Loading..

ম্যাগাজিন

০৩ জুলাই, ২০২২ ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ

কার্যকর বিজনেস প্ল্যান তৈরি করবেন যেভাবে

কার্যকর বিজনেস প্ল্যান তৈরি করবেন যেভাবে

আপনি হয়ত ব্যবসা শুরু করেছেন বা শুরু করার কথা ভাবছেন, সেটাতে সফল হতে হলে একটা প্ল্যান থাকা দরকার। নামি-দামি কোনো বিজনেস ডিগ্রি লাগে না এর জন্য। দূরদৃষ্টি, স্থির সংকল্প, সাংগঠনিক দক্ষতা আর কঠোর পরিশ্রম হলেই আপনি যেকোনো ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করতে পারবেন। ব্যবসাটাও ঠিক তাই।

বাস্তবায়ন করা সম্ভব এমন একটা বিজনেস প্ল্যান তৈরির মধ্যে দিয়ে ব্যবসার কাজ শুরু করা ভালো। একটা কার্যকর বিজনেস প্ল্যান তৈরির ক্ষেত্রে ২০ টি কর্যকরী টিপস।

#
. বিজনেস প্ল্যান মোটেই স্কুল অ্যাসাইনমেন্ট না

স্কুল অ্যাসাইনমেন্টে যেমন আমাদের পাতা ভর্তি করার একটা তাড়া থাকে, বিজনেস প্ল্যানের ক্ষেত্রে তা থাকা যাবে না। প্রথম দিন থেকেই আপনার চিন্তা হতে হবে কীভাবে ব্যবসায় টিকবেন, কীভাবে এই ব্যবসাকে শূন্য থেকে একটা বাস্তব রূপ দেবেন, কীভাবে মুনাফা করবেন ইত্যাদি।
.

#
. কীভাবে লিখবেন তার থেকে কী লিখলেন সেটাতে নজর দিন

ফরমেট নিয়ে বেশি চিন্তা করবেন না। কী লিখলেন সেটাই আসল। আধা ঘণ্টা ইন্টারনেটে বিজনেস প্ল্যান লেখার জন্য টেম্প্লেট খুঁজলেন মানে পুরা সময়টাই নষ্ট। আলাদা ভাবে দেখতে সুন্দর টেম্পলেট কিংবা প্রোগ্রামের এখানে দরকার নেই। ওয়ার্ড ফাইলই যথেষ্ট।

গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনি বাজারজাত করা সম্ভব এমন প্রোডাক্ট ঠিক করছেন, লাভের একটা ইফেক্টিভ এবং যৌক্তিক হিসাব করছেন, ব্যয়ের ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা রাখছেন এবং বাজারের প্রতিযোগিতা ব্যবসা শুরুর ঝুঁকি সম্পর্কে আপনার ধারণা আছে।
.

#
. বেশি কঠিন করবেন না

মূল জিনিসগুলিতে থাকুন। ধরুন আপনাকে কেউ জিজ্ঞেস করল আপনি কী করতে চাচ্ছেন বা কার জন্য করতে চাছেনসেটা মিনিটে বলুন। কিংবা আপনার বিজনেস প্ল্যানের সারাংশ পাতার মধ্যে শেষ করুন।

আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে কোন জায়গাগুলি তা স্পষ্ট করে লিখুন। পাতার পর পাতা মার্কেট অ্যানালিসিস দিয়ে আপনার বিজনেস স্ট্র্যাটিজি স্পষ্ট হয় না। এসব বরং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসকীভাবে টাকা আসবেতা থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেয়।
.

#
. আপনি কী বেচবেন, কততে বেচবেন, কার কাছে বেচবেন?

একটা ভালো বিজনেস প্ল্যানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে এটা। আপনি কী বেচবেন, কত টাকায় কী পরিমাণ বেচবেন, কে কিনবে, কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি কিংবা কোম্পানি আছে কিনা যারা এটা কিনতে চাইতে পারে। আপনি এখন কীভাবে টাকা আয় করবেন এটা থেকে, ভবিষ্যতে কীভাবে লাভ করবেনএসব প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে আপনার ব্যবসাটা শুরু করা উচিৎ হবে না।
.

#
. বাস্তববাদী হন

বিশেষ করে আপনি এটা কীভাবে করতে যাচ্ছেন, কোন আইডিয়াটা আপনাকে সেখানে নিয়ে যাবে আর কীভাবে নিয়ে যাবে এটা ঠিক করতে পারা দরকার। খুব দুঃসাহসী লক্ষ্য থাকা মোটেই সমস্যা না। কিন্তু আপনি সেটা কীভাবে অর্জন করবেন তার একটা বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা থাকতে হবে। লক্ষ্য যত বড় হবে সেটাকে বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা তত বেশি কৌশলী হতে হবে।

যদি নির্দিষ্ট যৌক্তিক কোনো অ্যাকশন প্ল্যান ঠিক করতে না পারেন, তাহলে আপনার লক্ষ্য পূরণ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
.

#
. কেবল গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলি রাখুন

বিজনেস প্ল্যানে স্পষ্ট হোন। বিজনেস প্ল্যানের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, যেটা দিয়ে টাকা আসবে এবং আপনার ব্যবসা ঠিক থাকবে। কী, কার জন্য, কীভাবে, কতটুকু তৈরি করবেন, কোন প্রক্রিয়ায় তৈরি করবেন, এবং কাদের দিয়ে তৈরি করাবেন, বাজারে প্রতিযোগী কারা, ঝুঁকি এসব বিষয় ঠিক করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
.

#
. রিসার্চ করুন এবং সেটাকে আত্মস্থ করুন

যে বাজারে ঢুকতে চাচ্ছেন সেটা নিয়ে রিসার্চ করুন প্রথমত। এই মার্কেটে এখন টপে কারা আছে জানুন। ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশন সেটা জানুন। এসব রিসার্চ না করলে কোন কোন দিক থেকে বাধা আসবে সেটা আন্দাজ করতে পারবেন না।
.

#
. আপনার প্রতিযোগী কারা

প্রতিযোগী বুঝতে পারাটা খুব দরকারি। অনেক সময় অন্য কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানি না, একটা টেকনোলজিও আপনার প্রতিযোগী হতে পারে। যেটা হয়ত বাজারে এলে আপনার ব্যবসা টিকবে না। এছাড়াও ইন্টারনেটে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীদের খোঁজ নিন। পছন্দ করেন আর না করেন বর্তমান সময় আপনাকে আন্তর্জাতিক বাজারের কথা মাথায় রেখেই ব্যবসা করতে হবে।
.

#
. অনুমানগুলির তালিকা করুন

আপনি যখন ব্যবসার আর্থিক হিসাবগুলি করতে যাবেন অনুমানগুলিও লিখতে হবে। আপনি আয়-ব্যয় কোন কোন অনুমানের ভিত্তিতে করছেন সেগুলি অ্যাকশন প্ল্যানের সাথে মিলিয়ে নিন। ধরুন আপনি শ্রমিকের পারিশ্রমিক ধরেছেন বর্তমান বাজার দরেযেটা আপনার অনুমান। এখন ব্যবসা শুরুর পর সরকার থেকে সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করে দিতে পারে। এরকম কোনো ঘটনা যদি ঘটে আপনার ব্যয়ের উপর কেমন চাপ পড়বে সে বিষয়ে আপনার পরিষ্কার ধারণা থাকবে।
.

#
১০. লেজারের মত ফোকাস রাখেন

যদি একদম ফোকাসড থাকেন আপনার পক্ষে যেকোনো ইন্ডাস্ট্রিতে সফল হওয়া সম্ভব হবে। আপনার কোন প্রোডাক্ট বাজারে ভালো করছে, কোনটার মার্কেট লিডার হওয়ার সম্ভাবনা আছে ইত্যাদি আপনার মাথায় থাকতে হবে।
.

#
১১. সময় ধরে লক্ষ্য ঠিক করুন

কোটিপতি হলেন, কিংবা বেশ চলে যাচ্ছেএগুলি কোনো ব্যবসায়িক লক্ষ্য না। কতদিনে কী অর্জন করতে চান, ব্যবসাকে কোন জায়গায় নিতে চান সেটাই ব্যবসার লক্ষ্য।
.

#
১২. অ্যাকশন প্ল্যানের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট হোন

কোন সময়ে কোনটা অর্জন করতে চান সেটার হিসাব রাখুন। বেশিরভাগ ব্যবসা প্রথম বছরেই ভালো করতে শুরু করে যদি শুরু থেকেই অ্যাকশন প্ল্যান করে নেওয়া হয়। আপনি ঠিক করুন প্রথম মাসে, প্রথম তিন মাসে কিংবা বছরে আপনি কতটুকু অর্জন করতে চান। এরপর এই পদ্ধতিতে আগাতে থাকুন।
.

#
১৩. অ্যাকশন প্ল্যানকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করুন

অ্যাকশন প্ল্যানকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে ফেলুন। ধরুন আপনার মার্কেটিং টার্গেট হচ্ছে বাজারের একটা নির্দিষ্ট অংশে ঢোকা। এখন এটাকে আলাদা করুন। কীভাবে মার্কেটে ঢুকলে সফল হবেন সেটা ঠিক করুন এই জায়গায়। বড় কাজকে ছোট ছোট ভাগ করে নিলে প্রতিটা অংশে সমান মনোযোগ দিতে সুবিধা হয়।
.

#
১৪. অগ্রগতির জায়গাগুলি দাগিয়ে রাখুন

প্রথম পয়েন্টে যেটা বলা হয়েছে যে বিজনেস প্ল্যান কোনো স্কুল অ্যাসাইনমেন্ট না। লিখে ফেলার পর এটা যে ফাইলের মধ্যে বাকি সময় পড়ে থাকবে তা না। এটা সবসময় সাথে রাখুন। যেকোনো অগ্রগতি হলে সঙ্গে সঙ্গে প্ল্যানের ওই অংশটা দাগিয়ে রাখুন।
.

#
১৫. গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলি যোগ করুন

ছয় নম্বর পয়েন্টে যেটা বলা হয়েছে কেবল গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলোই রাখতে হবে। এখানে মনে রাখবেন যেমন শুধু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলোই রাখতে বলা হয়েছে, তেমনি কোনো যেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার যেন বাদ না যায়।
.

#
১৬. আপনার দুর্বলতা কোথায়

যদি একবার বুঝে ফেলতে পারেন আপনার দুর্বলতা কোথায় তাহলে সেটা ঠিকও করে ফেলতে পারবেন। আপনাকে জানতে হবে আপনি ব্যবসা কেমন করছেন, অন্য প্রতিযোগীদের চেয়ে আপনি কোথায় পিছিয়ে আছেন।
.

#
১৭. ব্যবসায় আগানোর সঙ্গে সঙ্গে প্ল্যানও আপডেট করতে থাকুন

শুরুতেই সবকিছুর সঠিকটা আন্দাজ করতে পারবেন না। আপনি হয়ত ধারণা করছিলেন কিছু প্রোডাক্ট খুব চলবে, দেখা গেল সেটা একদমই চলল না। আবার হঠাৎ দেখলেন আপনি ভাবেন নাই এমন কোনো জায়গা থেকে আপনার লাভ করার সুযোগ আসছে। তাই বিজনেস প্ল্যান সবসময় আপডেট করতে থাকুন।
.

#
১৮. অভিজ্ঞতা থেকে শিখুন

বিজনেসে অনেক রকম ওঠানামা আছে, যেটা কেউ বিজনেস স্কুলে শেখাতে পারবে না। আপনাকে প্রতিবার ঠেকে ঠেকে শিখতে হবে। এই শেখার অন্য কোনো রাস্তা নেই। তাই যেটাই ঘটুক ভালো-খারাপ সেটাকে শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করুন। বিজনেস প্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত করুন।
.

#
১৯. বিজনেস প্ল্যান যেন আপনার চিন্তা এবং ব্যক্তিত্বকে প্রতিফলিত করে

অন্যের মেথড কঠোরভাবে অনুসরণের কিছু নেই। তবে কোনো ভালো কিছু পেলে সেটাকে টিপস হিসেবে ব্যবহার করুন। আপনার যদি মনে হয় এই স্টাইলে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না, সঙ্গে সঙ্গে বাদ দিন। ব্যবসা করার কোনো সুনির্দিষ্ট স্টাইল নেই। আপনার বিজনেস করাটা যেন আপনার মতই হয়, আপনার চিন্তা এবং ব্যক্তিত্বের সাথে যেন ব্যাপারটা খাপ খায়।
.

#
২০. পরিপাটি জিনিস ভালো তবে তারচেয়ে ভালো যা কার্যকরী

চকচকে পরিপাটি বিজনেস প্ল্যান ভালো। কিন্তু শুধুমাত্র গালভরা কথা, কিন্তু কোনো অ্যাকশন প্ল্যান নেই, কীভাবে মুনাফা করবেন তার কোনো পরিকল্পনা নেইএমন ব্যবসার ভবিষ্যৎ খুব বেশি সম্ভাবনাময় না। মনে রাখবেন মোড়কের থেকে সারবস্তু সবসময় বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

সৌঃ সি বি 

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি