প্রধান শিক্ষক
০২ জানুয়ারি, ২০২২ ০৯:৫৪ অপরাহ্ণ
জসীম উদ্দীন এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম…; মোছাঃ মারুফা বেগম, প্রধান শিক্ষক, ডিমলা, নীলফামারী।
জসীম উদ্দীন এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম…
বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতির বাস্তব প্রতিচ্ছবি
কবিতার মাধ্যমে আরও জীবন্ত ও সাবলিলভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন বাংলা সাহিত্যের
’পল্লীকবি’ হিসেবে খ্যাত জসীম উদ্দীন । ফরিদপুর জেলার গোবিন্দপুর স্কুলের শিক্ষক
আনসার উদ্দিন মোল্লার ও আমিনা খাতুনের পাঁচ সন্তানের মধ্যে জসীম উদ্দীন ছিলেন
চতুর্থ । জসীম উদ্দীন তাঁর লেখনিতে পল্লির মাটি ও মানুষের অস্বিত্বকে একাকার করে
তুলে ধরেছেন । তিনি রবীন্দ্রযুগের কবি হয়েও তাঁর কাব্য সাহিত্যে স্বতন্ত্র
বৈশিষ্ট্য সার্থকভাবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ।
জসীম উদ্দীন এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম
·
বিশেষ্ট বাঙালি কবি
জসীম উদ্দীন জন্মগ্রহণ করেন – ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি, ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা
গ্রামে ( পৈতৃক নিবাস ফরিদপুরের গোবিন্দপুর গ্রামে ) ।
·
কবি জসীম উদ্দীনের
প্রকৃত নাম – মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন মোল্লা । (ছদ্মনাম: তুজম্বর আলী) ।
·
জসীম উদ্দীনের
শিক্ষাজীবন – ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে এসএসসি (১৯২১), রাজেন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি
(১৯২৪) ও বি. এ (১৯২৯) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম. এ
(১৯৩১ সালে) ।
·
লেখকের কর্মজীবন –
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় দীনেশচন্দ্র সেনের অধীনে রামতুন লাহিড়ী
গবেষণা সহকারী হিসেবে যোগদান করেন পরবর্তীতে ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা
বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন এবং পূর্বপাকিস্তান সরকারের প্রচার বিভাগের
কর্মকর্তা হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন (১৯৬২ সালে) ।
·
কবি জসীম উদ্দীনের
বৈবাহিক জীবন – ১৯৪৩ সালে মহসীন উদ্দীনের মেয়ে মমতাজকে বিবাহ করেন (ডাকনাম
মণিমালা) ।
·
জসীম উদ্দীনের প্রথম
প্রকাশিত কবিতার নাম – মিলন গান (১৯২১, মোসলেম ভারত) ।
·
তিনি কলকাতা
বিশ্ববিদ্যালয়ের পল্লীগীতি সংগ্রাহক পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন – ড. দীনেশচন্দ্র সেনের
অধীনে ।
·
জসীম উদ্দীনের সর্বাধিক
বিখ্যাত কবিতার নাম – ‘কবর’ কবিতা (১৯২৫ সালে ’কল্লোল’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়) ।
·
তাঁর কবি প্রতিভার
বিকাশ ঘটে – ছাত্র জীবনেই ।
·
জসীম উদ্দীন একাদশ
শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন লিখিত তাঁর যে কবিতাটি প্রবেশিকা বাংলা সংকলনের অন্তর্ভুক্ত
করা হয় – ‘কবর’ কবিতাটি ।
·
’কবর’ কবিতাটি –
‘রাখালী’ কাব্যের অন্তর্গত ।
·
জসীম উদ্দীনের প্রথম
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ – ‘রাখালী’ (’কল্লোল’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে) ।
·
’রাখালী’ কাব্যে মোট
কবিতার সংখ্যা – ১৯টি (যেমন: রাখালী, কিশোরী, রাখাল ছেলে, কবর, পল্লীজননী,
পাহাড়িয়া, গহীন গাঙের নাইয়া প্রভৃতি) ।
·
কবি জসীম উদ্দীন
‘রাখালী’ কাব্যগ্রন্থটি কাকে উৎসর্গ করেছিলেন – লেখকের অন্যতম সহযোগী ড. দীনেশ
চন্দ্র সেনকে ।
·
জসীম উদ্দীনের দ্বিতীয়
কাব্যের নাম – নকশি কাঁথার মাঠ (১৯২৯) ।
·
’নকশী কাঁথার মাঠ’ জসীম
উদ্দীনের যে শ্রেণির কাব্য – কাহিনি কাব্য (বিচিত্রা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়) ।
·
”দূরাগত রাথালের বংশী
ধ্বনীর মতো তোমার কবিতা পড়ে আমি কেঁদেছি” জসীম উদ্দীনের ’কবর’ কবিতা সম্পর্কে
উক্তিটি করেছেন – ড. দীনেশ চন্দ্র সেন ।
জসীম উদ্দীন এর জীবনী ও
সাহিত্যকর্ম জেনে নিন
·
’নকশী কাঁথার মাঠ’
কাহিনি কাব্যের ভূমিকা ও প্রচ্ছদ অঙ্কন করেছিলেন – রবীন্দ্র ভ্রাতা অবনীন্দ্রনাথ
ঠাকুর ।
·
’নকশী কাঁথার মাঠ’
কাব্যটি তিনি উৎসর্গ করেন – তাঁর বন্ধু আব্দুল কাদিরকে ।
·
’পাশা-পাশি দুটি
গ্রামের তরুণ-তরুণী রূপাই ও সাজু পরস্পরের প্রেমে পড়ে এবং বিয়েও হয় দুজনের ।
কিন্তু জমির ধানকাটা নিয়ে গ্রাম্য বিবাদে জড়িয়ে রূপাই খুনের দায়ে সংসার ছেড়ে
ফেরারী হয়ে যায় । এদিকে সাজু নকশী কাঁথা সেলাই করে ও স্বামীর বিরহ গাথা বুনতে
বুনতেই এক সময় মৃত্যুবরণ করে । কোন কাব্যের আলোচ্য বিষয় – ‘নকশী কাঁথার মাঠ’
কাব্যের ।
·
’নকশী কাঁথার মাঠ’ কাব্যটি
ইংরেজিতে অনুবাদ করেন – M Milford ‘The Field of the Embroidered Quilt’ নামে ১৯২৯
সালে ।
·
জসীম উদ্দীনের ’বালুচর’
কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় – ১৯৩০ সালে ।
·
’বালুচর’ কাব্যের মোট
কবিতার সংখ্যা – ১৭টি (কাব্যটি ত্রিপদী ছন্দে রচিত) ।
·
কবি জসীম উদ্দীনের
অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে – সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৪), হাসু (১৯৩৮),
রঙিলা নায়ের মাঝি (১৯৩৫), রূপবতি (১৯৪৬), মাটির কান্না (১৯৫১), এক পয়সার বাঁশী
(১৯৫৩), সকিনা (১৯৫৯), সুচয়নী (১৯৬১), মা যে জননী কান্দে (১৯৬৩), কাফনের মিছিল
(১৯৮৮) প্রভৃতি ।
·
জসীম উদ্দীন রচিত
নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে – পদ্মাপাড় (১৯৫০), বেদের মেয়ে (১৯৫১), মধুমালা (১৯৫১),
পল্লীবধূ (১৯৫৬), গ্রামের মেয়ে (১৯৫৯), আসমান সিংহ প্রভৃতি ।
·
’সুচয়িনী’ জসীম
উদ্দীনের কোন শ্রেণির রচনা – কবিতার সংকলন গ্রন্থ ।
·
’যাদের দেখেছি’ ও
‘ঠাকুর বাড়ির আঙ্গিনায়’ গ্রন্থ দুটির রচয়িতা – জসীম উদ্দীন (গ্রন্থ দুটি তাঁর
স্মৃতিকথামূলক রচনা ) ।
·
’চলে মুসাফির’ ’হলদে
পরীর দেশ’ ’যে দেশে মানুষ বড়’ জার্মানির শহরে বন্দরে’ গ্রন্থগুলি জসীম উদ্দীনের –
ভ্রমণকাহিনিমূলক রচনা ।
·
’এক পয়সার বাঁশী’ পল্লী
কবির – শিশুতোষমূলক গ্রন্থ (১৯৪৯ সালে প্রকাশিত হয়) ।
·
জসীম উদ্দীনের অন্যান্য
শিশুতোষমূলক গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে – হসু (১৯৩৮), ডালিম কুমার (১৯৫১) প্রভৃতি ।
·
’জীবন কথা’ কবি জসীম
উদ্দীনের – আত্মজীবনী মূলক রচনা (১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হয়) ।
·
’বাঙ্গালীর হাসির গল্প’
বিখ্যাত এই গল্প গ্রন্থটির রচয়িতা – পল্লীকবি জসীম উদ্দীন (১ম ও ২য় খণ্ডে, রচিত
-১৯৬৪ সালে) ।
জসীম উদ্দীন এর জীবনী ও
সাহিত্যকর্ম জেনে নিন
·
’বোবা কাহিনী’ জসীম
উদ্দীনের – একমাত্র উপন্যাস (প্রকাশিত হয় ১৯৬৪ সালে) ।
·
ভূমিহীন কৃষকদের
সীমাহীন দুঃখ দুর্দশা, মহাজনের শোষণ, সমাজের ভণ্ড ধার্মিক, প্রভৃতি যে রচনার
আলোচ্য বিষয় – ‘বোবা কাহিণী’ উপন্যাসের ।
·
’বোবা কাহিণী’
উপন্যাসের চরিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে – নায়ক আজহার, বছির, রহিমদ্দী, গরীবুল্লা
প্রভৃতি ।
·
জসীম উদ্দীনের
‘জারিগান’ নামক গানের সংকলনটি প্রকাশিত হয় – ১৯৬৮ সালে (সংকলনটিতে ২৩ টি পালা
রয়েছে) ।
·
’রঙ্গীলা নায়ের মাঝি’
এবং ‘মুর্শিদী গান’ গ্রন্থ দুটির রচয়িতা – জসীম উদ্দীন (বাংলা গানের সংকলন) ।
·
কবি জসীম উদ্দীন রচিত
গানের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য –
·
আমার সোনার ময়না
পাখি…….
·
আমায় ভাসাইলি রে, আমায়
ডুবাইলি রে……….
·
আমায় এত রাতে কেন ডাক
দিলি…………
·
প্রাণো সখি রে ঐ শোন
কদম্ব তলে…………
·
আমার হার কালা করলাম
রে………
·
নদীর কূল নাই কিনার
নাই…………
·
আমারে ছাড়িয়া বন্ধু কই
গেলা রে…………
·
নিশিতে যাইও ফুলবনে রে
ভোমরা……….
·
বাঁশরি আমার হারাই
গিয়াছে………….
·
আমার বন্ধু বিনোদিয়ারে,
প্রাণ বিনোদিয়া…………. প্রভৃতি ।
·
জসীম উদ্দীন জীবদ্দশায়
লোকসংগীত সংগ্রহ করেছিলেন – ১০,০০০ বেশি ।
·
কবি জসীম উদ্দীনের
কবিতার বিশেষ কয়েকটি পঙক্তি ।
·
”আসমানীরে দেখতে যদি
তোমরা সবে চাও, রহিমুদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসূলপুরে যাও” (আসমানী)
জসীম উদ্দীন এর জীবনী ও
সাহিত্যকর্ম জেনে নিন
·
”তুমি যাবে ভাই যাবে
মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়” (নিমন্ত্রণ) ।
·
”আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে
যেবা, আমি বাঁধি তার ঘর” (প্রতিদান)
·
”এই দূর বনে সন্ধ্যা
নামিছে ঘন আবিরের রাগে, অমনি করিয়া লুটিয়া পড়িতে বড় সাধ জাগে “। (কবর)
·
”আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা
ফুল তুলিতে যাই” (মামার বাড়ি)
·
”মুজিবর রহমান । ওই নাম
যেন ভিসুভিয়াসের অগ্নি উগারী বান” ।
·
”বাপের বাড়িতে যাইবার
কালে কহিত ধরিয়া পা, আমারে দেখিতে যাইও কিন্তু উজানতলীর গাঁ”। (কবর)
·
”এই মোর হাতে কোদাল
ধরিয়া কঠিন মাটির তলে, গাড়িয়া দিয়াছি কত মোনামুখ নাওয়ায়ে চোখের জলে” । (কবর)
·
জসীম উদ্দীনের বিশেষ
কয়েকটি কবিতার মধ্যে রয়েছে – কবর, আসমানী, পল্লীজননী, রাখাল ছেলে, মামারবাড়ি,
নিমন্ত্রণ, মুসাফির, চাষার ছেলে, পল্লীবর্ষা প্রভৃতি ।
·
’কবর’ কবিতাটি যে ছন্দে
রচিত – মাত্রাবৃত্ত ছন্দে (১১৮ লাইন বিশিষ্ট কবিতা) ।
·
জসীম উদ্দীনের ‘কবর’
কবিতায় দাদু শাপলার হাটে কী বিক্রি করতেন – তরমুজ ( যা থেকে ৬ পয়সা সঞ্চয় করতেন) ।
·
জসীম উদ্দীনের ’আসমানী’
চরিত্রটির বাড়ি কোথায় – ফরিদপুর জেলার রসূলপুর ।
·
কবি জসীম উদ্দীনের মেয়ে
ও জামাই যাথাক্রমে – হাসনা মওদুদ ও ব্যারিস্টর মওদুদ আহমেদ ।
·
তিনি যেসব সাহিত্য
পুরস্কার লাভ করেন – বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডি.লিট ডিগ্রি (১৯৬৪), একুশে
পদক (১৯৭৬), স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর ১৯৭৮) প্রভৃতি ।
·
”সখী দীন দুঃখীর যারে
ছাড়া কেহ নাই, সেই আল্লাহর হাতে আজি আমি তোমারে সপিঁয়া যাই”। বিখ্যাত লাইন দুটির
রচয়িতা – পল্লীকবি জসীম উদ্দীন (নকশী কাঁথার মাঠ গীতিকাব্যে নায়ক রূপাই এর উক্তি)
।
·
কবি জসীম উদ্দীনের যে
সাহিত্যকর্মটি শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম বলে সর্বজন বিবেচিত – ‘নকশী কাঁথার মাঠ’
কাব্যটি ।
·
বহুগুণে গুণান্বিত
বাংলা গীতিময় কবিতার অন্যতম রচয়িতা কবি জসীম উদ্দীন ইহজগতের মায়া ত্যাগ করেন –
১৯৭৬ সালের ১৩ মার্চ (কবির শেষ ইচ্ছানুযায়ী ফরিদপুরের অম্বিকাপুর গ্রামে তাঁর
দাদির কবরের পাশে সমাহিত করা হয়) ।
(সংগৃহীত)
মোছাঃ
মারুফা বেগম
প্রধান
শিক্ষক
খগা
বড়বাড়ী বালিকা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়
ডিমলা, নীলফামারী।
ইমেইলঃ [email protected]
- ICT4E
District Ambassedor
- সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা
·