Loading..

খবর-দার

৩০ জুন, ২০২২ ১২:৫২ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষক হত্যায় অভিযুক্ত ছাত্রের বয়স উনিশের বেশি, জেডিসি পাস

শিক্ষক হত্যায় অভিযুক্ত ছাত্রের বয়স উনিশের বেশি, জেডিসি পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক | 
  

সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ‍ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতু উত্তরার তানজিমুল উম্মাহ আলিম মাদরাসা থেকে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে জেডিসি পাস করে। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয় সাভারের আশুলিয়ার চিত্রশাইলে হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে। জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার নিবন্ধন অনুযায়ী তার জন্ম ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই জানুয়ারি। সে হিসেব তার বয়স ১৯ বছর পাঁচ মাসের বেশি। শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র জাতীয় পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তার হাতে আসা নিবন্ধন কার্ড অনুযায়ী তার নাম আশরাফুল ইসলাম, পিতা মো. উজ্জল।

বুধবার গাজীপুর থেকে জিতুকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। শ্রীপুরের নগরহাওলা গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার বিষয়টি এদিন সন্ধ্যায় নিশ্চিত করেছেন র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এর আগে এ হত্যা মামলায় জিতুর বাবা উজ্জলের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। 

এদিকে একাধিক সূত্রমতে, কম বয়স দেখিয়ে জিতু রক্ষার চেষ্টা করছেন তার আত্মীয়রা। এমন অভিযোগ উঠেছে। 

স্থানীয়রা জানান, অভিযুক্ত শিক্ষার্থী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। জিতু হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাজী হজরত আলীর নাতি (ভাগ্নের ছেলে)।  

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত শিক্ষার্থী এলাকার কিশোরদের নিয়ে একটি 'কিশোর গ্যাং' পরিচালনা করে। মেয়েদের উত্যক্ত করার অভিযোগে কলেজে একাধিকবার তার বিচারও হয়েছে।

হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা বলছেন, সে ভালো ছাত্র না। তার আচরণও ভালো না। সব সময় প্রভাব খাটাতো। কেউ তার কথা না শুনলে নানাভাবে শাস্তি দিতো। উৎপল স্যার এগুলো দেখে তাকে অনেকবার প্রিন্সিপালের কাছে নিয়ে গেছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, 'সে দশম শ্রেণিতে পড়লেও একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে উত্যক্ত করতো। এ নিয়ে উৎপল স্যার প্রিন্সিপাল স্যারসহ তার পরিবারের কাছে অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় স্কুল কমিটির সভাপতি হাজী ইউনুস আলীর ছেলে সুমন তাকে বকা দেন। সুমন সম্পর্কে তার মামা। এতেই রাগান্বিত হয়ে সে স্যারকে হত্যা করেছে।'

একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, স্কুলের শিক্ষার্থীদের চেয়ে বাইরের ছেলেদের সঙ্গে বেশি সময় চলতো সে। তার নেতৃত্বে একটি 'কিশোর গ্যাং' চলে। তাদের গ্যাংয়ের সদস্যদের বয়স ১৭-১৮ এর মধ্যে।

তারা আরও জানায়, স্কুল কমিটির পরিচালক মো. সুমন অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বাবার মামাতো ভাই। সেই ক্ষমতা দেখিয়েই সে এত অপরাধ করে। তার অপকর্মে অনেকবার বিচারের জন্য বসা হলেও অজানা কারণে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের স্কুল ও কলেজে ৫৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। উৎপল স্যার এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতেন। ঘটনার সময় আমি ছিলাম না। তবে ঘটনাটি শুনে দ্রুত স্কুলে আসি এবং গত দুই দিন তার সঙ্গে হাসপাতালেই ছিলাম। স্যারের অপারেশনে ৩০ ব্যাগ রক্ত লেগেছে। তবুও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।'

'অভিযুক্ত শিক্ষার্থী একদমই ভালো ছেলে না। উৎপল স্যারই অনেক সময় আমার কাছে তাকে ধরে আনতেন। আমিসহ বাকি স্যাররা বিচার করতাম। এসব নিয়ে তার অভিভাবককেও অনেকবার বলেছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি', বলেন তিনি।

গত ২৫ জুন শনিবার দুপুরে চিত্রশাইলে হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ওই ছাত্র ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারের ওপর। প্রথমে ওই ছাত্র শিক্ষকের মাথায় আঘাত করে এবং পরে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। এ ছাড়া স্ট্যাম্পের সূচালো অংশ দিয়ে পেটের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে।

গুরুতর আহত অবস্থায় উৎপলকে প্রথমে আশুলিয়া নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেওয়া হয়। আঘাত গুরুতর হওয়ায় পরে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার ভোরে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক উৎপল সরকার একইসঙ্গে ওই প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি।

প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি এ কলেজে অধ্যাপনা করে আসছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে তিনি এই কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার এঙ্গেলদানি গ্রামে। পরিবার নিয়ে তিনি ঢাকার মিরপুরে বসবাস করতেন।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নগরহাওলা গ্রাম থেকে জিতুকে আমরা গ্রেফতার করেছি। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।

আশুলিয়া থানার ওসি (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম বুধবার দুপুরে জানান, অভিযুক্ত জিতুর বাবা উজ্জ্বলকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। তার রিমান্ড মঞ্জুর হলে বিস্তর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং জিতু কোথায় আছে সে বিষয়ে তথ্য মিলতে পারে।