প্রভাষক
১৪ মে, ২০২২ ০৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ
বাবা চির নিদ্রায়, আব্দুল আলীম (স্বরচিত কবিতা)
বাবা চির নিদ্রায়
আব্দুল আলীম
কালো মেঘে ছেয়ে গেল হ্রদয় আকাশ,
অঝোর ধারায় লোনা বৃষ্টি শুরু হল হঠাৎ।
ভিজেনা
শরীর, শুধু সিক্ত হচ্ছে প্রাণ,
সেদিনের
বিচ্ছেদ ব্যথা আজও অম্লান।
আটটি পাখির হ্রদয়ে হচ্ছে রক্ত ক্ষরণে,
আরও কে কত তোমায় বাবা করেছিল স্বরণ।
নীড়
হারা পাখিটির মতো খুঁজে ফিরিয়ে বাসা,
কোলে
নিয়ে মেজ আপা দিলেন বাঁচার ভরসা।
অবুঝ শিশুটি তারকায় শুধু গামছা গলায়,
তার স্ব- করুণ চাহনি মোরে আজও কাঁদায়।
জানা
নেই দুধের নিস্পাপ শিশুটি কোথায়?
দোলনায় শুয়ে বুঝি কাঁদছে হেথায়!
রবিবারের রৌদ্র ততক্ষণে উঠেছে তেতে,
উষাধান আটা হচ্ছে পায়ে পায়ে পিশে।
লাঙল
কাঁধে কেন নিব, বই- পুস্তক ফেলে?
শুধালেন
ডাক্তার বাবু মাস্টারের যে কয়জন ছেলে।
খোদা কি কবুল করেননি ফরিয়াদ, দাদির আঁচল ভিক্ষা?
তবে কে দিবেন আদর-স্নেহ, আর গুরুজনের সুশিক্ষা?
তাল
গাছটির পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে অসংখ্য তরুণ- তরুণী,
নাম
না জানা ঐ শিক্ষার্থীদের অনেককেই আমি চিনি।
ভাঙ্গা মনে আজ দিতেছে বিদায় আদর- যত্ন করে,
যাদেরকে বাবা গড়ে তুলেছিলেন অক্ষরে- অক্ষরে।
বরই
পাতা, কুসুম পানি,
গায়ে মেখে সাবান,
কারা
যেন দিল গোছল তোমায়, করে অতি সম্মান।
ঐ রকম সাদা পোষাকে বাবা কভু দেখিনি তোমায়,
আতর- গোলাপ মাখায়ে তাহাতে রাখিল জড়ায়।
রোদের
তাপ কমে যাওয়াতে রাখা হল আঙ্গিনায়,
ঘুভের
ঘোরে মৃদু হেসে হেসে নিতেছিলে বিদায়।
ততক্ষণে এই সংবাদ পেয়ে সবাই আসিয়া জুটমিল,
বন্ধু- বান্ধব, আত্মীয়- অনাত্মীয় কেঁদে
লুটিয়া পড়িল।
বের
হলে বাড়ি থেকে চির বিদায়ের তরে!
পাগলী
বলে বার বার কেবা হাঁক ছাড়ে?
এ যে আমার জন্ম দুঃখিনী মমতাময়ী মা,
নানী, দাদী সাথে আছেন আরো কয়েকজনা।
অসংখ্য
লোক হয়েছিল বাবা তোমার জানাযায়,
কারণ, দূর
থেকে মোকাব্বিরের ধ্বনি শোনা যায়।
সুনাম ধন্য আলেম তোমার বাবা জানাযা পড়ায়,
দোআ করে সঁপেছিলেন আল্লাহর জিম্মায়।
হঠাৎ
কে যেন ঘাড়ে করে নিয়ে যায় আমায়,
বলেন, মুখটি
তোমার শুকিয়ে খোকা পেটের ক্ষুধায়।
বলেন, এই রাস্তায় তোমার বাবা যাবেন কিছু পরে,
এখন কিছু খেয়ে নাও তবে এই অবসরে।
রাস্তা
দিয়ে যেতে যেতে খেই হারিয়ে যায়,
কোনও
দিন যায়নি বুঝি ঐ গোর সাহাবায়।
খানিক পরে সবার মুখে দোআ শুনতে পায়,
দুনিয়ার মায়া ছেড়ে নিলে চির জনমের বিদায়!
পালাক্রমে
সকলে তোমায় করিল দাফন,
সেদিন
থেকে তুমি মোদের রইলে না আপন।
যখন তখন মনে পড়ে চলিতে ফিরিতে,
প্রভুর নিকট ফরিয়াদ রইল তোমার মাগফিরাতে।