Loading..

খবর-দার

৩১ মে, ২০২২ ০৮:১৭ পূর্বাহ্ণ

আগামী বছর থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের চূড়ান্ত অনুমোদন

শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ব্যবস্থায় বড় রকমের পরিবর্তন এনে প্রণয়ন করা প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। প্রাথমিকের, মাধ্যমিকের, কারিগরির ও মাদরাসা শিক্ষার নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আলোচনা করে এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ফলে, আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ের ৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং চলছে। আর ৬৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগস্ট মাস থেকে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু হচ্ছে।

সোমবার (৩০ মে) বিকেলে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে নতুন শিক্ষাক্রম অনুমোদনের জন্য সভায় শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসিসি) ও জাতীয় শিক্ষা বিষয়ক উপেদষ্টা কমিটির যৌথ অংশগ্রহণে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সভা শেষে শিক্ষা প্রশাসনের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।

একজন কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ের কমিটির সবার সামনে  প্রাথমিকের, মাধ্যমিকের, কারিগরির ও মাদরাসা শিক্ষার নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আলোচনা করে সেগুলো বাস্তবায়নে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে পাইলটিং চলছে। প্রাথমিকের পাইলটিংও শুরু হবে। পাইলটিং নিয়ে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এসব বিষয় নিয়ে সার্বিক আলোচনার পর নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, অনুমোদন পাওয়ায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক (ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ), মাদরাসা ও কারিগরির নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা যাবে। আর শিক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরেজমিনে পাইলটিং চলা প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছ থেকে মতামত জানার বিষয়েও সভায় আলোচনা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আমূল পরিবর্তন হবে। শিশুদের বিকাশে এ শিক্ষাক্রম সহায়ক হবে। বাচ্চারা নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে খুব খুশি।‘তবে, শিক্ষকতার ধরণ কিছুটা বদলে যাবে। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের নতুন করে শিক্ষকতা শিখতে হবে’, যোগ করেন এ কর্মকর্তা। 

জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, নতুন কারিকুলামের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। এখন এটি বাস্তবায়নে আর কোন বাঁধা নেই। আগামী বছর থেকে ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়ন করা হবে।

সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলামসহ কমিটির সদস্যরা অংশ নেন।

জানা গেছে, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দঘন শিক্ষা নিশ্চিত করতে এ শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয়েছে। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ম ও ২য় শ্রেণি এবং ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হবে। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণি এবং ৮ম ও ৯ম শ্রেণি এ শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। এ শিক্ষক্রমের আওতায় ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে নিয়ে আসা হবে। নতুন কারিকুলামে মাধ্যমিক পর্যায়ে অর্থাৎ নবম ও দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগের বিভাজন থাকছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এ শিক্ষাক্রমে অনুমোদন দিয়েছেন।

কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন কারিকুলামে শিক্ষা হবে আনন্দঘন। এ কারিকুলামে মুখস্ত জ্ঞাননির্ভর শিক্ষা থেকে সরে এসে অভিজ্ঞতানির্ভর শিক্ষায় প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। প্রাক প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিক শিখন নিশ্চিত করা হচ্ছে। পরীক্ষার বিষয় ও পাঠ্যপুস্তকের চাপ কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে নিজেদের মত কিছুটা সময় কাটাতে পারে তা নিশ্চিত করতেই নতুন কারিকুলাম। এতে শিক্ষাকে সহজ করা হচ্ছে।

নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের দক্ষতার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের কারিকুলামে একটি কারিগরি বিষয় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের নানা দক্ষতা অর্জনের সুযোগ থাকছে। নতুন কারিকুলামে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়া নতুন সিলেবাসে করোনা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। অন্যদিকে নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতি, শিখন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরীক্ষানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা থেকে সরে এসে বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে এ কারিকুলাম করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

নতুন কারিকুলাম অনুসারে প্রাথমিকে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়েই ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। কোন পরীক্ষা থাকবে না। আর চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে গিয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ। আর ৪০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে ক্লাস শেষে পরীক্ষার মাধ্যমে যেটি সামষ্টিক মূল্যায়ন বলা হচ্ছে। ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণিতে বিদ্যালয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ এবং ৪০ শতাংশ হবে সামষ্টিক মূল্যায়ন। নবম ও দশম শ্রেণিতে কয়েকটি বিষয়ে শিখনকালে অর্ধেক মূল্যায়ন হবে এবং বাকি অর্ধেক সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ৩০ ভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং ৭০ ভাগ সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে।

অভিজ্ঞতানির্ভর শিক্ষা পদ্ধতি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবান্ধব হবে বলে মনে করছেন শিক্ষা প্রশাসনের কর্তারা। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সদিচ্ছাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। শিক্ষাক্রম তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্ধতিগত পরিবর্তন হলেও নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সদিচ্ছা থাকলে ছোটখাটো অসুবিধা হলেও তাদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে না। শিক্ষক ও শিক্ষাবিদদের মতে, এ কারিকুলাম বাস্তবায়ন হলে ‘মধ্যযুগীয়’ শিক্ষাব্যবস্থার অবসান হবে এবং বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থার মহাসড়কে নতুন প্রজন্ম প্রবেশ করবে।