Loading..

ম্যাগাজিন

১৮ অক্টোবর, ২০২১ ০৪:৩১ অপরাহ্ণ

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা.) এর চরিত্র মাধুর্য

 

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা.) এর চরিত্র মাধুর্য

খোলাফায়ে রাশেদীনের দ্বিতীয়  খলিফা হযরত ওমর (রাঃ )। তিনি কুরাইশ বংশের বিখ্যাত আদী গোত্রে ৫৮৩ খিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।  হযরত ওমর (রাঃ ) এর ডাক নাম ‘হাফস’  ‘ফারুক’ তাঁর গুণবাচক নাম। উমর (রা.) এর পিতা খাত্তাব কুরাইশ বংশের একজন বিখ্যাত লোক ছিলেন। উমর (রা.) এর মাতার নাম হানতামা। তিনি ছিলেন হিসাম ইবনে মুগিরার কন্যা। মুগিরা একজন নামকরা সেনাপতি ছিলেন।

হযরত উমর (রা.) শিক্ষা-দীক্ষায় বেশ অগ্রসর ছিলেন। তিনি কবিতা লেখায় পারদর্শী ছিলেন। কুস্তিবিদ্যায় তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। কুরআন ও হাদিসের জ্ঞানে হযরত উমর (রা.) এর ছিল অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল ।

ইসলাম গ্রহনের পর উমর (রা.) কাবার সামনে প্রকাশ্যে নামায আদায়ের ঘোষণা দিলেন। নবী (সা.) উমর (রা.) উপর খুশি হয়ে তাঁর উপাধি দিলেন, ‘ফারুক‘। এর অর্থ হল, সত্য ও মিথ্যার প্রভেদকারী

ইসলামের সেবা

যে উমর (রা।) ছিলেন ইসলাম ও মুসলমানদের চরম বিরোধী, তিনি মুসলমান হয়ে সম্পূর্ণ বদলে গেলেন। ইসলামের সেবায় তিনি তাঁর জীবনকে উৎসর্গ করে দিলেন। উমর (রা.) এর ইসলাম গ্রহণ মুসলমানদের শক্তিকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিল। তিনি সর্বস্ব দিয়ে ইসলামের সেবায় আত্মনিয়োগ করলেন। তিনি ইসলাম গ্রহণ করার পর প্রকাশ্যে দ্বীনের প্রচার করা সম্ভব হলো।

তিনি দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে ইসলামের বাণী ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হলেন। উমর (রা.) ইসলামী রাষ্ট্রের শাসন, বিচার ও অর্থ ব্যবস্থায় বহু যুগান্তকারী ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। তিনি ৫৩৯টি হাদিস বর্ণনা করে গেছেন।

উমর (রা) এর সুশাসন

হযরত উমর (রা.) ছিলেন এক অনন্য শাসক। রাসূল (সা.) এর পর দুনিয়ার ইতিহাসে তাঁর সুশাসনের তুলনা হয় না। ঐতিহাসিক ইমামুদ্দিন বলেন, উমর (রা) শুধু বিজেতা ছিলেন না। তিনি ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক এবং সফলকামী জাতীয় নেতাদের অন্যতম। তিনি সুশাসন প্রতিষার জন্য রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রে সংস্কার সাধন করেন। তাঁর আমলে প্রথম জেলখানা স্থাপিত হয়।

·        শাসনকার্যে সুচারুভাবে চালানোর জন্য তিনি তাঁর সাম্রাজ্যকে ১৪টি ভাগে ভাল করেন।

·        তিনি প্রথম গোয়েন্দা বিভাগ চালু করেন।

·        আদমশুমারি তাঁর আমলে চালু হয়।

·        তিনি চাকুরিতে পেনশন, প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতা, চেকব্যবস্থা, ভূমি জরিপ ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন।

তাঁর আমলে বিচারের ক্ষেত্রে কোন শৈথল্য ছিল না। এ ব্যাপারে তিনি নিজ পুত্র ফাহামকেও ক্ষমা করেননি। তিনি তাকে কঠোর শাস্তি দিয়েছিলেন। তিনি গরীব দুঃখী প্রজাদের অবস্থা দেখার জন্য রাতে একাকী মহল্লায় মহল্লায় ঘুরে বেড়াতেন।

অনাড়ম্বর জীবনযাপন

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হয়েও তিনি অত্যন্ত সহজ-সরল ও অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন। যে খলিফার ভয়ে পৃথিবীর রাজা-বাদশাগণ সবসময় কম্পমান থাকতেন, সেই খলিফা অত্যন্ত দীনহীন ও সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন। তিনি সাথে নিতেন না কোন দেহরক্ষী। রাজকোষাগার থেকে তাকে যে ভাতা দেওয়া হত, তাও ছিল একেবারে নগণ্য।

খাওয়া-দাওয়া করতেন একেবারে সামান্য, যা না খেলে বেঁচে থাকা অসম্ভব ছিল মানুষের পক্ষে। শুধুমাত্র খেজুর ও রুটি দিয়ে সম্পন্ন করতেন তার খাবার।

তার পোষাক ছিল না রাজাধিপতির উপযুক্ত। তালিযুক্ত পোষাক পরিধান করতেন। হযরত উমর (রা.) সম্পর্কে কথিত আছে, যে, পারস্য যোদ্ধা হরমুজ মদীনায় বন্দী থাকা অবস্থায় আগমন করে খলিফা উমর (রা.) কে মসজিদের মেঝেতে বসে থাকতে দেখে অবাক হন।

জেরুজালেমের খ্রিষ্টান মেয়রের আহবানে তিনি একবার সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি ও তাঁর ভৃত্য পালাবদল করে উটে আরোহণ করে জেরুজালেম পৌঁছান। উট যখন জেরুজালেম পৌঁছাল, তখন উটের পিঠে ছিল ভৃত্য আর খলিফা রশি ধরে হেঁটে আসছিলেন। তাঁর পরনে ছিল ছিন্নবস্ত্র, যা ছিল ধুলোয় মলিন। খলিফার এই পোশাক ও অবস্থা দেখে খ্রিষ্টান মেয়র ও অন্যান্য সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি এমন সরল-সহজ জীবনযাপন করতেন যে, প্রজাদের জন্য তিনি নিজ কাঁধে বহন করে খাবার পৌঁছে দিতেন। ধন-দৌলত ও ঐশ্বর্যের প্রতি তাঁর ছিল চরম অনীহা। এগুলোকে তিনি ধবংশের আলামত বলে মনে করতেন।

হযরত উমর (রা.) এর চরিত্র

খলিফা উমর (রা.) শুধু অনাড়ম্বর জীবনযাপনই করতেন না। তিনি ছিলেন পরম দয়ালু ও ন্যায়নিষ্ট। সকল স্মরণীয় গুণের সমাবেশ ঘটেছিল তাঁর চরিত্রে। ধর্মানুরাগ, কোমলতা, সংযম ও বিচক্ষণতায় তিনি ছিলেন বিশ্বনবী (সা.) এর প্রতিচ্ছবি।

তিনি মুসলমানদের একজন যোগ্য নেতা ছিলেন। তাঁর সুদক্ষ পরিচালনায় অর্ধসভ্য আরব জাতি অধঃপতনের হাত থেকে উদ্ধার ভাল করেছিল। তাঁর ন্যায়নিষ্ঠা ও নিরপক্ষ বিচারব্যবস্থা সমাজকে সুন্দর ও স্থিতিশীল করেছিল। তাঁর নিষ্কলুষ চরিত্র মাধুর্য তাঁকে একজন শ্রেষ্ঠ মানুষের আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।

মৃত্যুকালে তাঁ বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। হযরত উমার (রা.) তাঁ মহান চরিত্রগুণ, মানবসেবা, ইসলামের খেদমত এবং মুসলিম জাতি গঠনে অসাধারণ অবদানের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি