Loading..

খবর-দার

২৬ নভেম্বর, ২০১৮ ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

''বাল্যবিবাহ: যৌবনাকে করছে বৃদ্ধা ও রুগ্ন''
মাঝে মাঝে পুরানো বাল্য বন্ধুদের নিয়ে অাড্ডা দিতে অভ্যস্ত নয়, অাড্ডা দিয়ে মজা পায় না, এ রকম লোক পাওয়া যাবে না৷ শুক্রবার ছুটির দিনে স্কুল জীবনের বন্ধু ব্যবসায়ী হানিফের দোকানেই অাড্ডাটা জমে ভালো৷ অামাকে দেখলে সে বেশ খুশি হয়৷ একদিন অালাপচারিতার সময় তার দোকানে একটি মহিলা অাসলো সার কিনতে৷ মহিলাটি মনে হয়েছিল ৫০-৫৫ বছর বয়স্ক৷ দেখে খুব কষ্ট লাগলো! মনে মনে ভাবলাম চাচী সারগুলো নিবে কিভাবে? হঠাৎ হানিফ মহিলাটির দিকে তাকিয়ে বললো,'' তাকে চিনিস কিনা?'' ''না,'' উত্তর দিলাম৷ '' সে অামাদের প্রাইমারি স্কুলের ক্লাশমেট, বর্তমানে নানী হয়ে গেছে,'' পুনরায় বললো হানিফ৷ শুনে বড্ড কষ্টের হাসি পেল! ''তোমার কখন বিয়ে হয়েছিল?'' জিজ্ঞাসা করলাম৷ ''অামি তখন থ্রীতে নাকি ফোরে পড়ি, মনে নাই৷ জামাই বিদেশী দেইখা তাড়াতাড়ি বিয়া দিয়া দিছে৷'' '' তোমার বাচ্চাকাচ্চা কয় জন?'' জিজ্ঞাসা করতে সে উত্তর দিল, '' তারা পাঁচ ভাই বোন; বড় মাইয়াডারে বিয়া দিছি, মাইয়াডার ঘরে নাতিনও হইছে৷ নাতিনডার সইলডাও ভালা না৷ অামার জি-পুতগুলো সবগুলোই অামার মতন দূর্বল, নাতিনডাও দূর্বলই হইছে; রুহডা যেমন অাইয়ে- যায়৷'' তোমার স্বামি কেমন অাছে জিজ্ঞাসা করতেই সে অাবার উত্তর দিলো, ''হেতার স্বাস্থ্যটাস্থ্য ভালাই, হেতার কোনো রোগ-টোগ নাই'' বাল্যবিবাহ অামাদের দেশে দারিদ্রের দুষ্ট চক্রের মতোই৷ সাধারণত গ্রামাঞ্চলে সুন্দরি মেয়েরাই প্রবাসিদের কবলে পড়ে বাল্যবিবাহের স্বীকার হয়৷ যে মেয়ের কম বয়সে বিয়ে হয়, সে মেয়ে তার পরবর্তি প্রজন্মগুলোও কম বয়সে বিয়ে দিয়ে থাকে৷ এতে তারা তাদের সমাজে একটা গৌরববোধ করাসহ অানন্দবোধও করে৷ তাড়াতাড়ি মেয়ে বিয়ে দিতে পারলেই যেন ইজ্জত রক্ষা পেল! প্রতিবেশীর কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতাটাও যেন বেড়ে গেল!গ্রামাঞ্চলের সুন্দরি মেয়েরাই বেশিরভাগ বাল্যবিবাহের কবলে পড়ে৷ অনেক সময় সে সুন্দরি মেয়েদের কন্যা সন্তানগুলোও সুন্দরি হওয়ায় তারাও তাদের মেয়েগুলোকে বাল্যবিবাহ দিয়ে থাকে৷ এ ঐতিহ্য মূর্খ পরিবারগুলোতেই বেশি দেখা যায়৷ অশিক্ষিত যৌথ পরিবারগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে- অনেক পরিবারের চার-পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই ব্যতীত সকলেই বিদেশ থাকে৷ বড় ভাইয়ের মেয়ে থাকলে সে চায় যৌথ পরিবার থাকতেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজ মেয়েটা তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে কন্যাদায় থেকে মুক্তি পেতে৷ ভবিষ্যতে সাংসারিক অভাব অনটনে পড়ার ভঁয়ে এক সাথে থাকতেই নিজ মেয়েটি বাল্যবিবাহ দিয়ে থাকে৷ তা দেখে তাদের ছোট ভাইয়েরাও এ রীতি অনুসরণ করে থাকে৷ এতে করেই বাল্যবিবাহের হার পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে৷ নৌকা দিয়ে নদি পাড়ি দিতে দু'জন মহিলা ও তাদের সাথে একটা বাচ্চা ছিল৷ ভাবলাম মহিলাটির বাচ্চাটি এত দূর্বল হলো কেন? জিজ্ঞাসা করতে বড় মহিলাটি উত্তর দিলে শিশুটি তার নাতি৷ শুনে হতবাক হলাম৷ যে বয়সে সে মা হওয়ার কথা সে বয়সে সে নানী! শিশুর অবস্থা কী, শিশুর মায়ের অবস্থা কী অার এ শিশুর ভবিষ্যত-ই বা কী? একটি বাল্যবিবাহ একটি জাতিকে রুগ্ন করে দেয়৷ মেয়েটি শুধু নিজেই শারীরিক ঝুঁকিতে পড়ে না তার পরবর্তি প্রজন্মগুলোকেও ঝুঁকিতে ফেলে৷ অনেক সময় অাবেগ ও কল্পণার বশবর্তি হয়েও অভিভাবক মেয়েকে বাল্য বয়সে বিয়ে দিয়ে থাকে৷ তাড়াতাড়ি বিয়ে দিলে তাড়াতাড়ি বেয়াই-বেয়াইন নিয়ে অানন্দ ও নানি হয়ে নতুন নাতি-নাতনির সাথে সময় কাটাবে সে কল্পণাতেও কিছু মানুষ কিশোরীদেরকে শারীরিক ঝুঁকিতে ধাবিত করে থাকে৷ সামাজিক সচেনতা সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেনতা সৃষ্টি করে অন্ধকার থেকে অালোর পথ দেখাতে পারে৷ সচেতন সমাজ সৃৃষ্টি করতে পারে অালোকিত মানুষ ও তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত৷ তাই বাল্যবিবাহ রোধে সমাজের প্রতিটি স্থরে সচেনতা সৃষ্টি করে বাল্যবিবাহের সর্বনাশা পথ থেকে মেয়েদের মুক্তি করে কিশোরীদের অালোর পথ দেখাতে সমাজের প্রতিটি মানুষ অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করতে হবে৷ লেখক- মোহাম্মদ মহসিন মিয়া সহকারি শিক্ষক, ইংরেজি বড় গোবিন্দপুর এএমবি উচ্চ বিদ্যালয় চান্দিনা, কুমিল্লা৷