Loading..

খবর-দার

২২ নভেম্বর, ২০১৮ ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

“ই-লার্নিং সফলতার গল্প ”

“ই-লার্নিং সফলতার গল্প ”

শিক্ষা, সভ্যতা একই সূত্রে গাঁথা। মানব সভ্যতা শিক্ষার অনুকূল। আর তিনটি উপাদানের (শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষাক্রম) সমন্বয়ে শিখন-শেখানো কার্যক্রম সংঘটিত হয়ে থাকে। আর আমরা শিক্ষক জাতি গড়ার কারিগর। এখনকার সময়ে সবকিছু ডিজিটাল হয়ে গেছে। আমরা তথ্য-প্রযুক্তির যুগে বাস করছি। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল কারিগর না হলে ঐ শিক্ষা বর্তমানে অচল অর্থাৎ শিখন-শেখানো কার্যক্রম টেকসই হবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষনার পর আর আমাদের বসে থাকার উপায় নেই। খাপ খাওয়াতে গেলে নিতে হবে প্রশিক্ষন, দিতে হবে অগাধ শ্রম। তা না হলে আমাদের শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে মনোযোগি হবে না। গতানুগতিক শ্রেণি পাঠদান নিঃসন্দেহে বাতিল করতেই হবে। আসুন আমরা সবাই ডিজিটাল শিক্ষক হয়ে যাই। বদলে যাই, বদলে দেই এদেশ, এ জাতিকে। কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলাধীন প্রত্যন্ত গ্রাম নেওয়াশী অঞ্চলে অবস্থিত জাগরণী বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যাবীথির একজন ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে ১৯৯৫ খৃস্টাব্দ হতে নিয়োগিত আছি। পেশাগত-বিষয়ভিত্তিক নানা প্রশিক্ষন গ্রহন করা হয় । (Communicative English Course – BIAM Foundation, Four-skill development course – ELTIP, Curriculum Desciminassion Course-NCTB, CPD 1 etc) অতঃপর ২০০৬ সালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃক নেট-ওয়ার্ক শিক্ষক মনোনিত হয়ে ‘শান্তি-সম্প্রীতির ভাব ধারায় শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংগ্রহ’ আউট রীচ প্রোগ্রামে সুনামের সহিত কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলাম, আমাদের জাগরণী বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যাবীথি সহ ২২/২৩ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এতে সম্পৃক্ত করে নিবিড় কাজ চালাতে থাকি। এ সুবাদে ২০০৭ সালে পনের দিনের শান্তি শিক্ষা কোর্সে ভারতের আহমেদাবাদে গুজরাট ইউনিভার্সিটি ও সবরমতি গান্ধী আশ্রমে যাবার সুযোগ হয়েছিল। অতঃপর বিএসবি ফাউন্ডেশন ও ক্যামব্রিয়ান কলেজ কর্তৃক বিশ্ব শিক্ষক দিবসে পর পর পাঁচবার (২০০৮, ২০০৯, ২০১০, ২০১১ ও ২০১২ ইং) সেরা শিক্ষক নির্বাচিত হয়ে পদক, সনদ অর্জন করি। যা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে লাইভ দেখিয়েছিল। ২০১৫ সালের নভেম্বরে ৩০ দিনের ToT (Training of Trainer) প্রশিক্ষনে ব্যানবেইসে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। ঐ প্রশিক্ষন চলাকালীন সময় মনে হত আমার দ্বারা কম্পিউটার শেখা সম্ভব হবে না। কেননা এটাই ছিল আমার কমপিউটারে প্রথম প্রশিক্ষন। স্কুলে মাঝে মধ্যে ওয়ার্ডের কাজ করতাম। ছিল না চর্চা করার মত নিজস্ব ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ। টট প্রশিক্ষন শেষে ধারে টাকা নিয়ে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ল্যাপটপ কিনে রাত- দিন কঠোর পরিশ্রম করে অন্যের সহযোগিতা নিয়ে কনটেন্ট তৈরির কাজ চালাই। তাতেও খুব ভালো কিছু পারিনি। মনের ইচ্ছা, একাগ্রতা ছিল বলে কাজ চালাতে থাকি। শিক্ষকদের মান উন্নয়নে ও উৎকর্ষ সাধনে দেশের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ প্লাটফর্ম ‘শিক্ষক বাতায়ন’ সদস্য হয়েছিলাম ToT প্রশিক্ষনে। সেই থেকে মাঝে মধ্যে কনটেন্ট তৈরি ও আপলোড করতাম, ব্লগ লিখতাম। গ্রামীন ফোনের নেটওয়ার্ক মাঝে মাঝে ঝামেলা করত । এভাবে কিছুদিন কাজ থেকে বিরত ছিলাম । আবার ২০১৭ সালে সেই যাত্রা শুরু করেছি । এ যাবৎ বতায়নে আপলোডকৃত মোট প্রেজেন্টেশন/ কনটেন্ট সংখ্যা ৪২। দিন রাত কঠোর পরিশ্রম করে ইংরেজি ১ম ও ২য় পত্রের শতোর্ধ কনটেন্ট নির্মান করি। শ্রেনি কক্ষে এসব প্রয়োগ করে তা আবার এমএমসি ডেসবোর্ডে পাঠানো হয়। অনবরত, অনিয়ন্ত্রিত ল্যাপটপে বসে কাজ করায় মাজায়- কোমড়ে ব্যথা, পা ফুলা দেখা দেয়। পরিবারের সবাই রাগ করত, এমনকি আমার সহধর্মিনী মোহছিনা সিদ্দিকা (তিনিও সপ্তাহের সেরা কনটেন্ট নির্মাতা) প্রায়ই চেয়ার থেকে সরিয়ে দিতেন। ভ্রূক্ষেপ না করে আমি কাজ চালিয়েই যেতাম, রাত ২-৩টা কোন দিক দিয়ে হয়ে যেত, টেরই পেতামনা। এর জন্য আমার জেদ ছিলো, আমাকে পারতেই হবে- হতেই হবে। এদিকে চোখের সমস্যা তো আছেই। a2i এবং বাতায়ন কর্তৃপক্ষ আমাকে (০৯/০২/২০১৮) সপ্তাহের সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা হিসেবে নির্বাচিত করে। এজন্য আমি a2i এবং বাতায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে চির কৃতজ্ঞ ও ঋণী। কুড়িগ্রাম জেলাতে শিক্ষক বাতায়নে আমিই সক্রীয় সদস্য হিসেবে এখনও কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এদিকে মুক্তপাঠ আমার স্বপ্নের দূয়ার খুলে দিয়েছে। এতে কাজ করে আমার অনেক অজানা রহস্য উম্মোচিত হয়েছে। মুক্তপাঠে- ১। বেসিক টিচার্স ট্রেনিং ১ ২। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম মনিটরিং এন্ড মেন্টরিং ৩। মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট তৈরী ৪। Competency Based English Communication Skill ৫। ট্রাবলস্যুটিং ১; মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ৬। ইলাষ্ট্রেটর ৭। সি- প্রোগ্রামিং ৮। বেসিক টিচার্স ট্রেনিং-২ ৯। ট্রাবলস্যুটিং ২; ইন্টারনেট সংযোগ - ১ ১০। পাবলিক স্পিকিং ১১। ট্রাবলস্যুটিং ২; ইন্টারনেট সংযোগ ২ ১২। শ্রেণি ব্যবস্থাপনার কৌশল ১৩। জাতীয় তথ্য বাতায়ন ব্যবস্থাপনা ১৪। পড়তে শেখার নির্দেশনা- ২ সকলের জন্য উন্মুক্ত ১৫। ট্রাবলশ্যুটিং ১; মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ৩ কোর্স করে বর্তমানে পয়েন্ট ২৩৩০০ অর্জন করতে পেরেছি। মুক্তপাঠ আমাকে বদলে দিয়েছে, বদলে গেছি। আমি মুক্তপাঠের নিকট চির ঋণী। বাংলাদেশের সকল শিক্ষকদের প্রতি আহবান জানাই ‘আপনারা মুক্তপাঠের সদস্য হউন, শিখুন আর শিক্ষার্থীদের শেখান।’ কাজের মুল্যায়নের মাধ্যমে আমাদের পিছিয়ে পড়া অবহেলিত কুড়িগ্রাম জেলার শিক্ষকবৃন্দকে মুক্তপাঠমূখী করা এবং তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে এনে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করার জন্য এটুআই কর্তৃক ICT4E, District Ambassasor নির্বাচিত হয়েছি। ICT4E রংপুর বিভাগীয় ফোরাম ও প্রতিশ্রুতিশীল শিক্ষক ফোরামের সদস্য হিসেবে কাজ করছি। আমি সবার কাছে দোয়া ও ভালবাসা চাই। 

শুভ কামনা রইল নিরন্তর।

মোঃ আবু আব্দুর রহমান সিদ্দিকী

(এম. এ, বি. এড)

সিনিয়র সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি)

জাগরণী বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যাবীথি

নেওয়াশী, নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম।

ইমেইলঃ [email protected]