Loading..

ম্যাগাজিন

০৩ জুলাই, ২০২২ ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ

কর্মক্ষেত্রে সাফল্য ও কমিউনিকেশন স্কিল

কর্মক্ষেত্রে সাফল্য কমিউনিকেশন স্কিল

ভালো কমিউনিকেশন স্কিল থাকা জীবনের সব জায়গায়ই সুবিধার, বিশেষ করে কাজের জায়গায়। কাজের জায়গায় যে লিডাররা সফল হন তাদের কমিউনিকেশনে একটা পরিষ্কার বোঝাপড়া থাকে। তারা কখনো কর্মীদের গল্প শুনিয়ে উদ্দীপ্ত করতে পারেন আবার কখনো পরিষ্কারভাবে জানাতে পারেন আসলে তারা তাদের কাছ থেকে কী চাচ্ছেন।

কমিউনিকেশন স্কিল দুইটা বড় কাজ করে। প্রথমত ইতিবাচক ধারণা তৈরি করে, দ্বিতীয়ত নেতৃত্ব গুণ বাড়ায়।

ধরুন আপনি একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গেছেন, যে ঠিকানা দেয়া আছে সে জায়গায় গিয়ে ১৫ মিনিট ঘোরাঘুরির পর দেখলেন অফিসটা একটা গলিতে, অফিসের দরজায় ছোট করে বাড়ির নাম্বার লেখা, আশেপাশে কোনো সাইনবোর্ড দিয়ে অফিসের অবস্থান দেখিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়নি। এই অভিজ্ঞতা আপনাকে অফিসটি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দিবে। ইন্টারভিউ নেওয়ার সময় ইন্টারভিউয়ার যদি পরিষ্কারভাবে চাকুরি প্রত্যাশীকে তার অফিসের পরিবেশ, কাজের ধরন এসব জানান, তাতে চাকরি প্রত্যাশীর প্রত্যাশা কিংবা সামর্থের সাথে তা না বনলেও চাকরি প্রত্যাশী একটা ইতিবাচক অভিজ্ঞতা পান।

আবার ধরুন একজন লিডার যখন সহজভাবে কোম্পানির লক্ষ্য উদ্দেশ্য জানাতে পারেন, তখন অন্যেরা তাকে সেই জাহাজের ক্যাপ্টেন ভাবতে পারে, যাকে তারা অনুসরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।এই হচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্য, আমরা এই এই ভাবে ব্যাপারটা সফল করবো”, কোনো লিডার যখন এইভাবে বলতে পারেন তখন সকলের একযোগে কাজে নামা সহজ হয়।

এর আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, এতে প্রত্যেকেই নিজের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন থাকবে। কর্মীরা জানতে পারছে কীভাবে তারা কাজ এগিয়ে নিচ্ছে এবং লিডারের যে উদ্দেশ্য তা কীভাবে তারা সফল করছে।

নিচের লেখাটি একটি ভালো টিম গঠনে আপনাকে সহযোগিতা করবে। আপনার নিজের ব্যবসা হোক, বা আপনি ১০০ সদস্যের আইটি টিমের সুপারভাইজার কিংবা ম্যানেজার হোন যদি ভালো কমিউনিকেশন স্কিলের প্রয়োগ ঘটাতে পারেন তাহলে নিশ্চিত থাকুন আপনি সবচেয়ে ভালো টিম বানাতে পারবেন।

কীভাবে কমিউনিকেশন স্কিল বাড়াবেন? কমিউনিকেশন স্কিল বাড়ানোর টি উপায়।
.

#
. অন্যকে সম্পূর্ণ ভাবে শুনুন

মনোযোগী শ্রোতাদের কাছে আপনি যেকোনো প্রশ্নের অর্থপূর্ণ উত্তর আশা করতে পারেন। মনোযোগ দিয়ে শোনার অভ্যাস নেই মানে আপনার নিজের কমিউনিকেশন স্কিল নেই। আপনি কথা শেষ করা মাত্র যে মুখ খুলে ফেলছে, আপনার কোনো মতেই তার মত হওয়া যাবে না। আপনি ধরে নিতে পারেন এরকম মানুষেরা আপনার অর্ধেক কথাই শোনে নাই। তাই আপনি আশা করতে পারেন তাদের অর্ধেক কথাই হবে অপ্রাসঙ্গিক।

অন্যকে সম্পূর্ণ ভাবে শুনুন এবং কিছু সময়ের নীরব থাকাতে স্বচ্ছন্দ থাকুন। আপনার শোনার ক্ষমতা বাড়ানোর ব্যাপারটায় সবচেয়ে আগে এবং সবচেয়ে বেশি সময় দিন।
.

#
. শ্রোতা বা অডিয়েন্স কারা বোঝার চেষ্টা করুন

আপনি কার সাথে কথা বলছেন সেটা জানা আরেকটা দরকারি বিষয়। আপনার বাচ্চার সাথে আপনি যেভাবে কমিউনিকেট করেন, অবশ্যই সেটা আপনার ম্যানেজারের সাথে করা কমিউনিকেশনের চেয়ে আলাদা। তার মানে এই না যে আপনি একেকজনের সামনে আলাদা মানুষ হয়ে যাচ্ছেন। বরং ব্যাপারটা অন্যরকম।

আপনার স্ত্রীর সাথে আপনি কথা বলার সময় যে শব্দগুলি ব্যবহার করছেন বা যে ভঙ্গিতে (বডি ল্যাঙ্গুয়েজে) কথা বলছেন, ভাবুন তো আপনার বসের সাথেও আপনি সেই শব্দ ব্যবহার করছেন কিনা, সেই ভঙ্গিতে কথা বলছেন কিনা?

আপনাকে অডিয়েন্স বুঝে তার সাথে যায় এমন একটা কমিউনিকেশন নিশ্চিত করতে হবে।
.

#
. আলোচনা ছোট করুন

অনেকেই দেখবেন, কথা বলতে শুরু করলে বলতেই থাকে। প্রশ্ন করলে হয়ত এমন ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কিছু একটা উত্তর দিল তারা যে আপনার মনে হলো আগেই ভালো বুঝতেন। এরকম কথাবার্তা, অস্পষ্ট উত্তর দেওয়া ক্ষতিকর আচরণ। কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে একদম নিশ্চিত দরকারি তথ্যটা দিন। তার মানে এই না যে আপনি অন্যান্য হালকা বিষয়ে কথা বলতে পারবেন না। মূল ব্যাপার হচ্ছে আপনার কথার তোড়ে যেন কেউ কনফিউজড হয়ে ফেরত না যায়।
.

#
. ইফেক্টিভ ওভার কমিউনিকেশন নিশ্চিত করুন

আগের পয়েন্টে আলোচনা যেখানে ছোট করতে বলা হয়েছে এটাকে তার উল্টা কিছু মনে হতে পারে। কিন্তু আসলে তা না, ওভার কমিউনিকেট বলতে বোঝায়, আপনি যার সাথে তথ্য শেয়ার করছেন তিনি যে আপনার বক্তব্যের দরকারি অংশটা বুঝতে পারছেন সেটা নিশ্চিত করা।

যেমন ধরুন, কোনো কোম্পানি তার কর্মচারীদের ছেলে-মেয়ের পড়াশুনার জন্য বৃত্তির বা স্কলারশিপের আবেদন গ্রহণ করেছে নভেম্বর মাসের থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট (অ্যামপ্লয়ি ওয়েলফেয়ার ডিপার্টমেন্ট) সব কর্মচারীকে অক্টোবর মাসের এক তারিখে মেইল করবে। সেখানে জানাবে কবে থেকে আবেদন গ্রহণ করা শুরু হবে, আবেদনের শেষ দিন কবে এবং এই বছরে স্কলারশিপের নিয়মে কোনো পরিবর্তন আসছে কি না। মেইলের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ফোন নাম্বার এবং ইমেইল অ্যাড্রেস দেয়া থাকবে। এর ১৫ দিন পর মোটামুটি একই তথ্যের মেইল ফলো আপ হিসেবে পাঠানো হবে। আবেদন গ্রহণ শুরুর এক সপ্তাহ আগে আবার মেইল করা হবে, আবেদন শুরুর আগের দিনওআগামীকাল থেকে আবেদন গ্রহণ শুরু হচ্ছেএটা জানিয়ে মেইল করা হবে। আবেদন চলাকালীন, “আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছেএবংআবেদন গ্রহণ শেষ হচ্ছেএরকম দুটি মেইল করা হবে। খুবই কম তথ্য, যেটা মূলত বার বার মনে করিয়ে দেয়াএটাই ইফেক্টিভ ওভার কমিউনিকেশন।
.

#
. বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ঠিক করুন

শেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ। কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব কমবেশি সবাই শুনে থাকবেন। আর খুব দরকারি। অনেকেই কথা বলার সময় গা এলিয়ে বুকে দুই হাত বেঁধে রাখেন। মনে রাখবেন বুকে হাত বাঁধা অনেক ক্ষেত্রে অসম্মতি বোঝায়। তাই এটা না করা ভালো। কাজের সময় ওপেন বডি ল্যাঙ্গুয়েজ রাখা ভালো। মানে হাত বুকে না বাঁধা, স্বাভাবিক থাকা এবং কথা বলার সময় চোখে চোখ রেখে কথা বলা।

যখন অন্যের সামনে কথা বলবেন সোজা দাঁড়িয়ে, স্পষ্ট স্বরে কথা বলুন, এটাতে আপনার আত্মবিশ্বাস বোঝা যাবে।

.

কমিউনিকেশন স্কিল অনেকভাবেই বাড়ানো যায়। এটা নিয়ে ভাবতে গেলে হয়ত আপনি নিজেই অনেক ভালো ভালো পদ্ধতি বা ধরন আবিষ্কার করতে ফেলতে পারবেন। তাছাড়া, অনেক সময় কমিউনিকেশনের ধরন কী হবে তা নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের অফিস বা কর্মক্ষেত্রে আছেন তার ওপর। ফলে জিনিসটা যতটা জানার, ততটা নিজেকে ওই জায়গায় রেখে বোঝারও। শেষ পর্যন্ত আপনাকেই বুঝে ঠিক করতে হবে, আপনার জন্যে কোনটা ভালো, আপনার জায়গা থেকে কার সঙ্গে কোন পদ্ধতিতে কমিউনিকেট করলে বিষয়টা লাভজনক হবে।

আপনার নিজস্ব এমন কোনো পদ্ধতি বা পলিসি আছে কি যেটা কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে সবসময় মেনে চলেন?

সৌঃ সি বি 

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি