সহকারী শিক্ষক
১৬ মে, ২০২২ ০৩:১২ অপরাহ্ণ
মধুমাসের রসাল জামরুল
বৈশাখ-জৈষ্ঠের খরতাপে দগ্ধ দিন। চলতি পথে হরহামেশাই এখন চোখে পড়ে, ফুটপাতে ডালাভরা টসটসে জামরুলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। তৃষ্ণা নিবারণে জামরুলের জুড়ি নেই।
সুদর্শন ফলটির অন্য গুণের কথা জানার
আগে
দেখে নেওয়া যাক এর ঠিকুজি-কুলজি:
সারা দেশেই এর-ওর বাড়ির আঙিনার আশপাশে নাতিদীর্ঘ ঘন পাতার সন্নিবেশে চিরসবুজ গাছটি চোখে পড়লেও একে নিজ দেশের উদ্ভিদ ভাবার কারণ নেই। সেই যে এককালে ভারতের স্বাধীনতাকামী রাজবন্দীদের আন্দামানে নির্বাসিত করত ব্রিটিশরা, সেই আন্দামান ও নিকোবর হলো জামরুলের জন্মভূমি। তবে বহুকাল থেকে আমাদের দেশে গাছটি জন্মাচ্ছে। সে কারণে এ দেশের নাগরিকত্ব পেয়েছে ঢের আগেই। ইংরেজিতে বলে ‘স্টার অ্যাপল’ বা ‘ওয়াটার অ্যাপল’। বৈজ্ঞানিক নাম Eugenia javanica।
গ্রীষ্মের মৌসুমি ফলের মধ্যে জামরুলই বাজারে আসে প্রথম। মার্চের শুরুতেই গাছে ফুল আসে, এপ্রিলের শেষ নাগাদ ফল পাকতে শুরু করে। বর্ষার মাঝামাঝি পর্যন্ত পাওয়া যায়। মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে কয়েকবার ফল আসে গাছে। কোনো কোনো জাতের বছরে দুবার গ্রীষ্মের পাশাপাশি শীতেও ফলন হয়। ফল সাদা বা সবুজাভ সাদা, লাল ও গোলাপি।
কৃষিবিদ মৃত্যুঞ্জয় রায় তাঁর বাংলাদেশের বিচিত্র ফল বইতে আমাদের দেশে চারটি প্রধান জাতের জামরুলের উল্লেখ করেছেন। দেশি জাতের জামরুলের গাছগুলো বড়, তবে এর ফল আকারে ছোট, মিষ্টিও কম। থাই জামরুলের গাছ ছোট হলেও ফলের আকার বড়। রসাল আর মিষ্টি। থাই জামরুল বলা হলেও এগুলো আসলে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের বিভিন্ন জাত। বেসরকারি নার্সারির কল্যাণে থাই জামরুল নামের এই বিদেশি জাতগুলোর চারা এখন সহজলভ্য। বাণিজ্যিকভাবে বা বাড়ির ছাদে-আঙিনায় দিব্যি এসব জাতের চাষ হচ্ছে। ছোট আকারের গাছের সরু শাখায় ঝুলে থাকা টকটকে লাল বা দুধসাদা জামরুলগুচ্ছের সৌন্দর্যও দৃষ্টিকাড়া। কিছু কিছু আছে মোমের মতো সাদা ফলটির মুখের কাছে একটু গোলাপি আভা, কোনোটির আবার সাদার ওপর লম্বা লাল রেখা। বড় আকারের ফলগুলো ১০-১৫টি ওঠে এক কেজিতে। এ ছাড়া ‘রোজ অ্যাপল’ নামের একটি বিদেশি জাত আছে, যেটি বছরে দুবার ফলন হয়। এর ফল আকারে সব থেকে বড়। প্রতি কেজিতে পাঁচ-ছয়টি। ভেতরটা ফাঁপা নয়। যেমন রসাল, তেমনি মিষ্টি। চিনির পরিমাণ ২৫ শতাংশ। দেশের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ‘বারি জামরুল’ নামের একটি নিজস্ব জাত উদ্ভাবন করেছে। এটি চাষের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে ১৯৯৭ সালে। ফল মেরুন রঙের। বেশ সুস্বাদু। ‘আপেল জামরুল’ নামেও অনেকে এটিকে চেনেন।
জামরুলের তৃষ্ণা নিবারক গুণ আছে, আছে রসের আধিক্যও। প্রতি ১০০ গ্রামে জলীয় অংশ ৮৯ দশমিক ১ শতাংশ। ফলটি ক্যারোটিন, ভিটামিন বি ও সি-সমৃদ্ধ। ক্যারোটিন আছে ১৪১ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-১ আছে দশমিক শূন্য ১ ও বি-২ আছে দশমিক শূন্য ৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৩ মিলিগ্রাম। সহজলভ্য। সারা দেশেই পাওয়া যায়। দামেও সস্তা। এখন ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে আকার-প্রকারভেদে ৫০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। তপ্ত দিনে এর রস আস্বাদন করা যেতে পারে চাইলেই।