প্রভাষক
১৯ জানুয়ারি, ২০২২ ১২:১৬ পূর্বাহ্ণ
গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি?
গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি?
গাজরকে
ইংরেজিতে ক্যারট (Carrot) বলা হয়। গাজরের মধ্যে এমন কিছু উপাদান
থাকে যা আপনাকে সুন্দর রাখতে এবং আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
আধুনিক
বিজ্ঞানে গাজরের উপকারিতার কথা বলেছে। তাই গাজর কে পরিবারের সকলে ব্যবহার করতে
শুরু করেছে তাই তহ?
স্বাস্থ্য
বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজর স্বাস্থ্যের জন্য অন্যতম। গাজর অনেক পুষ্টিকর গুণাবলী
সমৃদ্ধ। এর মধ্যে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে, এবং ভিটামিন-বি,
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড, ফোলেট, পটাসিয়াম, আয়রন, প্রচুর পরিমানে ফাইবার এবং বিটা
ক্যারোটিন পাওয়া যায় যা স্বাস্থ্যের জন্য চূড়ান্ত উপকারী করে তোলে। আসুন তাহলে
জেনে নেই গাজরের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কি কি:
গাজরের
বৈজ্ঞানিক নাম:
ডাকাস
ক্যারোটা (Daucus Carota)
গাজরের
পুষ্টির পরিমান:
১০০ গ্রাম
কাঁচা গাজরে প্রধান পুষ্টি উপাদানের পাওয়া তার দীর্ঘ তালিকাটি নিম্নরূপ:
১)
কার্বোহাইড্রেট: ৯ গ্রাম।
২) চিনি: ৬
গ্রাম।
৩) ডায়েটারি
ফাইবার: ৩ গ্রাম।
৪) ফ্যাট: ০.২
গ্রাম।
৫) প্রোটিন: ১
গ্রাম।
৬) ক্যালসিয়াম:
৩৩ মিলিগ্রাম।
৭)
ম্যাগনেসিয়াম: ১৮ মিলিগ্রাম।
৮) ফসফরাস: ৩৬
মিলিগ্রাম।
৯) পটাসিয়াম:
২৪০ মিলিগ্রাম।
১০) সোডিয়াম:
২.৪ মিলিগ্রাম।
১১)
ভিটামিন-বি: ০.০৪ মিলিগ্রাম।
১২)
ভিটামিন-বি-২: ২০.০৬ মিলিগ্রাম।
১৩)
ভিটামিন-বি-৩: ৩১.২ মিলিগ্রাম।
১৪)
ভিটামিন-বি-৪: ৬২.০১ মিলিগ্রাম।
১৫)
ভিটামিন-সি: ৭ মিলিগ্রাম।
গাজরের
পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা:
নিয়মিত ভিটামিন
এ খাচ্ছেন ভুলে যান বাইরের ভিটামিনের কথা। খেয়ে নিন একটি লাল রঙের গাজর। কারণ,
একটি গাজর আপনাকে দিতে পারবে অনেক ভিটামিন এছাড়াও নানা উপকার থাকে এতে।
শক্তিশালী
খাদ্য উপাদান শুধু ভিটামিন-এ পাওয়া যায় তাই নয়, গাজরে আছে নানাবিধ উপকারী উপাদান
যা আপনাকে উপহার দেবে সুন্দর ত্বক থেকে শুরু করে ক্যানসার থেকেও সুরক্ষা। আসুন
তাহলে এবার জেনে নেই গাজরের উপকারিতা গুলো:
১) দৃষ্টিশক্তি
বাড়াতে সাহায্য করে: আগে গাজর না খেয়ে থাকলে এখন
থেকে গাজর খাওয়া শুরু করুন। কারণ, গাজরের মধ্যে আছে বেটা ক্যারোটিন যা দৃষ্টিশক্তি
বাড়াতে সাহায্য করে। বিটা ক্যারোটিন যা আমাদের লিভারে গিয়ে ভিটামিন-এ তে বদলে যায়
এবং চোখের রেটিনায় গিয়ে পৌঁছে চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
সেই সাথে রাতের
বেলায় অন্ধকারে ভালো দেখার জন্য দরকারি এমন এক ধরনের বেগুনি পিগ্মেট এর সংখ্যা
বাড়িয়ে দিয়ে দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে এই গাজর।
২) ক্যান্সারের
ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে: গাজর ক্যান্সারের
ঝুঁকি কম করতে সাহায্য করে। কারণ, গাজরে আছে Falcarinol এবং Falcarindiol যা
আমাদের শরীরে এন্ট্রিক্যান্সার উপাদানগুলিকে রিফিল করে। গাজর খেলে ফুসফুস
ক্যান্সার, কলোরেক্টাল ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারে হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
বেশিরভাগ
সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতিদিন দেড় কাপ গাজরের রস পান করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে
যায়।
৩) লিভারের
জন্য গাজর: গাজরের মধ্যে প্রচুর পরিমানে
ভিটামিন-এ রয়েছে যা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে।
এছাড়াও এটি
লিভারের পিত্ত এবং হিমায়িত ফ্যাট কম করতে সাহায্য করে। গাজরে দ্রবণীয় ফাইবার
প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় যা আপনার লিভার এবং কোলনকে মলত্যাগের প্রক্রিয়াটিকে
উদ্দীপনা দিয়ে পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।
প্রতিদিন একটি
করে গাজর সেবন করলে লিভারে প্রদাহ, ফোলা ভাব ও সংক্রমণ কমে যায়। লিভারের
হেপাটাইটিস, সিরোসিস এবং কোলেস্টেসিসের মতো সমস্যা থেকে লিভারকে রক্ষা করে।
৪) অ্যান্টি
এজিংয়ের জন্য গাজর: এটি আমাদের শরীরের জন্য শুধু
ভালো তাই নয়, এটি অ্যান্টি এজিং উপাদান হিসেবেও কাজ করে। এতে যে বিটা ক্যারোটিন
আছে তা আমাদের শরীরের ভিতরে গিয়ে অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
আমাদের শরীরে
ক্ষয়প্রাপ্ত সেলগুলিকে ঠিকঠাক করে যা সাধারণ মেটাবলিজমের কারণে হয়ে থাকে। এছাড়াও
এটি এজিং সেলগুলোর গতি ধীর করে দিতে সাহায্য করে। এর ফলে আপনি ধরে রাখতে পারবেন
আপনার যৌবনকে অধিক সময়ের জন্য।
৫) সুন্দর
ত্বকের জন্য গাজর: সুন্দর ত্বকের জন্য গাজর খেতে
পারেন। এটা আপনার ত্বককে ভেতর থেকে সুন্দর করে তুলতে সাহায্য করে। কাজের মধ্যে
ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার ত্বকের রোদে পোড়া পোড়া ভাব দূর করতে সাহায্য
করে। এছাড়া ভিটামিন-এ ত্বকের ভাঁজ পড়া, কালো দাগ, ব্রণ ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য
করবে। যার ফলে আপনার ত্বক সুন্দর দেখাবে।
৬)
অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে: গাজর
একটু ভালো অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। ইনফেকশন হওয়া থেকে রক্ষা করে। সব কেটে
গেলে বা পুড়ে গেলে সেখানে লাগিয়ে দিন গাজরের রস। ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা আর থাকবে
না।
৭) হৃদরোগের
জন্য গাজরের উপকারিতা: এছাড়া হৃদপিণ্ডের নানান অসুখে
এটা খুব ভালো কাজ করে। এর কেরাটিন ক্যারোটিনয়েড হৃদপিণ্ডের নানা অসুখের ঔষধ হিসেবে
কাজ করে। যেসব খাবারে যেমন: গাজর এর উচ্চমাত্রায় এই পাওয়া যায়।
হার্ভার্ড
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতিদিন একটি গাজর খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি
৬৮% পর্যন্ত কমে যায়।
৮) ওরাল
স্বাস্থ্যের জন্য গাজরের উপকারিতা: আপনি
সুন্দর ও সুস্থ সবল দাঁত চান? তবে, এখনই গাজর খাওয়া শুরু করুন। গাজর মুখের লালা
উত্পাদন বাড়ায় এবং প্রাকৃতিকভাবে এটি ক্ষারীয় কারণে মুখের মধ্যে অ্যাসিডের
প্রভাবকে ভারসাম্যহীন করে তোলে। ক্ষারীয় প্রভাব মুখের ব্যাকটেরিয়ার প্রতিরোধ করে।
যার ফলে গহ্বর, মুখের গন্ধ এবং অন্যান্য মুখের স্বাস্থ্য সমস্যা দূরে রাখে।
গাজরের মধ্যে
ভিটামিন-সি থাকে। এর ফলে যা সংযোজক টিস্যু, দাঁত এবং মাড়ির জন্য ভাল রাখতে সাহায্য
করে। গাজর আপনার দাঁত ও মুখ পরিষ্কার করে। গাজরের মিনারেলস গুলো দাঁত মজবুত থাকতে
সাহায্য করে।
৯) স্ট্রোকের
ঝুঁকি কমাতে গাজরের উপকারিতা: এমন কিছু
উপাদান রয়েছে যা মানব শরীরের স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
হার্ভার্ড
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের মতে জানা গেছে যে যারা ৬ টির গাজর খেয়েছেন বা খাচ্ছেন
তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি এর থেকে কম পরিমাণে কম একটি গাজর খাচ্ছেন তাদের তুলনায় অনেক
কম হয়েছে।
স্ট্রোকের
ঝুঁকি কমাতে এখন থেকে খাদ্যতালিকায় গাজর যোগ করুন।
১০) কানের
ব্যথার জন্য গাজরের উপকারিতা: সর্দি-কাশি
বা কোনও অসুস্থতার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসাবে যদি কানে ব্যথা হয়। তবে, গাজরকে
ব্যবহার করার মাধ্যমে স্বস্তি দেয়। কলা, গাজর, আদা এবং রসুনের খোলা জল উষ্ণ গরম
করে কানে ১-২ ফোঁটা লাগলে কানের ব্যথা কমে যায়।
১১) দাঁতের
রোগের জন্য গাজর: গাজর রক্ত পরিষ্কার করে। এর
মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। তামাক চিবিয়ে গাজর সেবন করলে দাঁতগুলিও শক্ত,
পরিষ্কার এবং উজ্জ্বল এবং মাড়িও শক্ত হয়।
১২) কৃমি রোগের
জন্য গাজর: শিশুদের পেটে সবচেয়ে কৃমির
সমস্যা বেশি দেখা যায়। একটি গাজর কেটে ২০-৪০ মিলি জুস তৈরি করুন এবং শিশুকে পান
করান। দেখবেন পেটের কৃমি থেকে মুক্তি পাবেন।
চেনা হয়ে গেল
গাজরের নানা প্রকার উপকারিতার কথা একটু ভালো থাকার জন্য আমরা কতই কিছু না করি।
জানা হয়ে গেল গাজরের নানা উপকারিতার কথা।
একটু ভালো
থাকার জন্য আমরা কত কিছুই না করি। যদি একটি খাদ্য উপাদান আমাদের দৈনন্দিন খাবারের
তালিকায় যোগ করেন নিজেদের আরেকটু ভালো রাখতে পারি তাহলে কেন করব না। তাই চলুন একটি
করে রোজ গাজর খায় নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য।
গাজরের
অপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া:
যেহেতু গাজর
সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্য উপযোগী খাদ্য এবং ব্যবহারের জন্য একটি খুব ভালপরিমানে
রয়েছে তাই সম্ভবত আপনি এটি খুব বেশি পরিমাণে গ্রহণ করেছেন। তবে, এর অতিরিক্ত
ব্যবহার সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। করণ! এর অত্যধিক পরিমাণে সেবন করলে আপনাকে এর কিছু
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুখোমুখি হতে পারে। তা নিম্নে উল্যেখ করা হলো:
১) গাজরের
মধ্যে প্রচুর বিটা ক্যারোটিন আছে। যা আপনার শরীরে ভিটামিন-এ এর ঘাটতি দূর করে।
তবে, আপনি যদি এটি খুব বেশি পরিমাণে গ্রহণ করেন তাহলে তা আপনার ত্বকের রঙ পরিবর্তন
করে দিতে পারে।
২) আপনার গাজর
থেকে অ্যালার্জি হতে পারে।
৩) আপনি যদি
ডায়াবেটিসে ভগতে থাকেন তবে, কাঁচা অবস্থায় বা সিদ্ধ করে গাজর খাবেন না। কারণ!
গাজরে মিষ্টির পরিমাণ বেশি থাকে। যার ফলে সুগার বা ডায়াবেটিস রোগীদের সমস্যা হতে
পারে।
৪) প্রচুর
পরিমাণে গাজর গ্রহণের ফলে ত্বকের রং হলুদ হয়ে যায় এবং শিশু ও অল্প বয়সের শিশুদের
মধ্যে দাঁত ক্ষয় হতে পারে।
৫) প্রচুর
পরিমাণে গাজর খেলে আপনার দেহে ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, দস্তা ইত্যাদি
খনিজগুলির শোষণে প্রভাব ফেলতে পারে।
৬) আপনি যদি
সঠিক পরিমাণে গাজর সেবন করেন তাহলে আপনার হজম শক্তি উন্নতি করতে পারে। অন্যদিকে,
এর চেয়ে বেশি পরিমাণে গাজর খেলে আপনার গ্যাস, ডায়রিয়া, পেট, পাকস্থলী ইত্যাদির মতো
পাচনজনিত ব্যাধিগুলির সমস্যা হতে পারে।
৭) অতিরিক্ত
পরিমাণে গাজরের রস খাওয়ার ফলে মহিলাদের বুকের দুধের স্বাদ পরিবর্তন হয়।
উল্লিখিত
বিষয়গুলি মাথায় রাখুন এবং সুস্বাদু গাজর খান এবং রোগগুলিকে বিদায় জানিয়ে স্বাস্থ
ভালো রাখুন।
মোঃ সাখাওয়াত হোসেন
প্রভাষক
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
বিভাগ
আগানগর ডিগ্রি কলেজ,
বরুড়া, কুমিল্লা।