সহকারী প্রধান শিক্ষক
১৯ মে, ২০২২ ০৭:৩০ পূর্বাহ্ণ
ফুল নাইচিচির বহ্নিশিখা
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অনুচ্চ পাহাড়-হাওর
ঘুরে আসতে না আসতেই পূর্ব-দক্ষিণে পাহাড় থেকে ডাক এল। সেখানে বিচিত্র ও বর্ণিল
ফুলের সমারোহে উৎসব আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। এই ডাক কি উপেক্ষা করা যায়? করোনাকালে দুই
বছর যেতে পারিনি। বলে রেখেছিলাম, নাইচিচি উদালের রং ছড়ানোর সময় খবরটা যেন জানায়।
তখন বাড়তি হিসেবেও আরও কিছু জুটতে পারে।
১৩ এপ্রিল কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ
কর্মকর্তা প্রকৃতিপ্রেমী সাইফুদ্দিন সাইফের নেতৃত্বে লামার দুর্গম পাহাড়ে আমাদের
পুষ্পানুসন্ধান শুরু হলো। টিলার উঁচু থেকে ক্যামেরার লেন্স গলিয়ে নাইচিচি উদালের
প্রথম ছবিটি জুতমতো তোলা গেল না। সতীর্থরা আশ্বস্ত করলেন, বিভিন্ন স্পটে আরও অনেক
গাছে ফুল পাওয়া যাবে। সত্যি, পথে পথে ফুলভরতি অনেক গাছ পাওয়া গেল।
সাধারণ উদাল বা ফাইশ্যা উদালের মতোই পত্রহীন
গাছে আঙুলাকৃতির লালচে ফুলগুলো সবুজের পটভূমিতে রংরেখার অপরূপ কারুকাজ করে রেখেছে।
কোনো কোনো গাছে ফুল শেষে ফল এসেছে। একই গাছে আবার ফুল-ফল দুটিই পাওয়া গেল।
সৌন্দর্যের বিচারে ফলও কম যায় না! গঠনসৌষ্ঠব, পাতা, ফুল ও ফলের সৌন্দর্যে গাছটি
অনন্য, অসাধারণ। দেখেছি মোটা কাণ্ডের সুউচ্চ গাছও। নাইচিচির সঙ্গে বাড়তি হিসেবে
জুটল উদালের লাল রঙের অসংখ্য ফল।
উদাল ফুলের রং হলুদ। বসন্তের শুরুতে ছোট আকৃতির
ঘনবদ্ধ অসংখ্য ফুল ঝুলে থাকে গাছে। সমতলে এ গাছ কোথাও কোথাও দেখা যায়। কিন্তু
নাইচিচি উদালের ফুল ফোটে গ্রীষ্মে, রং কমলা বা লালচে। সমতলে এ গাছ কোথাও দেখিনি।
সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু গাছ লাগিয়েছি। রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাসে লাগানো হয়েছে ৫০টি গাছ।
ইংরেজি নাম স্কারলেট স্টেরকুলিয়া। নাইচিচি উদাল
(Firmiana colorata) মাঝারি আকৃতির শাখা-প্রশাখাময় পত্রঝরা বৃক্ষ। ডালের আগায় থাকা
করতলাকৃতির গুচ্ছবদ্ধ পাতাগুলো ১২ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা এবং প্রস্থেও প্রায়
কাছাকাছি। ফুল ফোটার আগে পাতা ঝরে যায়। বসন্তের শেষ দিকে গ্রীষ্মের শুরুতে লালচে
কমলা রঙের অসংখ্য ফুলে গাছ ভরে ওঠে।
তখন অনেক দূর থেকেই এ গাছের সৌন্দর্য উপভোগ করা
যায়। পত্রহীন ডালপালায় উজ্জ্বল রঙের ফুলের আধিপত্য সত্যিই হৃদয়গ্রাহী। ফুল ও
ডালপালা সূক্ষ্ম রোমে আবৃত থাকে। ফুল গড়নের দিক থেকে অনেকটা আঙুলের মতো, প্রায় ৩০
মিলিমিটার লম্বা। নল প্রায় ১৪ মিলিমিটার লম্বা। ফুল শেষ হতে না হতেই ফল আসে। তাজা
কচি বীজ খাওয়া যায়, স্বাদ অনেকটা কাঠবাদামের মতো। বাকলের আঁশ থেকে মজবুত দড়ি তৈরি
হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ গবাদিপশু
বাঁধতে এবং মাথায় বেঁধে পিঠে ঝোলানো ঝুড়িতেও এই দড়ি ব্যবহার করেন। আঞ্চলিক ভাষায় যা
‘তুরং’ নামে পরিচিত। নাইচিচি পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট ও মধুপুর বনে প্রাকৃতিকভাবে
জন্মানো গাছ। বিভিন্ন আঞ্চলিক উদ্ভিদ উদ্যান এবং সংরক্ষিত স্থানগুলোয় অধিকসংখ্যক নাইচিচি
উদাল লাগানো প্রয়োজন।