Loading..

শিক্ষায় অগ্রযাত্রা

৩০ জুলাই, ২০২১ ০৪:০৮ অপরাহ্ণ

শিক্ষার গুণগত মান নির্ভর করে আদর্শবান শিক্ষকের ওপর

সময়টাই এখন অনিশ্চয়তার মেঘে ঢাকা। ব্যক্তিজীবন থেকে রাষ্ট্র পেরিয়ে বিশ্বচরাচর-সর্বত্রই এ অসহায়ত্ব আত্মবিশ্বাসী সভ্যতাকে বিচলিত করে তুলেছে। কিছুদিন আগেও আমরা ভাবতে শুরু করেছিলাম, ভ্যাকসিনেই সমাধান। এখন দেখছি সেটাই শেষ কথা নয়; বরং ভ্যাকসিনও এখন দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে। অন্যদিকে করোনা ক্রমাগত তার চরিত্র বদলে আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে। এখন শিশু থেকে প্রৌঢ়; সবার প্রশ্ন-এ রাহু থেকে মুক্তি মিলবে কবে?

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের ভাষায়-কবে আমরা আবার স্বাধীন হব? শিশুর শিক্ষা, শ্রমিকের মজুরি, যুবকের কর্র্মসংস্থান; সর্বোপরি জীবনের গ্যারান্টি-সবখানেই শঙ্কা। সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় পড়েছে দিনমজুর, ক্ষুদ্র দোকানি বা রাষ্ট্রপোষিত নন, এমন কর্মী। তবে সরকারও স্বস্তিতে নেই। বর্ধনশীল দারিদ্র্য, আয়বৈষম্য, দুর্নীতি বা নিয়ম না মানা মানুষের নাছোড়বান্দা প্রবৃত্তি। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। সিদ্ধান্তে অস্থিরতা নজর কাড়ছে, যা হয়তো এ আপৎকালীন বিশ্বের অভিন্ন চেহারা। মানুষের জীবন বাঁচানোই এ মুহূর্তে রাষ্ট্রের বড় দায়, মহৎ সংকল্প। আর দীর্ঘমেয়াদে যে বিষয়গুলো নেতৃত্বকে ভাবাচ্ছে তা হলো, শিক্ষাকে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরানো। বিষয়টি দেশের নানা অর্জন টেকসই করা বা এগিয়ে নেওয়ার জন্য ভীষণ জরুরি। সোমবার (১২ ‍জুলাই) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, তর্ক চলছে নিরন্তর। স্কুল-কলেজ খোলা, না খোলা নিয়ে। এরপর থাকছে দেশের বৃহৎ দুটি পাবলিক পরীক্ষার অনুষ্ঠান। এসএসসি ও এইচএসসি। সব মিলিয়ে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ লাখের কাছাকাছি। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এর সঙ্গে যুক্ত থাকবে বিপুল এক জনগোষ্ঠী। গেল বছর এইচএসসি পরীক্ষা হয়নি। তাদের কোর্স অবশ্য নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়েছিল। অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাগুলোও সঠিক সময়ে সম্পন্ন হয়েছিল। তবে চূড়ান্ত মূল্যায়ন করতে হয়েছিল পূর্ববর্তী গ্রেড বিচার করে। সিদ্ধান্তের সমালোচনা হয়েছিল নির্মমভাবে। অটোপাশ বলে কটাক্ষ করা হয়েছে। নির্দোষ শিক্ষার্থীদের কার্যত কাঠগড়ায় তোলা হয়েছিল। নিশ্চয়ই তাদের প্রতি সুবিচার হয়নি। এখানে তাদের কিছু করার ছিল না। সরকারই বা কী করতে পারত? ঝুঁকি নিয়ে সশরীরে পরীক্ষার আয়োজন? সেক্ষেত্রে কি সমালোচনা এড়ানো যেত? একদমই না। আজ যেমন ভ্যাকসিন নিয়ে তারাই মাঠে নেমেছেন, যারা ভ্যাকসিন না নিতে বেপরোয়া অপপ্রচার চালিয়েছিলেন। থাক সে কথা, পরীক্ষা নিয়ে ভাবা যাক। 

এ কথা সত্যি- হামারি শিক্ষার পাট তছনছ করেছে। বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থীকে নিয়ে পরীক্ষা-তা অনলাইন বা অফলাইন যাই হোক, এককথায় দুরূহ এক যুদ্ধযাত্রা। বারবার তারিখ ঘোষণা আর বাতিল না করে, গঠনমূলকভাবে বিকল্প খোঁজাই ভালো। কোন পথে পরীক্ষা হলে শতাব্দীর এ ক্রান্তিকালে ছাত্রছাত্রীরা আবার ঢুকে পড়বে শিক্ষাবৃত্তে অনায়াসে, তর্কহীন ছন্দে।

পরীক্ষা বা মূল্যায়নের প্রশ্ন তখনই প্রাসঙ্গিক হয়, যখন পাঠদান প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন থাকে। আমরা বলতেই পারি-শিক্ষার্থীরা এই ১৬ মাসে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। সমাজে বৈষম্য এখন বহুল আলোচিত বিষয়। বৈষম্যের স্বরূপও বিচিত্র। গ্রাম-শহর, ধনী-দরিদ্র, ক্ষমতাশালী-ক্ষমতাহীন; নানা প্যারামিটারে এ অসাম্য সমাজের গভীরে বাস করে। করোনা এ ক্ষতচিহ্নগুলোকে আলোর সামনে এনে দিয়েছে। সামাজিক এ বিভাজনে নতুন মাত্রা দিয়েছে ‘ডিজিটাল ডিভাইড’ বা প্রযুক্তিগত বৈষম্য। সমাজের একটা বড় অংশ সুবিধার আলোকবৃত্ত থেকে ছিটকে পড়েছে। ঘাতক নিঃসন্দেহে দারিদ্র্য আর সুযোগের অসাম্য। তবে এর জন্য সামর্থ্যরে অভাবই একমাত্র দায়ী নয়।

অনলাইন শিক্ষাসেবার আদান-প্রদানেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভ্যালু সিস্টেম। অভিভাবকও সেভাবে সন্তানকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেননি। হয়তো তিনি নিজেও অনুপ্রাণিত নন। অন্যদিকে এমন শিক্ষককেও দেখেছি, যিনি কোভিডকালে একটি ক্লাসও নেননি; অথচ তার নিজের সন্তানকে যত্ন করে টিউশন দিয়েছেন। অফলাইন, অনলাইন সব। নৈতিকতার এ দ্বন্দ্ব ও সংকট অনলাইন শিক্ষাকে জনপ্রিয় করার পথে অন্তরায়। একথা সত্যি, নতুন যে কোনো পদ্ধতি বা প্রযুক্তি সমাজ মনে ঠাঁই করে নিতে সময় নেয়। গ্রাম-শহরভেদে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ কিংবা ইন্টারনেটের দুর্বল গতি অথবা মোটিভেশনের অভাব ইত্যাদি যে কারণেই হোক, অনলাইন পড়াশোনা এখনো আমাদের সমাজে সাধারণভাবে জনপ্রিয় হতে পারেনি। ফলে অনলাইন পরীক্ষায় স্বচ্ছতার বিষয়টি এখনো মীমাংসিত নয়। জনমনে এক ধরনের সংশয় ও বিভ্রান্তির ছায়া থেকে গেছে।

আর যদি ডিভাইস সংখ্যা বৃদ্ধি করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হয়, তখন একদিকে পরীক্ষা ব্যয় বাড়বে; অন্যদিকে পদ্ধতিগত জটিলতাও বেড়ে যাবে। যদিও একথা ঠিক, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মধ্য দিয়ে অনলাইন পাঠ ও পরীক্ষা দুটোই সুষ্ঠুভাবে সম্ভব হয়েছে, যা আমাদের মতো দেশের বৃহত্তর পরিসরে এখনো কষ্টকল্পনা। তবে অনাগত ভবিষ্যতে যে এ প্রযুক্তি এ দেশেই নির্বিকল্প অবলম্বন হয়ে উঠবে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এখনো অবকাঠামো বা নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে অভিযোজনের প্রস্তুতি-কোনো মাপকাঠিতেই আমরা সম্পূর্ণ অনলাইন মাধ্যমে পাবলিক পরীক্ষার জন্য তৈরি নই, এ বিষয়ে হয়তো কেউ দ্বিমত পোষণ করবেন না।

এবার আসি অ্যাসাইনমেন্ট প্রসঙ্গে। নিঃসন্দেহে এ প্রক্রিয়ার সংশ্লেষ করোনাকালেরই সৃষ্টি। অন্তত এ বিশাল কলেবরে। আর এ উপলক্ষ্যকে ধারণ করে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান অভিমুখে ছাত্রছাত্রীদের যে ঢল নেমেছিল, তা অভূতপূর্ব। অনেক ক্ষেত্রে শতভাগ শিক্ষার্থী হাজির হয়েছে। অবসাদের বাঁধন ভাঙার আনন্দ কিংবা সতীর্থদের সঙ্গলাভের নিষ্পাপ মত্ততা অথবা শিক্ষার অপ্রচলিত বাহনকে সাদরে সম্ভাষণ জানানো-কারণ যাই হোক, অ্যাসাইনমেন্ট ঘিরে ছাত্র-অভিভাবকের মাঝে যে চাঞ্চল্য ও উচ্ছ্বাস লক্ষ করা গেছে, তা খুবই আশাব্যঞ্জক।

সোজা কথায়, শিক্ষক যদি সততার পরিচয় দেন, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে অ্যাসাইনমেন্ট লেনদেন করেন, প্রতি দফায় দুর্বলতা চিহ্নিত করে ফিডব্যাক আদায় করেন, বলা যায়-ছাত্রছাত্রীকে ব্যস্ত রাখতে এর চেয়ে ভালো বিকল্প আর হয় না। তথ্য ঘেঁটে যুক্তি সাজানোর মাঝেই নিহিত থাকে মৌলিকত্ব, সৃজনশীলতা। ছকে বাঁধা স্মৃতিনির্ভর-উত্তর চিন্তার স্রোতকে বেগবান করে না, আবদ্ধ করে রাখে। এখানেই এসে যায় নৈতিকতা ও শ্রমের প্রশ্ন। ইউটিউব থেকে কনটেন্ট নিয়ে কপি-পেস্টিং প্রশ্রয় পেলে লক্ষ্য ফসকে যাবে। শিক্ষক-অভিভাবক সতর্ক থাকলে সেটা সম্ভব নয়।

বারবার যে কথাটা বলা হয়েছে, তা আরও পরিষ্কার করে বলা দরকার। শিক্ষাসেবার গুণগত মান বা সাফল্য নির্ভর করে মেধাবী ও আদর্শবান শিক্ষকের ওপর। এ জায়গায় আমাদের দুর্বলতা আছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো দেশের শিক্ষাও মূল্যবোধের অবক্ষয়ে আক্রান্ত। শিক্ষাক্ষেত্রে কর্মরত জনবলকে প্রশিক্ষিত ও উদ্বুদ্ধ না করলে এমন আধুনিক ব্যবস্থার সুফল সুবিধাভোগী পাবে না। আর সে কারণে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে ঝুঁকি থেকে যাবে।

এরপর অবশিষ্ট আছে আমাদের শেষ ভরসা; অর্থাৎ সশরীর পরীক্ষা, যা এ মহামারিকালে সহজসাধ্য নয়। সুতরাং, প্রথমেই দরকার হবে ভ্যাকসিনেশন। আমাদের মতো দেশে তা এখন আর অলীক কল্পনা নয়। এ দেশের আর্থিক সক্ষমতা, সামাজিক-মানবিক শর্তে অর্জিত উন্নয়ন; সর্বোপরি জাতীয় নেতৃত্বের বিশ্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা এ ভ্যাকসিন কূটনীতিকে সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবে বলে মনে হয়।

এ কথা অনস্বীকার্য, পরীক্ষার হলে বা কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা কঠিন নয়। কিন্তু কেন্দ্রের বাইরে সে কাজ যথেষ্ট কঠিন। তবে চলমান লকডাউন পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবে, এ কথা বিশ্বাস করা যায়। কারণ, বিজ্ঞান তাই বলছে। কিন্তু ঈদের সময় অবস্থার কিছুটা অবনতি ঘটতে পারে। দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবার কাঠামো ভঙ্গুর। যথেষ্ট প্রস্তুতির কথা শোনা গেলেও খুলনায় যে নাজুক অবস্থার সাক্ষী আমরা হলাম, তা আমাদের আতঙ্কিত করে। অনেক আওয়াজকে ফাঁকা বলেই মনে হয়েছে। তবে এ পরিস্থিতিতেও ভ্যাকসিন ও মাস্ক নিশ্চিত করতে পারলেই ছাত্রছাত্রীকে ক্লাসরুমে নেওয়া সম্ভব হবে।

যদি ধরে নিই, অন্যান্য পরিস্থিতির লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছে; কিছুদিন ক্লাসের পর সশরীর পরীক্ষায় বাধা থাকবে না, তাহলে কেমন হতে পারে সে পরীক্ষা? অবশ্যই তার আকার ছোট হবে। বিষয়, নম্বর ও সময় যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। মূল্যায়নের তাত্ত্বিক নীতি এক রেখে সে পরীক্ষা দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচদিনের মধ্যে সম্পন্ন হতে পারে। লক্ষ্য থাকবে, শিক্ষার্থীর লব্ধজ্ঞান যাচাই; অর্জিত দক্ষতার মূল্যায়ন। তাই প্রধান প্রধান বিষয়গুলো প্রাধান্য পেতে পারে। সময় ও মূল্যায়নের প্রকৃতি অনুযায়ী সিকিউ এবং এমসিকিউ প্রশ্ন থাকতে পারে। উত্তরপত্রের মূল্যায়নেও প্রশ্নপত্রের প্যাটার্ন নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। পরীক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধি করে প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, গতিশীল ও মানসম্পন্ন করা যায়। উত্তরপত্র গ্রহণ বা নম্বরফর্দ প্রেরণ-সবটাই ডাক ও অনলাইন ব্যবস্থাপনায় সম্পন্ন করা যায়। প্রয়োজনমাফিক ভেন্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে নেওয়া যাবে। পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ পরিবহণ ব্যবস্থা গ্রহণ করাও আজকের বাস্তবতায় অসাধ্য কোনো কাজ নয়।

তবে ক্লাসরুমে পরীক্ষা নেওয়ার আগে অবশ্যই প্রতিষ্ঠান অন্তত ২ মাস এক নাগাড়ে খুলে রেখে ক্লাস নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে নির্ধারিত সিলেবাস শিক্ষার্থীর ধারণা জগতে প্রবেশ করবে। দীর্ঘ বিরতির পর নতুন ধরনের অভিযোজন প্রয়োজন পড়বে। শিশুর বিচ্ছিন্ন সত্তা সামাজিক সমগ্রতার মধ্যে সংযুক্ত হতে শুরু করবে। করোনা শুধু শরীরকে নয়, মনোজগৎকেও বিবর্ণ করেছে। শিক্ষার্থীর বড় একটা অংশ ঝরে পড়েছে। কারও ভাগ্যে জুটেছে বাল্যবিবাহ। আর শিশুর বয়ঃসন্ধিমননকে এ কোভিডকাল কীভাবে বিধ্বস্ত করল, তার খোঁজ কজনই বা রাখতে পেরেছে?

তবে করোনাকাল কিছু শাশ্বতবোধকে নতুনভাবে জাগিয়ে তুলেছে। করোনাকালে একটা মিথ আমাদের সাময়িক স্বস্তি দিয়েছিল। মনে হচ্ছিল-কোভিড-১৯ ধনী-দরিদ্রের বেড়াজাল ছিন্নভিন্ন করেছে। বৈষম্যের প্রাচীর দীর্ণ করেছে। কিন্তু কার্যত দেখা গেল-ধনী ও উন্নত দেশগুলো তাদের প্রযুক্তি ও আর্থিক সক্ষমতাকে পুঁজি করে আবারও নিজেদের সামলে নিয়েছে; যা আমরা পারিনি। কোভিডকালের শিক্ষা হলো-আমাদের শিক্ষা কারিকুলামে বিজ্ঞানের নির্দিষ্ট জায়গা অক্ষুণ্ন থাকবে। সেখানে আমরা যেন আপস না করি। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও মানসম্পন্ন শিক্ষা সভ্যতার যে কোনো সংকটে মানবজাতির পাশে দাঁড়ায়, জীবনকে এগিয়ে নিতে সাহস জোগায়, ভরসা দেয়; যা অশিক্ষা বা কূপমণ্ডূকতা পারে না।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি