Loading..

খবর-দার

১২ নভেম্বর, ২০২২ ১২:০৭ অপরাহ্ণ

এডুকেশন (Education) শব্দের উৎপত্তি:

এডুকেশন (Education) শব্দের উৎপত্তি:

অনেক গবেষক ও শিক্ষাগবেষকই একমত হয়েছেন যে, শিক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ education এর উৎপত্তি হয়েছে ল্যাটিন শব্দ educare অথবা educere থেকে। এখানে educare শব্দের অর্থ হলো – to train (প্রশিক্ষিত করা) এবং to accustom (অভ্যস্ত করা)। কেউ কেউ বলে থাকেন educare এর আরেকটি অর্থ – to bring up (লালন-পালন করা)

অন্যদিকে educere শব্দের অর্থ হলো – to lead out বা বের করে আনা। এখানে ‘বের করে আনা’ মানে হলো সুপ্ত মানসিক শক্তির বিকাশ ঘটানো। education এর উৎপত্তি educere থেকে হয়েছে এটি খুব বেশি মানুষ বিশ্বাস না করলেও, কেউই আলোচনার টেবিলে একে বাদ দিয়ে কথা বলতে পারেন না

আবার বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, education শব্দটি সরাসরি educare থেকে আসেনি। মাঝখানে পার হতে হয়েছে বেশ কয়েকটি ধাপ। ল্যাটিন educare থেকে আমরা বেশ কিছু শব্দের জন্ম সম্পর্কে জানতে পারি। এদের মধ্যে educat এবং educatio ল্যাটিন শব্দ, এখান থেকে একইসঙ্গে ইংরেজি শব্দের educate (কাউকে শেখানো) এর উৎপত্তি হয়। এভাবেই ষোড়শ শতাব্দিতে ইংরেজি শব্দ education উৎপত্তিলাভ করে।

কেউ কেউ বলে থাকেন ইংরেজি ভাষার শব্দ education এসেছি ল্যাটিন শব্দ educatum থেকে যার অর্থ the act of training বা প্রশিক্ষণের নিয়ম/রীতি। জোসেফ টোয়াডেল শিপলি নামক এক পণ্ডিত তাঁর লিখিত Dictionary of Word Originsএ লিখেছেন যে, ইংরেজি education এর উৎপত্তি হয় ল্যাটিন edex এবং duccrduc শব্দদ্বয় থেকে। এখানে edex এর অর্থ ‘বের করা’ এবং duccrduc এর বাংলা করলে হয় ‘পথ প্রদর্শন করা’

শিক্ষার ধারণাকে আমরা শিক্ষার সংকীর্ণ ধারণাও বলতে পারি। সত্যি কথা হলোআমাদের আলোচনার টেবিলে যে শিক্ষা (education) নিয়ে সর্বদা আলোচনা হয় বা আমরা যে অর্থে শিক্ষা শব্দটিকে ব্যবহার করি তা বিশেষ বা সংকীর্ণ অর্থেই ব্যবহার করি। প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থাই হলো শিক্ষার বিশেষ বা সংকীর্ণ ধারণার রুপ। বিশেষ অর্থে শিক্ষা হলো স্বীকৃত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট কোনো বিষয় বা বিষসমূহে জ্ঞানার্জন করা। যারা বিদ্যালয় কিংবা পাঠশালা থেকে পড়া, লেখা গণিতের প্রাথমিক ধারণালাভ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের ডিগ্রিপ্রাপ্ত হয়েছেন তাঁরাই শিক্ষার বিশেষ অর্থ অনুযায়ী শিক্ষিত। অন্যদিকে যারা কোনো সময়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারেনি তাঁদের অশিক্ষিত বলা হয়(রেফারেন্স -বিশ্লেষণ ডট কম)

শিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মতবাদ দিয়েছেন। বিজ্ঞানী, গবেষক, লেখক, কবি, সাহিত্যিকরা এক এক জন এক এক মতামত প্রদান করেছেন। কেউ কেউ বলছেন শিক্ষা হচ্ছে মানুষের আচরনিক পরিবর্তন। আবার কেউ বলছেন শিক্ষা হচ্ছে মানুষের আচরণের কাঙ্কিত পরিবর্তন। কেউ কেউ বলছেন শিক্ষা ব্যক্তির জীবন বিকাশের প্রক্রিয়া। তাদের মতে মানুষের জন্মের পরে অনেক কিছুই থেকে যায় অপরিপক্ষ। সেগুলোর পরিপক্ষতা প্রয়োজন। তাদের মধ্যে অনেক সম্ভবনা থাকে যা বিকাশযোগ্য। তাহলে বলা যায় যে প্রক্রিয়ার মাধ্য্যমে শিশুর জন্মগত সম্ভবনাগুলির বিকাশে সহায়তা করা হয়, তাকেই শিক্ষা বলে। অর্থাৎ শিক্ষা একটি জীবনমূখী প্রক্রিয়া। মানুষের জীবন ধারণের জন্য যেমন আলো, বাতাস, খাদ্য, পানি ইত্যাদির প্রয়োজন। তেমনি শিক্ষারও প্রয়োজন। তাহলে সার্বিকভাবে আমরা বলতে পারি, শিক্ষা হল মানুষের অন্তর্নিহিত সম্ভবনাগুলোর সম্প্রসারণের প্রক্রিয়া। যার ফলে ব্যক্তি জীবনের বিকাশ ঘটে।

এই শিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন দার্শনিকগণ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করেছেন। দর্শনের মতে শিক্ষার মাধ্যমে যেহেতু ব্যক্তিজীবনের সম্প্রসারণ ঘটে,সেহেতু আধুনিক বিজ্ঞানী বা দার্শনিকগণ একে জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া বলে মতামত দিয়েছেন। তারা জৈবিক প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে জীববিদ্যা ও মনোবিদ্যার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। আর মানুষের বিকাশ ঘটে কেবলমাত্র পরিবর্তনশীল পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে গিয়ে। তাহলে পরিবর্তনশীল পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পাড়াই হচ্ছে শিক্ষা। মানুষ উন্নত প্রাণি। আর এই উন্নত প্রাণির জৈবিক চাহিদা ছাড়াও আরো অনেক চাহিদা থাকে। যেমন – মানসিক ও সামাজিক চাহিদাও আছে। আর আছে নৈতিক ও আধ্যাত্বিক চাহিদা। মানুষের বিকাশের ক্ষেত্রে এসব চাহিদার গুরুত্বও কম নয়। মানুষের চাহিদার কোনো একটির ঘাটতি ঘটলেই তার বিকাশ সঠিকভাবে হওয়ার সম্ভবনাকে অনেকটাই খাট করে তুলে। তাহলে ব্যক্তি যখন তার সকল চাহিদা পূরণের মাধ্যমে নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখে তাই হচ্ছে শিক্ষা।