Loading..

প্রকাশনা

১৬ জুলাই, ২০১৩ ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বগ্রামের ধারণা (Concept of Global Village)
বিশ্বগ্রামের ধারণা (Concept of Global Village) একটা সময় ছিল যখন মানুষ গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বাস করত। মানুষের জীবিকার প্রধান অবলম্বন ছিল পশু শিকার। শিকারও করত তারা দলবদ্ধ হয়ে। একটা সাম্যবাদী সমাজ ছিল তখন। শ্রম দিত যার যার সাধ্যানুযায়ী, ভোগ করত যার যার প্রয়োজনানুযায়ী। শিকারের স্বল্পতার কারণে মানুষকে বিকল্প চিন্তা, বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় ধীরে ধীরে। বিকাশ ঘটতে থাকে চাষাবাদ, ব্যবসা-বাণিজ্য। সেইসাথে বিকাশ ঘটতে থাকে মানুষের বসবাস করার কৌশল ও পদ্ধতির। একটা সময়ে বিশ্ব বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বিভিন্ন কারণে রাষ্ট্রের গঠনপ্রকৃতি ও শাসনব্যবস্থা বিভিন্ন হয়। তবে কিছু বিকল্প ছাড়া প্রায় সকল রাষ্ট্রই গ্রাম আর শহরে বিভক্ত। রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনের প্রথমদিকে রাষ্ট্রের গ্রামগুলো প্রায় একই রকম ছিল। পরস্পর সম্পর্কিত বা পরস্পর সম্পর্কহীন, পরস্পর সমধর্মের বা ভিন্ন ধর্মের বা ধর্মহীন, পরস্পরের আত্মীয় বা অনাত্নীয়, সাধারণত একই ভাষাভাষীর কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন পেশার কিছু পরিবারের একটা ক্ষুদ্র এলাকায় সকলের সাথে মিলেমিশে বসবাস করা জনসমষ্টিকেই বলা হয় একটা গ্রাম। গ্রামে যেকোনো একজনের প্রয়োজনে সকলে তার সাধ্যমত সাহায্য করার চেষ্টা করে। যেকোনো বিপদে-আপদে কাউকে ডাক দিলেই সাহায্য মেলে। যেকোনো জিনিসের প্রয়োজন হলে প্রতিবেশীর বাড়িতে কিংবা গ্রামের হাটে তা সহজেই পাওয়া যায়। চিকিৎসার প্রয়োজনে পাড়ার ডাক্তার সাহেবকে ডাকলেই পাওয়া যায়। জোরে ডাক দিলেই পাশের বাড়ির মানুষের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বর্তমানে বিশ্বটাই আজ একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে। বর্তমান যুগ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগ। গৃহস্থালির কাজ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয়, এমনকি আন্তর্জাতিক সব কর্মকান্ডে তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা অপরিহার্য। পৃথিবীর উপরিভাগ কিংবা অভ্যন্তর, গভীর সমুদ্র থেকে দূর মহাকাশ সর্বত্রই আজ প্রযুক্তির ছড়াছড়ি। প্রযুক্তির ক্রমবিকাশে মানুষ আজ পাহাড়ের গুহা ছেড়ে ভ্রমণ করছে মহাশূন্যে। বর্তমানে ইলেকট্রনিক্স, ইলেক্ট্রিক্যাল এবং কম্পিউটার প্রযুক্তির উন্নয়নের হার অতিউচ্চ। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় কম্পিউটার ও ইলেক্ট্রনিক্সের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি, যার মূলে রয়েছে টেলিযোগাযোগ, ডেটা কমিউনিকেশন ও ইন্টারনেট ব্যবস্থা। উপগ্রহ যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ষাটের দশকে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে। ১৯৬৫ সালের একেকটি ইন্টেল স্যাট উপগ্রহে ২৪০টি টেলিফোন সার্কিট অথবা একটি টেলিভিশন চ্যানেল পরিবহনের ব্যবস্থা ছিল। বর্তমানে একেকটি ইন্টেল স্যাট উপগ্রহে কয়েক লক্ষ টেলিফোন এবং অসংখ্য টেলিভিশন চ্যানেল সঞ্চালনের ব্যবস্থা রয়েছে। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে কম্পিউটার ও ইলেক্ট্রনিক্সের সমন্বয়ে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটছে। যার কারণে কোনোরূপ সেন্সর বা বাধা ছাড়াই পৃথিবীর একপ্রান্ত হতে অন্যপ্রান্তের সাথে সহজেই এবং অতি অল্প সময়ে কোটি কোটি ডেটা স্থানান্তর করা সম্ভব হচ্ছে। এই সব প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে সমগ্র বিশ্ব বর্তমানে একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের যেকোনো স্থানে বসেই এখন নেটওয়ার্কভুক্ত যেকোনো স্থানের সাথে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করা সম্ভব। বিশ্বের যেকোনো দেশের নেটওয়ার্কভুক্ত কোনো স্থানে বসে ডাক্তারের সেবা নেয়া, যেকোনো ধরনের পণ্য বেচাকেনা বা সরবরাহ, যেকোনো ব্যক্তির সাথে কথা বলা বা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে পরস্পরকে দেখা, যেকোনো দেশের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ, যেকোনো ধরনের সংবাদ আদান-প্রদান, ঘরে বসে অফিসে কাজ কিংবা কোনো গবেষণার কাজ, বিশ্বের যেকোনো দেশের বিশ্ববিদ্যালয় বা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সেবা গ্রহণ বা প্রদান প্রভৃতি করা সম্ভব হচ্ছে। এসব কারণে বর্তমান বিশ্বকেই বলা হচ্ছে বিশ্বগ্রাম। Marshall McLuhan, তার বই The Gutenberg Galaxy : The Making of Typographic Man (1962) and Understanding Media (1964) তে প্রথমে বিশ্বগ্রামের ধারণা দেন। তার মতে ‘‘ইলেক্ট্রনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্ব একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে এবং বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সাথে অতি সহজেই যোগাযোগ করা সম্ভব’’।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি