Loading..

খবর-দার

৩০ মার্চ, ২০২৩ ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ

মাল্টিমিডিয়া ক্লাসঃ সুবিধা ও অসুবিধা

মাল্টিমিডিয়া ক্লাস অর্থ বহু মাধ্যম যোগে পরিচালিত শ্রেণীকার্যক্রম। মাল্টিমিডিয়া হ’তে হ’লে তিনটি জিনিস লাগে। ১.বর্ণ (লেখা)  ২. চিত্র/ছবি ৩. শব্দ। এরূপ ক্লাসে বর্ণ বা লেখা (Text), চিত্র (Graphics) ও শব্দ (sound) যোগে পাওয়ার পয়েন্টে সলাইড তৈরি করে উপস্থাপন করতে হয়। একটি শ্রেণিপাঠে সাধারণত ১০ থেকে ২০টা সলাইডই যথেষ্ট। মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নিতে হ’লে শ্রেণীকক্ষে বিদ্যুৎ, ১টি ল্যাপটপ, ১টি প্রজেক্টর ও একটি সাদা স্ক্রীন অথবা দেয়াল থাকা আবশ্যক।

ICT ট্রেনিং-এর মাধ্যমে শিক্ষকদের এ বিষয়ে দক্ষ করার চেষ্টা সরকারের পক্ষ থেকে অব্যাহত রয়েছে। এই ক্লাস নেওয়ার সময় সলাইডে প্রদর্শিত স্বাগতম, পরিচিতি, শিখনফল ইত্যাদি যা থাকে শ্রেণীকক্ষে তা দেখানো যাবে না। বরং পাঠ ঘোষণা থেকে বাড়ির কাজ পর্যন্ত দেখাতে হবে।

অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতির পাঠদানের সকল প্রক্রিয়াই মাল্টিমিডিয়া ক্লাসে প্রযোজ্য। এখানেও শিক্ষক সময় বিভাজন করে পাঠ্য বই ধরে আলোচনা করবেন। প্রয়োজনীয় চিত্র ও ভিডিও প্রজেক্টরের মাধ্যমে পর্দায় দেখাবেন। পর্দায় একক, জোড়ায় ও দলগত কাজের প্রশ্ন তুলে ধরবেন। প্রশ্নের নমুনা উত্তর সলাইডে করে রাখবেন এবং প্রতিটি কাজ শেষে শিক্ষার্থীদের উত্তর নিজের নমুনা উত্তরের সাথে মিলিয়ে নেওয়ার জন্য দেখাবেন, আগেভাগে দেখাবেন না। জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতার ভিত্তিতে সকল প্রশ্ন করবেন। সবশেষে মূল্যায়নের প্রশ্ন মৌখিক ভাবে করা যাবে। বাড়ির কাজ সৃজনশীল প্রশ্ন হিসাবে একটি স্লাইডে তুলে ধরতে হবে। পরবর্তী ক্লাসে শিক্ষক 
 
তা জমা নিবেন এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনী ও নির্দেশনাসহ নম্বর প্রদান করে তাদের নিকট ফেরৎ দিবেন। এতে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লেখায় পারদর্শী হয়ে উঠবে।
 
 মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের অসুবিধা : 

ধারণা করা হয় যে, মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস নিলেই শিক্ষার্থীদের জানার গতি ও শক্তি দুইই বাড়বে এবং তারা আধুনিক প্রযুক্তিতে অভ্যস্থ ও দক্ষ হয়ে উঠবে। শেষের কথাটি ঠিক হ’লেও প্রথম কথাটি সর্বাংশে ঠিক হচ্ছে না। তার কিছু কারণ এখানে তুলে ধরা হ’ল :
১. স্থায়ী ক্লাসরুম না থাকলে প্রজেক্টর, ল্যাপটপ ও পর্দা ফিট করতে ক্লাসের অনেকখানি সময় নষ্ট হয়ে যায়।
২. অনেকে শুধু মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করেন; পাঠ্য বই খুব একটা হাতে নেন না। এতে শিক্ষার্থীরা পাঠ্য বই বিমুখ হয়ে পড়ছে। অথচ তাদের জানা ও পরীক্ষায় ভালো করা নির্ভর করে পাঠ্য বইয়ের উপর। আসলে পড়াতে হবে বই এবং মাল্টিমিডিয়া হবে তার একটি বড় উপকরণ।
৩. অনেকে শিখনফল ঠিক না করে মাল্টিমিডিয়ার সলাইডে পাঠ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি/ভিডিও তুলে ধরেন। সেখানে ছবি প্রদর্শনী বেশি হয়। শিক্ষকের উপস্থাপন এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একক, জোড়ায় কিংবা দলগত কাজ তেমন একটা থাকে না। ফলে শিক্ষণ-শিখন ফলপ্রসূ হয় না।

৪. অনেকে মাত্রাতিরিক্ত ছবি দেখান। শিক্ষার্থীরাও মনে করে এটি সলাইডশোর ক্লাস। তারা ক্লাস উপভোগ করে বটে কিন্তু জ্ঞান অর্জন করে না। আসলে প্রতিটি কাজের ভিত্তিতে ১টি/২টি ছবিই যথেষ্ট ভাবতে হবে এবং শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জন করছে কিনা তা নিশ্চিত হ’তে হবে।
৫. মাত্রাতিরিক্ত এনিমেশন আরেকটি সমস্যা। অনেক এনিমেশনে দেখা যায় এক একটা বর্ণ উড়ে এসে শব্দ ও বাক্য গঠন করে। অনেক সময় অক্ষর ও ছবিগুলো লাফায়-ঝাঁপায়। এতে যেমন সময় বেশি লাগে তেমনি চোখেও লাগে। অথচ হাল্কা ও সাধারণ এনিমেশন দিলে এরূপ সমস্যা সহজেই এড়ান যায়।
৬. শিক্ষক বাতায়নের কন্টেন্ট ডাউনলোড করে অনেকে পড়ান। বাতায়নে যেমন অনেক ভালো কন্টেন্ট আছে তেমনি অনেক নিম্ন মানের কন্টেন্টও আছে। বাছবিচার না করে বাতায়ন থেকে সহায়তা নিয়ে পাঠ দান করলে সুফল পাওয়া অনিশ্চিত। নিজে কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে অথবা বাতায়নের কন্টেন্ট থেকে নিজের সুবিধা মত এডিট করে নতুন কন্টেন্ট বানাতে পারলে এ অসুবিধা থাকবে না।

শিক্ষণ-শিখন আসলে অজানাকে স্থায়ীভাবে জানা এবং তাকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিজীবনসহ বৃহত্তর পরিসরে মানবমন্ডলীর ইহজাগতিক ও পারলৌকিক মঙ্গল সাধন করা। আমাদের সৃজনশীল প্রশ্নসহ পঠন-পাঠনের সকল নিয়ম-নীতি এ লক্ষ্যে পরিচালিত হওয়া উচিত। মহান ঈশ্বর আমাদের সকল কাজে সহায় হোক।