Loading..

খবর-দার

১৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

ঝিঁঝি পোকার গান

ঝিঁঝি পোকার গান

ঝিঁঝি পোকার গানের সঙ্গে আমরা কমবেশি পরিচিত। বিশেষ করে, যাদের সঙ্গে গ্রামবাংলার সম্পর্ক রয়েছে, তারা তো গ্রীষ্মের ঝিঁঝির গান শুনতে অভ্যস্ত। আর গ্রামের শিশু-কিশোরদের মুখে একটা কথা খুব প্রচলিত: ঝিঁঝির ডাক শুরু হয়েছে...এই তো আম-কাঁঠাল পাকল বলে। আবার প্রকৃতির বাস্তবতা হলো, এ সময়েই আম-কাঁঠাল ও অন্যান্য ফলফলাদি পাকে। তবে প্রকৃত সত্য হলো, ঝিঁঝি পোকার গান পুরুষ পোকার প্রজনন সংকেতধ্বনি। এর মাধ্যমে উভয় লিঙ্গের পোকা একে অপরের সঙ্গম করে ও মিলিত হয়।

জোনাকির মিটিমিটি ও ঝিঁঝির গানের উল্লেখ যথেষ্ট পাশাপাশি দেখতে পাওয়া যায় আমাদের শিল্প-সাহিত্যে, আদিকাল থেকেই। গ্রিক কবি হোমারের লেখায়ও ঝিঁঝির গানের উল্লেখ আছে।সাধারণভাবে পোকা বলতে আমরা কীটপতঙ্গকে বুঝি। অর্থাৎ ঝিঁঝি পোকা দলগত পরিচয়ে কীটপতঙ্গ (Class-Inseda)। বর্গ (Order) পরিচয়ে হেমিপটেরা (Hemiptera)। সাধারণভাবে এগুলো ‘সাইকাডা’ (Cicada) নামে পরিচিত। এদের বিস্তার পৃথিবীজুড়ে এবং ৩ হাজারেরও বেশি প্রজাতি রয়েছে। এদের শরীর ১-২ ইঞ্চি লম্বা। এদের শরীর মাথা, বক্ষ ও উদর—এ তিন ভাগে বিভক্ত। বক্ষের নিচে জটিল শব্দ (গান) উত্পাদনকারী অঙ্গাদি রয়েছে।

পৃথিবীর সব শব্দ উত্পাদনকারী কীটপতঙ্গ মুখ দিয়ে শব্দ করতে পারে না। এরা সাধারণত শরীরের একমাত্র (Rough) অঙ্গের সঙ্গে অন্য কোনো অঙ্গের ঘর্ষণের মাধ্যমে শব্দ উত্পাদন করে। সেই বিশেষ অঙ্গটি পা বা পাখা হতে পারে। ঝিঁঝি পোকার ক্ষেত্রেও তা–ই হয়।

ঝিঁঝি পোকা প্রজাতিগুলোর নিচের দিকে সম্মুখ উদরীয় অংশের গোলাকার পক্ষল টিম্বল (Tymbal) নামে একটি অঙ্গ থাকে। এটাই এই গানে প্রধান ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া ঝিঁঝি পোকা টিম্বলের কাছাকাছি বিশেষ মাংসপেশিও আছে। সেই মাংসপেশিটি ঝিঁঝি পোকা বারবার টেনে ধরে আর ছেড়ে দেয়। ফলে তৈরি হয় সুরেলা শব্দ। দুপুর বা সন্ধ্যায় পোকাগুলো এমনটা করে। এমন প্রকট ও সুরেলা শব্দ ঝিঁঝি পোকা ছাড়া অন্য কোনো কীটপতঙ্গের দলে শোনা যায় না।

সাধারণত ঝিঁঝি পোকা গাছে বসবাস করে। গাছের রস টেনে খেয়ে বাঁচে। কখনো এগুলো রাত-বিরাতেও শত্রুকে ভয় দেখানোর জন্য শব্দ করে। পাখি এদের বড় শত্রু। এদের জীবনধারায় দুই ধরনের অবস্থা লক্ষ করা যায়। একদল বার্ষিক অর্থাৎ এক বছরের মধ্যে জীবন চক্র সম্পন্ন করে। অন্য একদল পরিণত অবস্থার আগের অবস্থায় (Nymphal stage) মাটির নিচে ১৩ থেকে ১৭ বছর অনড় অবস্থায় থেকে যায়। এত লম্বা সময় ধরে ঝিঁঝি পোকার শীতযাপনতা (hibernation) অবস্থার থাকাটা প্রকৃতিবিদদের কাছে কৌতূহলের বিষয়। তারপর তা থেকে বের হয় অজস্র ঝিঁঝি পোকার দল, একসময় মাটির নিচে থেকে বেরিয়ে আসে।