Loading..

প্রকাশনা

১৮ আগস্ট, ২০২১ ০৭:৫২ অপরাহ্ণ

মহররমের ৯-১০ তারিখ রোজা রাখার ফজিলত
মহররমের ৯-১০ তারিখ রোজা রাখার ফজিলত
মো. নূরুজ্জামান
হিজরি বর্ষের প্রথম মাস মহররম। মানবেতিহাসের নানা তাৎপর্যময় ঘটনার সাক্ষী এই মাস। ইসলামপূর্ব আরবের অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজেও মহররম মাসের বিশেষ মর্যাদা ছিল। পবিত্র কোরআনে ঘোষিত পবিত্র চার মাসের অন্যতম মহররম। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মাসগুলোর গণনা আল্লাহর কাছে বারো মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দ্বিন। সুতরাং তোমরা এ মাসগুলোতে নিজদের ওপর কোনো জুলুম কোরো না।’
(সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩৬)
ইতিহাসে_আশুরার_রোজা
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (সা.) মদিনায় এসে দেখতে পেলেন ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা পালন করছে। নবী (সা.) বললেন, এটি কী? তারা বলল, এটি একটি ভালো দিন। এ দিনে আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাঈলকে তাদের শত্রুর কবল থেকে বাঁচিয়েছেন। তাই মুসা (আ.) রোজা পালন করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, মুসা (আ.)-কে অনুসরণের ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে বেশি হকদার। অতঃপর তিনি রোজা রেখেছেন এবং সাওম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৬৫)
মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় এসেছে ‘এটি সেই দিন যেদিন নুহ (আ.)-এর নৌকা জুদি পর্বতে স্থির হয়েছিল, তাই নুহ (আ.) আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ের জন্য সেদিন রোজা রেখেছিলেন।’ (হাদিস : ৮৭১৭)
আশুরার রোজার প্রচলন ইসলাম আগমনের আগেও জাহেলি সমাজে প্রচলিত ছিল। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, ‘জাহেলি যুগের লোকেরা আশুরার রোজ সাওম পালন করত।’ (তুহফাতুল আশরাফ, হাদিস : ১২৭৩৬)
আশুরার_রোজার_মর্যাদা
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমি নবী (সা.)-কে রোজা রাখার এত বেশি আগ্রহী হতে দেখিনি, যত দেখেছি এ আশুরার দিন এবং এ মাস (রমজান) মাসের রোজার প্রতি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৬৭)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আশুরার দিনের সাওমের ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দেবেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৯৭৬)
আশুরার_রোজা_কিভাবে_রাখব
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আশুরার রোজা রাখলেন এবং (অন্যদেরকে) সাওম রাখার নির্দেশ দিলেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এটি তো এমন দিন, যাকে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা বড় জ্ঞান করে, সম্মান জানায়। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আগামী বছর এই দিন এলে আমরা নবম দিনও রোজা রাখব ইনশাআল্লাহ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৯৪৬)
ইমাম শাফি, ইমাম আহমাদ, ইমাম ইসহাক প্রমুখ বলেছেন, আশুরার রোজার ক্ষেত্রে দশম ও নবম উভয় দিনের রোজাই মুস্তাহাব। কেননা নবী (সা.) ১০ তারিখ রোজা রেখেছেন আর ৯ তারিখ রোজা রাখার নিয়ত করেছেন।
হিজরি সনের মহররম মাসের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। এ দিন রোজা রাখলে বিগত বছরের গোনাহের কাফফারা হয়ে যায়। কিন্তু মহররমের ৯ তারিখ কেন রোজা রাখতে হয়? আর আশুরায় রোজা রাখা সম্পর্কে বিশ্বনবির নির্দেশনা কী ছিল?
মহররম মাসের রোজা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আশুরার রোজা রাখার মাধ্যমে আমি এ আশা রাখি যে, আল্লাহ তাআলা এ রোজাকে আগের বছরের গোনাহের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করবেন।’ (মুসলিম)
মহররমের_৯_তারিখ_রোজা_রাখার_কারণ
মহররম মাসে আশুরা উপলক্ষ্যে দুদিন রোজা রাখার ব্যাপারে হাদিসের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কেননা এক দিন রোজা রাখলে তা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের সঙ্গে সামঞ্জস্য হয়ে যায়। হাদিসে এসেছে-
- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি যদি পরের বছর বেঁচে থাকি তবে আমি (মহররমের) নবম দিনও রোজা রাখব।’ (মুসনাদে আহমাদ)
- হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার রোজা রাখেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে রোজা রাখতে বলেন। তখন তারা (সাহাবায়ে কেরাম) বলল- হে আল্লাহর রাসুল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দিনটিতে ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরাও রোজা পালন করে।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ চাইলে আমরা পরের বছর নবমীর দিন (মহররমের ৯ তারিখও) রোজা পালন করব।’ কিন্তু পরের বছর বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকাল করেন।’ (মুসলিম)
এ কারণেই মুসলিম উম্মাহর বিখ্যাত ইসলামিক স্কলারদের অভিমত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহররমের ১০ তারিখ রোজা রেখেছেন আর পরের বছর ৯ তারিখ রোজা রাখার নিয়ত করেছিলেন।
সুতরাং মহররমের ৯-১০ রোজা রাখা উত্তম। আর এতে রয়েছে অনেক কল্যাণ ও বরকত। মহররমের ১০ তারিখের পাশাপাশি ৯ তারিখও রোজা ভালো। এ ছাড়াও মহররম মাস জুড়ে রোজা পালন ও ইবাদত-বন্দেগিতে রয়েছে অনেক সাওয়াব ও কল্যাণ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মহররমের ৯-১০ তারিখ মোতাবেক ১৯-২০ আগস্ট রোজা পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
মাওলানা মো. নূরুজ্জামান
সিনিয়র শিক্ষক
খায়রুল্লাহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
গফরগাঁও, ময়মনসিংহ

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি