Loading..

খবর-দার

০২ জুলাই, ২০২২ ০৭:৫৫ অপরাহ্ণ

যে ভাবে প্রতিষ্ঠানের ই-মেইলে নিজস্ব ভয়েস এবং টোন তৈরি করবেন

যেভাবে প্রতিষ্ঠানের ই-মেইলের নিজস্ব ভয়েস এবং টোন তৈরি করবেন

 

অনেক বড় প্রতিষ্ঠানে ই-মেইলের কাজ সামলানোর জন্য একাধিক কর্মী রাখা হয়। আপনার প্রতিষ্ঠানও যদি এতটা বড় হয়ে থাকে, তাহলে এখন নিজের প্রতিষ্ঠানের ই-মেইল লেখার নিয়মনীতি ঠিক করা উচিৎ।  ই-মেইল লেখার সময় এর ভয়েস এবং টোন কেমন হবে, তার একটা গাইডলাইন বা নীতিমালা তৈরি করার কথা ভাবতে পারেন। 


এতে আপনার প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক রুচি কেমন, সেটা বোঝা যাবে। আপনারা কীভাবে গ্রাহকদের সাথে কথা বলেন, নিজেদের কথা অনলাইনে প্রচার করেন বা পণ্য বা সেবা নিয়ে প্রচারণা চালান—এ সবই এর সাথে সম্পর্কিত। সবগুলি বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে তা অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে। তাই এখানে কেবল ই-মেইল নিয়েই আলোচনা করা হচ্ছে।

.


# কেন ই-মেইলে আপনার প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কণ্ঠ (ভয়েস) এবং স্বর (টোন) থাকা প্রয়োজন


আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাহকদের যেসব ই-মেইল পাঠানো হয়, সেগুলিকে আপনার প্রতিষ্ঠানের “ব্র্যান্ড ভয়েস” হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন। প্রতিবার কারো সাথে যোগাযোগের সময়, এমনকি রুটিন হিসেবে যোগাযোগ করার সময়ও তা আপনার প্রতিষ্ঠানের পরিচয় বহন করে।


অনেকে ভাবতে পারেন, ই-মেইলের গুরুত্ব ব্লগ বা বিজ্ঞাপনে যাওয়া লেখার চেয়ে কম। কিন্ত প্রতিষ্ঠানের সুনাম তৈরি করার জন্য ই-মেইলের প্রয়োজনীয়তা কোনো অংশে কম নয়। আর এজন্যই প্রতিষ্ঠানের ই-মেইলে কেমন ভাষা ব্যবহার করতে হবে, তার একটি গাইড বা নীতিমালা বিশেষভাবে প্রয়োজন। কারণ এতে করে গ্রাহকদের সাথে যে কারণেই যোগাযোগ করা হোক, তারা একই ধরনের ইতিবাচক অভিজ্ঞতা পেতে পারে।

.


# ভয়েস এবং টোন গাইড যেভাবে তৈরি করবেন


কাজটি করা মোটেই কঠিন কিছু না। কর্মীদের সবার অংশগ্রহণে আপনি বেশ সহজেই কোম্পানির ভয়েস এবং টোন খুঁজে পেতে পারেন। যেসব ধাপ অনুসরণ করে তা করবেন:


.

১. ভয়েস এবং টোনের মধ্যে পার্থক্য জানুন


ভয়েস আর টোন, এই দুইটা বিষয়ের সংজ্ঞা দিয়েই কাজটা শুরু করা উচিত। কারণ, এদের অর্থ কাছাকাছি হওয়ার কারণে অনেক সময় বুঝতে ভুল হতে পারে।


ক. ভয়েস


“ভয়েস” হচ্ছে আপনার কোম্পানির কালচার বা সংস্কৃতি কীভাবে প্রকাশ করছেন, সেটা। আপনার প্রতিষ্ঠানের কাজের ধরন আনুষ্ঠানিক বা ফর্মাল হতে পারে। অথবা ক্যাজুয়াল বা কম আনুষ্ঠানিক হতে পারে আপনার কাজের ধরন। গ্রাহকদের সাথে কী আপনারা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ইন্সুরেন্স-এর মতো সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা বলেন?


নাকি আপনারা ভ্রমণ কিংবা পোষা প্রাণীর মতো মজার সব বিষয় নিয়ে কথা বলেন?


সামগ্রিকভাবে এ সকল বিষয়ই আপনার প্রতিষ্ঠানের ভয়েসের অংশ। বিষয়টা সহজ করার জন্য আপনার প্রতিষ্ঠানের পার্সোনালিটি বা বৈশিষ্ট্য গ্রাহকদের বুঝিয়ে বলতে হবে। এজন্য ৩ বা ৫ শব্দের মধ্যে ছোট করে বিষয়টা লিখতে পারেন। 


আপনি যে গাইড তৈরি করতে চান, সেটার প্রথম ধাপ হচ্ছে ভয়েস কেমন হবে, তার লিস্ট তৈরি করা। যেমন ধরা যাক, আপনার ব্র্যান্ড এবং প্রতিষ্ঠান চায় তাদের সকল যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রাহকদেরকে প্রাধান্য দিতে। সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের ভয়েস হতে হবে:


• পজিটিভ বা ইতিবাচক

• সার্বজনীন বা সহজে সবার বোঝার জন্য

• সহানুভূতিশীল

• সক্রিয়

• ব্যক্তিসুলভ, যাতে মনে হয় কোনো মানুষ কথা বলছে


খ. টোন

 

টোন হচ্ছে ভয়েস-এর পরবর্তী উপাদান। কোম্পানির ভয়েস যেকোনো পরিস্থিতিতে একই ধরনের হতে হবে। তবে প্রতিটি ই-মেইলের টোন আলাদা হতে পারে। ই-মেইলের মাধ্যমে কী বলা হচ্ছে, তার ওপর এটা নির্ভর করে।


ধরা যাক, আপনি একটা সফটওয়্যার কোম্পানি চালান। আপনার কোম্পানির ভয়েস-এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আপনারা বন্ধুসুলভ এবং কোনো ভণিতা ছাড়া সরাসরি কথা বলেন। একইসাথে আপনারা পণ্য নিয়ে গ্রাহকদের বিভিন্ন বিষয় জানাতে আগ্রহী। এমন ভয়েস ব্যবহার করে আপনারা বিভিন্ন টোনের মেইল লিখতে পারেন। যেমন:

• সোশাল মিডিয়ার ভালো রিভিউ দেয়ার জন্য কাস্টমারদের ধন্যবাদ জানিয়ে লেখা ই-মেইল।

• রিফান্ড পলিসি অনুযায়ী গ্রাহককে রিফান্ড করা যাবে না, সেটা জানিয়ে ই-মেইল।


প্রথম ই-মেইলের ভাষা বেশ স্বতস্ফূর্ত এবং খোশমেজাজের হতে পারে। তবে দ্বিতীয় মেইল হতে হবে সিরিয়াস ভাষায় লেখা। কিন্ত দুটি মেইলই বন্ধুত্বপূর্ণ, ভণিতা বিহীন এবং শিক্ষামূলক হতে পারে। এভাবে আপনি প্রতিষ্ঠানের ভয়েস ঠিক রেখে বিভিন্ন অবস্থায় টোন পরিবর্তন করে ই-মেইল পাঠাতে পারবেন।

.


২. মেইল যাদেরকে পাঠাচ্ছেন, তাদেরকে বুঝুন


প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ভয়েস এবং টোন তৈরি করার এই প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ হলো অপর প্রান্তের গ্রাহকদের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করা। যাদের কাছে ই-মেইলগুলি যাচ্ছে, আপনাকে আগে তাদের বুঝতে হবে। যদি আপনার প্রতিষ্ঠানের বিশেষ ধরনের কোনো গ্রাহক থাকে, তবে তাদের কথা মাথায় রাখুন। সেজন্য এই গ্রাহকদের ব্যাপারে তথ্য জানাটা এই ধাপের জন্য দারুণ একটা উপায় হতে পারে।

.


৩. কোন নীতিতে কাস্টমার সার্ভিস চলবে তা ঠিক করুন


সবার অংশগ্রহণে এই কাজটি বেশ মজার হয়ে উঠতে পারে। এই পর্যায়ে আপনার কর্মীরা কাস্টমার সার্ভিস দেয়ার ক্ষেত্রে নিজেদেরকে কীভাবে মূল্যায়ন করে, সেটা খুঁজে বের করবেন।


এজন্য কর্মীদের সবাইকে নিয়ে একসাথে কোনো রুমে বসতে পারেন। এরপর সবার হাতে লেখার জন্য কাগজ আর কলম দিলেন। আর রিমোট ওয়ার্কার, বা দূর থেকে যারা কাজ করে, তাদের জন্য জুম মিটিংয়ের ব্যবস্থা করলেন এবং একটা গুগল ডকের মতো অনলাইন কোনো ডকুমেন্ট খুলে দিলেন। এবার পুরো গ্রুপকে জিজ্ঞেস করলেন এই প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক হিসেবে তাদের অভিজ্ঞতা কেমন হতে পারে, সেটা লিখতে।


কীসের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানের কাস্টমার সার্ভিসকে তাদের কাছে ভালো মনে হয়? একজন ভালো কাস্টমার সার্ভিস এজেন্টের কী গুণাবলী থাকে? এসব প্রশ্নের উত্তর লিখতে বলুন। 


উত্তরগুলি যেন এক শব্দের বা অন্তত সংক্ষিপ্ত হয়, সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে বলবেন। এবার সেই লেখাগুলি দেয়ালে সেঁটে দিন অথবা গুগল ডক হলে সেটার প্রাইভেসি ওপেন করে দিন, যাতে সবাই দেখতে পারে।


এবার দলের সবার সাথে এই নোটগুলি নিয়ে বসুন। প্রথমে একই ধরনের আইডিয়াগুলি একসাথে জড়ো করুন। এভাবে আস্তে আস্তে বের হয়ে আসবে কোন আইডিয়াগুলি সবচেয়ে বেশি মানুষ লিখেছে। 


সেখান থেকে আপনার কর্মীরা কাস্টমার সার্ভিসের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলিতে গুরুত্ব দিতে হবে সেটা বুঝতে পারবে। এসব বিষয়ের সাথে গ্রাহকদের চাহিদাগুলি মিলিয়ে দেখুন। আর এভাবেই প্রতিষ্ঠানের ভয়েস এবং টোন তৈরি করার শেষ ধাপে পৌঁছে যাবেন। 

সৌঃ সি বি