্ষহত্যার পরেও
পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন বা ৩ লক্ষ কোটি বৃক্ষ টিকে আছে। তবে গাছের এই
সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় বেশ কম। তার ওপর নানা অজুহাতে বৃক্ষনিধন আজও চলছে। এই
গবেষকদের মতে, নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধ করার
পাশাপাশি এখনই আমাদের বিপুল সংখ্যায় বৃক্ষরোপণ শুরু করা দরকার। কারণ একমাত্র এই পথেই বায়ুমন্ডলের কার্বন দূষণ ও
বিশ্ব উষ্ণায়নে রাশ টানা সম্ভব। এজন্য সারা বিশ্বে আরো কতো বৃক্ষরোপণ দরকার তার
নির্দিষ্ট ধারণাও তারা দিয়েছেন। তারা হিসেব কষে দেখিয়েছেন, পরিবেশ
রক্ষায় বিশ্ববাসীকে আরো অন্তত ১.২ ট্রিলিয়ন বৃক্ষ রোপণ করতে হবে। ১.২ ট্রিলিয়ন
মানে ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি।
বিশ্ব জুড়ে ব্যাপক বৃক্ষরোপণের জন্য জমির অভাব হবে না।
কারণ কৃষিক্ষেত্র ও বসবাসের এলাকা বাদ দিয়েও এর জন্য সারা পৃথিবীতে ১.৭ বিলিয়ন
হেক্টর জমি বের করা সম্ভব। এটা মোট ভূভাগের প্রায় ১১ শতাংশ। |
এই গবেষকরা বলছেন, পৃথিবীতে এভাবে বিপুল সংখ্যায় বৃক্ষরোপণ
করতে পারলে লাভ অনেক। এর দ্বারা বায়ুমন্ডলে জমে ওঠা কার্বন ডাইঅক্সাইডের দুই
তৃতীয়াংশই দূর হবে। ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ কেটে যাবে। এছাড়া
বৃক্ষরোপণের অন্যান্য লাভ তো আছেই। তারা একটা কথা জোর দিয়ে বলেছেন। ব্যাপক বৃক্ষরোপণই এযুগে সমস্ত পরিবেশগত সংকটের সবচেয়ে সস্তা অথচ
কার্যকর সমাধান। তাই বনায়ন ও বন সংরক্ষণের মতো বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবার জন্য
তারা সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বৃক্ষরোপণে আমাদের
ব্যর্থতা
বিজ্ঞানীরা বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব সম্পর্কে
এতো কিছু তুলে ধরার পরেও কি আমাদের চেতনা আসবে? আজ পর্যন্ত বৃক্ষরোপণের বদলে
বৃক্ষনিধনের প্রতিই যেনো আমাদের ঝোঁক বেশি। কোথায়
বাড়ি তৈরি করতে হবে, গাছ কাটো। কোথায় রাস্তা চওড়া করতে হবে
বা রেল লাইন পাততে হবে, গাছ কাটো। কোথায়
কারখানা-খনি-বাঁধ-বিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করতে হবে, গাছ কাটো। আবার হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলার পরে ক্ষতিপূরক বৃক্ষরোপণেও
আমরা অনেকসময়ই গুরুত্ব দিই না।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে
পরমোপকারী বৃক্ষবন্ধুরা ভেঙে পড়লে, তাদের বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টাই বা কজন করি? বরং আহত, ক্ষতবিক্ষত গাছেদের তাড়াতাড়ি কেটে সরিয়ে ফেলতে পারলেই যেনো সকলে খুশি।
বৃক্ষরোপণে উৎসাহী ব্যতিক্রমী মানুষ যে একেবারে নেই তা নয়। তবে সাধরণ ভাবে আমাদের বৃক্ষরোপণের বিপ্লব আজও স্রেফ মৌখিক আলোচনা, ফেসবুক পোস্ট আর কেতাবি চর্চার মধ্যেই সীমিত।
বৃক্ষরোপণ হোক সকলের
দায়িত্ব
বিজ্ঞানীদের হিসেব মতো ১.২ ট্রিলিয়ন
বৃক্ষরোপণ কি আদৌ বাস্তবসম্মত? যাওয়ার আগে একটা ছোট্টো অংক কষে দেখেই নেওয়া যাক। বর্তমানে পৃথিবীর মোট
জনসংখ্যা প্রায় ৮ বিলিয়ন, অর্থাৎ, ৮০০
কোটি। ১.২ ট্রিলিয়নকে ৮ বিলিয়ন দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল হয় ১৫০। অর্থাৎ, আমরা, পৃথিবীর সব মানুষ যদি প্রয়াসী হই, তবে মাথাপিছু বৃক্ষরোপণ করতে হবে গড়ে ১৫০টা। কাজটা হয়তো খুব সহজ নয়। তবে সবাই মিলে চেষ্টা করলে অসম্ভবও নয়।
আসলে বৃক্ষরোপণে সবার আগে
চাই আন্তরিকতা। ‘গাছ লাগান, পরিবেশ
বাঁচান’ বললে বৃক্ষরোপণের দায়টা কি সুকৌশলে অন্যের কাঁধে ঠেলে দেওয়া হয় না?
এটা আর যাই হোক আন্তরিকতার পরিচয় নয়। সত্যিসত্যি পৃথিবীকে বাঁচাতে
চাইলে আমাদের মনের কথা হোক: ‘আসুন, গাছ লাগাই, পরিবেশ বাঁচাই’। [কৃতজ্ঞতা স্বীকার: The Guardian]
গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান । গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান । গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান । গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান । গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান । গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান ।
গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান । গাছ
লাগান পরিবেশ বাঁচান ।
গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান ।
গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান । গাছ
লাগান পরিবেশ বাঁচান ।
গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান ।
গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান । গাছ
লাগান পরিবেশ বাঁচান ।
গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান ।