Loading..

ম্যাগাজিন

১৮ জুলাই, ২০১৫ ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শিশুদের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী উপহার দিতে এই সভ্যতার ব্যর্থতা প্রমাণিত

পৃথিবীর মানুষ আজ বিজ্ঞান ও যান্ত্রিকতায় যতটা অগ্রগতি লাভ করেছে, বিপরীতে তার আত্মিক অধঃপতনও ততটাই ঘটেছে। যান্ত্রিক প্রযুক্তিনির্ভর এই বিকাশকে আর যাই বলা যাক ‘সভ্যতা’ বলা সমীচীন হবে না। একে যে সভ্যতা বলা যায় না তার এক প্রত্যক্ষ প্রমাণ হচ্ছে, ইউনিসেফ প্রকাশিত সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদন। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বে সহিংসতার কারণে প্রতি পাঁচ মিনিটে একজন শিশু মারা যাচ্ছে। মানবশিশু যেখানে নিরাপদ নয়, তার জীবন ধারণ যেখানে অনিশ্চিত সেই বিশ্বব্যবস্থাকে সভ্যতা বলতে গেলে সংশয় সৃষ্টি হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক দাতব্য সংস্থা ইউনিসেফ প্রকাশিত এই প্রতিবেদন অনুযায়ী মানুষে মানুষে সংঘাতের কারণে প্রতিদিন বিশ্বে অন্তত ২৮৮টি শিশু মারা যাচ্ছে। সংস্থাটি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হলে সামনের বছর এই সংখ্যা ৩৪৫ হতে পারে। তারা আরো জানিয়েছে পৃথিবীর ১০ লাখেরও বেশি শিশু তাদের সমাজ, বিদ্যালয় এমনকি নিজ গৃহে অবস্থানের সময়ও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।
আজ বিশ্বে শিশুদের প্রকৃত অবস্থা সম্ভবত ইউনিসেফের এই প্রতিবেদনের চেয়েও খারাপ। সাম্রাজ্যবাদী আর দাঙ্গাবাজ জাতিগুলো পৃথিবীতে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রেখেছে তার সবচেয়ে বড় শিকার এই শিশুরা। নতুন দশকের শুরু থেকে প্রায় ১০ বছরের যুদ্ধ ও অবরোধে এক ইরাকেই কত লক্ষ লক্ষ শিশু প্রাণ হারিয়েছে তার প্রকৃত সংখ্যা না প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ, না অন্য কেউ। সম্প্রতি ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের কয়েক মাসব্যাপী ভয়াবহ হামলার বলি হয়েছে যে অসংখ্য নিরপরাধ শিশু, তার সঠিক পরিসংখ্যানও তারা প্রকাশ করবে না। তেমনিভাবে আফগানিস্তান, সিরিয়া, মিশর, লিবিয়ার মত দেশগুলোতে দখলবাজদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ও পরোক্ষ মদদে কত মানবশিশু এই ‘সভ্যতা’র ভয়াবহতার শিকার হয়েছে তারও কোনো সঠিক তথ্য আমরা পাই নি। তারপরও আমরা নিশ্চিত, এই হত্যাযজ্ঞে মানবশিশু আর সাপের বাচ্চার মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হয় না। তাদের কাছে এই লাখ লাখ নারী, শিশু, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা এক কথায় বেসামরিক মানুষের মৃত্যু কেবলই আনুষঙ্গিক ক্ষয়-ক্ষতি। ‘নিজেদের অস্তিত্ব’ রক্ষায় তারা এতটুকু ‘ক্ষয়-ক্ষতি’ ঘটাতে মাঝে মধ্যেই ‘বাধ্য’ হয়।
এটা হচ্ছে একটি দিক যেখানে যুদ্ধপ্রেমী, দখলবাজরা তাদের স্বার্থ উদ্ধারে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়। আরেকটি দিক রয়েছে, যার ভয়াবহতা আরো বেশি, তবে তার প্রক্রিয়াটি প্রচ্ছন্ন বলে মানুষ তা উপলব্ধি করতে পারে না। এই আত্মাহীন প্রযুক্তিগত ‘সভ্যতা’র ধারকেরা আজ সারা পৃথিবীতে চাপিয়ে দিয়েছে তাদের তৈরি স্রষ্টাহীন জীবনব্যবস্থা ও ধর্মহীন নগ্নতায় পূর্ণ শিক্ষা ও সংস্কৃতি। এই দ্বৈত আগ্রাসনে তারা প্রতিটি মানুষের আত্মাকে করেছে ধর্মহীন, মানবতাহীন, চরিত্রহীন। তাই শিশুরা বর্তমানে নিজ সমাজেই অনিরাপদ, আপন গৃহেই লাঞ্ছিত।
আমাদের জন্য, আমাদের শিশুদের জন্য পৃথিবীকে একটি মৃত্যু উপত্যকা বানিয়ে এই ‘সভ্যতা’র ধারকেরা আজ এই পৃথিবী ছেড়ে পালানোর জন্য হন্যে হয়ে ওঠেছে। তারা পাগলের মতো চেষ্টা করছে কিভাবে পৃথিবীর বাইরে কোথাও আবাসস্থল গড়ে তোলা যায়, তা খুঁজে বের করার জন্য। দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, আমলারা যেমন নিজেদের দেশ ছেড়ে সময়মতো পালানোর জন্য বিদেশের মাটিতে বাড়ি বানিয়ে রাখে, সেখানে ব্যাংকে অর্থ সঞ্চয় করে রাখে, এদের অবস্থাও তাই। এরা এই পৃথিবীকে ভালোবাসে না, এই পৃথিবীতে বিচরণকারী আদম সন্তানদেরকেও না। তবে এরা ধরা দেয় না। তাদের চরিত্র বোঝা খুব কঠিন।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি