Loading..

ম্যাগাজিন

১৬ জুলাই, ২০২২ ০৬:৫১ অপরাহ্ণ

চিকিৎসা প্রযুক্তিতে যে ৪টি বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসছে থ্রি-ডি প্রিন্টিং

চিকিৎসা প্রযুক্তিতে যে ৪টি বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসছে থ্রি-ডি প্রিন্টিং

 

থ্রি-ডি প্রিন্টিং-এর আরেক নাম হলো অ্যাডিটিভ ম্যানুফ্যাকচারিং (Additive manufacturing) এর প্রচলন শুরু হয়েছিল ১৯৮০ দশকে। কোনো জিনিসের থ্রি-ডি প্রিন্ট করার জন্য প্রথমে ওই জিনিসের একটা ডিজিটাল মডেল অথবা ব্লু-প্রিন্ট নিতে হয়। এরপর ডিজাইন অনুসারে সেই জিনিসটির প্রতিটা স্তর পর্যায়ক্রমে প্রিন্ট করা হয়। তখন একটা নতুন মাধ্যমে নতুন জিনিসটা তৈরি হয়ে ওঠে।

অনেক শিল্পেই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এর মধ্যে চিকিৎসা খাতও রয়েছে। এখন এক্স-রে, কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি (সিটি স্ক্যান), ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং (MRI) স্ক্যান এবং আল্ট্রাসাউন্ড-এর মতো মেডিকেল ইমেজিং টেকনিক ব্যবহার করে অনেক কিছুর ডিজিটাল মডেল তৈরি করা হচ্ছে। আর সেখান থেকেই পরবর্তীতে সেগুলি থ্রি-ডি প্রিন্ট করা হচ্ছে।

ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে চিকিৎসা খাতে থ্রি-ডি প্রিন্টারের বাজার . বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছে যাবে।

চিকিৎসা খাতে থ্রি-ডি প্রিন্টিং-এর ব্যবহার মূলত নতুন ৪টি কাজের ক্ষেত্রে বেশি জনপ্রিয়। এগুলি হচ্ছে

টিস্যু এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি

সার্জারির যন্ত্রপাতি তৈরি

রোগীর প্রয়োজন অনুসারে সার্জিক্যাল মডেল তৈরি

প্রস্থেটিক বা কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি।

.

. মানবদেহের টিস্যু বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বায়োপ্রিন্টিং

বায়োপ্রিন্টিং হচ্ছে চিকিৎসা খাতে থ্রি-ডি প্রিন্টিং-এর ব্যবহার চালু হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। প্লাস্টিক কিংবা ধাতু ব্যবহার করে প্রিন্ট করার বদলে বায়োপ্রিন্টার জৈব পদার্থ ব্যবহার করে মানবদেহের কোষ স্তরে স্তরে প্রিন্ট করতে পারে। ধরনের জৈব পদার্থকে বলা হয় বায়ো-ইঙ্ক (Bio Ink) এগুলি একটার ওপর একটা বসিয়ে ল্যাবরেটরিতে জীবন্ত টিস্যু তৈরি করা হয়।

এই টিস্যুগুলি একসাথে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতোই কাজ করে। আর স্বল্প পরিসরে তৈরি করা হলেও এগুলি গবেষণার জন্য ভালো কাজে দেয়।

এছাড়া এখন থ্রি-ডি প্রিন্টার থেকে তৈরি করা অঙ্গ মানবদেহে প্রতিস্থাপনের জন্য পরীক্ষা বা ট্রায়ালও শুরু হয়েছে।

.

. সার্জারিতে সাহায্য করছে থ্রি-ডি প্রিন্টার থেকে তৈরি মডেল

এমন কিছু জটিল অপারেশন আছে, যার জন্য সার্জনদের আগে থেকে প্র্যাকটিস করার দরকার পড়ে। এসব ক্ষেত্রে থ্রি-ডি প্রিন্টার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

থ্রি-ডি প্রিন্টার ব্যবহার করে রোগীর শরীরের কোনো অংশের রেপ্লিকা তৈরি করে সেটা নিয়ে প্র্যাকটিস বা অনুশীলন করতে পারেন সার্জনরা।

বর্তমানে এমন ধরনের অপারেশন অহরহ করা হচ্ছে। ফেস ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপন থেকে শুরু করে মেরুদণ্ডের অপারেশনেও এই পদ্ধতি ব্যবহার করে করা হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতেই প্রচলন অনেক বেড়ে যাবে এই প্রযুক্তির।

.

. অপারেশনের যন্ত্রপাতি তৈরিতে থ্রি-ডি প্রিন্টার

ফরসেপ, হেমোস্ট্যাট, স্ক্যালপেল হ্যান্ডেল এবং ক্ল্যাম্প-এর মতো অপারেশনের যন্ত্রপাতিও থ্রি-ডি প্রিন্টারের মাধ্যমে তৈরি করা যায়।

থ্রি-ডি প্রিন্টার দিয়ে কেবল সরঞ্জাম তৈরিই করা হচ্ছে না, বরং এগুলি তৈরির সময় নতুন অনেক পদ্ধতিও কাজে লাগানো হচ্ছে। যেমন, থ্রি-ডি প্রিন্টার দিয়ে যন্ত্রপাতি তৈরিতে জাপানের ওরিগামি টেকনিক ব্যবহার করা হচ্ছে অনেক জায়গায়। এতে যন্ত্রপাতি যেমন নিখুঁত হয়, তেমনি আকারেও অনেক ছোট হয়। ফলে একদম সূক্ষ্ম অপারেশনের সময়ে রোগীর দেহে বেশি কাটাছেঁড়া না করেই সুন্দর করে সার্জনরা অপারেশন শেষ করতে পারেন।

আরেকটা বড় কারণ হচ্ছে, থ্রি-ডি প্রিন্টার দিয়ে যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জাম তৈরির খরচ প্রচলিত উপায়ে তৈরি করা সরঞ্জামের চেয়ে অনেক কম।

.

. রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষ প্রস্থেটিক বা কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবস্থা

আগে নকল হাত-পা বা অন্য কোনো অঙ্গের প্রয়োজন পড়লে সেগুলি কাস্টমাইজ করা বা নিজের মতো করে বানানোর সুযোগ কম ছিল। আর এগুলি ছিল বেশ ব্যয়বহুলও। তবে থ্রি-ডি প্রিন্টিং-এর কল্যাণে খুব কম খরচেই তা এখন সম্ভব হচ্ছে।

আগে এমন প্রস্থেটিক তৈরির জন্য কয়েক সপ্তাহ থেকে শুরু করে কয়েক মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগত। কিন্তু এখন থ্রি-ডি প্রিন্টার আসাতে এগুলি খুব দ্রুতগতিতে করা যাচ্ছে। এগুলি কাজ করছে ফ্যাক্টরিতে বানানো প্রস্থেটিকের মতই। কিন্ত অনেক কম খরচে বানানো যাচ্ছে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এতে অনেক সুবিধা হয়েছে। কারণ শিশুরা দ্রুত বেড়ে ওঠে বলে তাদের কিছুদিন পর পরই প্রস্থেটিক পরিবর্তন করতে হয়।

সৌঃ সি বি

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি