Loading..

ম্যাগাজিন

০৩ জুলাই, ২০২২ ০২:১৫ অপরাহ্ণ

সুদর্শন সুবর্ণ মহাকাঠঠোকরা

সুন্দরবনে পাখি-প্রাণীর ছবি তোলার শেষ দিন করমজলে ঢুকেছি। কুমির প্রজননকেন্দ্রের সামনে খানিকটা সময় কাটিয়ে পেছন দিক দিয়ে বনের ভেতরে গেলাম। জোয়ার-ভাটার বাদাবনে হাঁটার জন্য বন বিভাগ কাঠের রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে।

সেই রাস্তার ওপর দিয়ে হাঁটছি, আর দুই পাশের গাছের দিকে নজর রাখছি। বাঁ পাশের একটি গাছে অতি সুন্দর পুরুষ চুনিকণ্ঠী মৌটুসিকে (রুবি-চিকড সানবার্ড) দেখে দাঁড়ালাম। ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রেখে চঞ্চল পাখিটির মাত্র সাতটি ছবি তুলেছি, এমন সময় টি-টি-টি-টি-টিই... শব্দে লাল ঝুঁটির একটি পাখি চমত্কার ভঙ্গিমায় উড়ে এসে খানিকটা দূরের বড় একটি গাছে বসল।

আর বসেই ওর ড্যাগারের মতো চঞ্চু দিয়ে গাছের কাণ্ডে ঠোকরাতে শুরু করল। ভালো ছবি পাওয়ার আশায় কিছুটা এগিয়ে গিয়ে অবস্থান নিলাম।

লাল ঝুঁটির পাখিটির চোখের ওপর নিচ থেকে দুটি সাদা রেখা ঘাড়-গলা হয়ে কাঁধ পর্যন্ত নেমে গেছে। সোনারঙা পিঠ লাল কোমরের পাখিটি গাছের কাণ্ড ঠোকরানোর ফাঁকে ফাঁকে এদিক-ওদিক খানিকটা দেখে নিচ্ছে। ওর মাথার ঝুঁটি খাড়া গলা লম্বা। ডানার উড়ন পালক লেজ কালো। গাঢ় দাগছোপসহ দেহের নিচটা ফ্যাকাশে সাদা। চোখের রঙে রয়েছে হালকা পীত কমলার মিশ্রণ। তবে চোখ দেখলেই বোঝা যায় বেশ সতর্ক পাখি। এর আগে ওর স্ত্রী পাখিটিকে দেখেছি বেশ কয়েকবার। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে অনেকটা একই রকম হলেও স্ত্রীর ঝুঁটি লাল নয়, বরং কালোর ওপর সাদা ফোঁটাযুক্ত। চোখের পেছন থেকে ঘাড় পর্যন্ত একটি মোটা কালো রেখা নেমে গেছে। চঞ্চু, পা পায়ের পাতা কালচে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে মায়ের মতো।

লাল ঝুঁটির সুদর্শন পাখিটি দেশে সচরাচর দৃশ্যমান আবাসিক পাখি। সুন্দরবন ছাড়াও বিভিন্ন বন বনের আশপাশে ওদের বহুবার দেখছি। সচরাচর একাকী বা জোড়ায় বিচরণ করে। মরা গাছ বা গাছের মরা কাণ্ড ঠুকরে কীটপতঙ্গের শূককীট খুঁজে খায়। ফুলের রসও পান করতে দেখা যায়। প্রজননকালে পুরুষ পাখি উচ্চ স্বরে ধাতব কণ্ঠে টি-টি-টি-টি-টিই... শব্দে ডাকে। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহের দৈর্ঘ্য ৩০-৩৩ সেন্টিমিটার ওজন ১৫০-২৩৩ গ্রাম।

মার্চ থেকে মে প্রজননকালে পূর্বরাগের সময় পুরুষ পাখি গাছের কাণ্ড ঠুকরে ড্রামের মতো শব্দ করে ডাকতে থাকে। ওরা গাছের কাণ্ডের নিচের দিকে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানায়। গর্তবাসী অন্য পাখির পরিত্যক্ত বাসাও ব্যবহার করতে পারে। তা ছাড়া পাখির নতুন বানানো বাসার দখল নিতেও ওস্তাদ ওরা।

ডিম হয় -৪টি, রং সাদা। স্ত্রী-পুরুষ মিলেই ডিমে তা দেয় ছানাদের যত্ন করে। ডিম ফোটে ১৪-১৫ দিনে। ছানারা উড়তে শিখে ২৪-২৬ দিনে। আয়ুষ্কাল প্রায় পাঁচ বছর।

সুন্দরবনের করমজলে দেখা লাল ঝুঁটির সুদর্শন পাখিটির নাম সুবর্ণ মহাকাঠঠোকরা। তবে নামটি পশ্চিমবঙ্গের। দেশের পাখিটির প্রচলিত কোনো বাংলা নাম নেই। তবে অনুবাদ নাম রয়েছে বৃহদাকার সোনালিপিঠ কাঠঠোকরা।

ইংরেজি নাম Greater Flameback, Greater Goldenback বা Large Golden-backed Woodpecker বৈজ্ঞানিক নাম Chrysocolaptes guttacristatus বাংলাদেশসহ দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাখিটির বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

আমিনুর রহমান,পাখি বন্য প্রাণী চিকিত্সা বিশেষজ্ঞ

 

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি