Loading..

ডকুমেন্ট

১৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০৪:২৪ অপরাহ্ণ

ক্যারিয়ার গঠনে আইসিটির জ্ঞান

ক্যারিয়ার গঠনে আইসিটির জ্ঞান

মো. মুরাদ হোসেন

প্রভাষক (আইসিটি)

শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজ।

 

আইসিটিতে জ্ঞান, যদি হয় অর্জন;

তবেই হবে জয়, হবে ব্যর্থতার প্রস্থান।

 

বর্তমানে আমরা বাস করছি বিজ্ঞানের এক চরম উৎকর্ষতার যুগে। বিজ্ঞানের এমন উৎকর্ষতার মধ্যে আমাদের জন্য আশির্বাদস্বরূপ হয়ে এসেছে অজানা অনেক কিছুই, এগুলোকে যদি শ্রেণীবিভাজনের ভিত্তিতে বিভক্ত করতেই হয়, তবে সবার আগে যে বিভাগটি আমাদের প্রথমেই নজর কাড়বে তা হল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি।

 

দোলনা হতে কবর পর্যন্ত মানুষের শিক্ষাকালএই হাদিসটি আমারা কমবেশি সবাই অবগত। শৈশব থেকে যৌবন অবদি যে শিক্ষাকাল তা আমরা অতিবাহিত করি একটা সুন্দর ক্যারিয়ার গঠনের জন্যই। শিক্ষার মুল উদ্দেশ্য তা না হলেও আমরা অন্তত ১০০ জনের মধ্যে  প্রায় 9০ জনই শিক্ষা অর্জন করি একটা সুন্দর ক্যারিয়ার এর জন্যই।

 

আইসিটি হচ্ছে ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজিএর সংক্ষিপ্ত রূপ। যে সকল জিনিস আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে বিজ্ঞান আজ চরম উন্নতির স্বর্ণ-শিখরে পৌঁছেছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আইসিটির ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি। হেন জিনিস নেই যে ক্ষেত্রে আমরা আইসিটিকে সংযুক্ত করছিনা কিংবা এটিকে আমাদের ব্যবহারের কাজে লাগাচ্ছিনা ক্যারিয়ার ক্ষেত্রেও যে এটির ব্যতিক্রম হবে না, তা অনুমান করাই স্বাভাবিক আইসিটির ব্যবহার সম্পর্কে জেনে তাকে বাস্তব ও ক্যারিয়ার জীবনের ক্ষেত্রে যথার্থ স্ফুরণ ঘটানো এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার বনাম আইসিটিঃ

ভবিষ্যতে আইসিটিবিহীন একটি দিনও কল্পনা করা সম্ভব হবে না আইসিটির বহুমুখী ব্যবহারের কারণে কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মী হিসেবে যোগ দেয়া কিংবা নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করা উভয়ক্ষেত্রে আইসিটিকে এড়িয়ে যাওয়া মোটেও সম্ভব হবে না। নিজের ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে তাই আইসিটিতে দক্ষতা উন্নয়নের জন্য নিজেকে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। সাধারণ অফিস সফটওয়্যারের ব্যবহার, ইন্টারনেট, -মেইল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ প্রায় সব কিছুতেই প্রাথমিক দক্ষতা না থাকলে আগামীতে কোথাও চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে অন্যদিকে ওয়েবসাইট তৈরি, কম্পিউটারের নিরাপত্তা, সফট্ওয়্যার নির্মাণসহ বিশেষায়িত কাজের চাহিদাও বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির প্রধান উপাদানটি বলা চলে কম্পিউটার। একটি কম্পিউটারে যে কতশত কাজ আছে তা কল্পনাতীত।

 

কম্পিউটার সায়েন্স, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, অফিস অটোমোশন সিস্টেম ডিজাইন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিক্ ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োইনফরমেটিক্স, জেনেটিং ইঞ্জিনিয়ারিং, মোবাইল কমিউনিকেশন, ডেটা কমিউনিকেশন এমন হাজারটি ক্যারিয়ারের নাম বলা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশে প্রোগ্রামিং এ সম্ভাবনার দ্বার দিন দিন উন্মোচিত হচ্ছে। প্রোগ্রামিং এ চাহিদা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অনেক বেশী। সবকিছুই এখন কম্পিউটারাইজড হচ্ছে। স্মার্টফোনের বিভিন্ন অ্যাপস প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমেই করা। প্রযুক্তি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে খুব অল্পদিনের মধ্যে দেখবো আমরা যার যার কর্মস্থলে বসেই ঘরের টিভি, ফ্যান, রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, মোটরগাড়ীসহ সকল ইলেকট্রনিক্স ও ইলেট্রিক্যাল যন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি। মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে মানুষের রোগ নির্ণয় করা যাবে। দিন দিন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের আকৃতি ছো্টো হয়ে আসছে ও এদের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ন্যানোপ্রযুক্তির কল্যানে। এটি আরো বৃদ্ধি পাবে। রান্নাঘর থেকে স্যাটেলাইট পরিচালনা পর্যন্ত সবকিছুই মানুষের হাতের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে অচিরেই। এর সব কিছুই পরিচালিত হবে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে।

 

বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং সাইটে আমাদের দেশের অনেক প্রোগ্রামার দেশে বসেই গুগল, মাইক্রোসফট, ইনটেল, ফেসবুকসহ বিশ্বখ্যাত কোম্পানিগুলোর কাজ করতে পারছেন। তাছাড়া ভালো প্রোগ্রামাররা ইচ্ছা করলে নিজেরাই সফটওয়্যার ফার্ম খুলছেন। পেশা হিসেবে প্রোগ্রামিংয়ের আলাদা একটা গুরুত্বও আছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি বিষয়ে পড়াশোনা করে সরাসরি বিশ্বের নামকরা অনেক সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন অনেকে প্রতিবছরই বাংলাদেশ থেকে অনেকেই নিজের মেধাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিচ্ছে বিশ্বখ্যাত সব কোম্পানিতে। আবার আরেকটি মজার ব্যাপার হলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এইসব কোম্পানিতে আবেদন করার প্রয়োজন হয় না। তারা নিজেরাই বিভিন্ন দেশ থেকে ভালো ভালো প্রোগ্রামারকে খুঁজে বের করে নেয়।

 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে কাজ করার রয়েছে আরো অনেক সুবিধা। এতে কোনো অফিসে না গিয়েই কাজ করার সুযোগ রয়েছে। উন্নত দেশগুলোর ভালো ভালো কোম্পানি তাদের নিজেদের দেশের কর্মীদের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের কর্মীদের কাজ করার সুযোগ দেয়। আমাদের দেশের আইসিটি কর্মীরা বর্তমানে বিশ্বমানের, আমাদের দেশের প্রোগ্রামারসহ অনেক আইসিটি কর্মী ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করছে আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেনের মতো দেশগুলোর বড় বড় কোম্পানিতে।

ফ্রিল্যান্সের কাজ করার জন্য ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে যোগাযোগের জন্য ইংরেজি ভাষায় ভালো দক্ষতাও থাকতে হয়। এছাড়াও আইসিটিতে রয়েছে কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং সাইটে কাজ করার ব্যাপক সুযোগ। যেসব কোম্পানি নিজেরা সার্ভার ব্যবহার করে তাদের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরির ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষ লোকের প্রয়োজন হয়। তাই চাকরির বাজারেও এর অবস্থান ভালো। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে দক্ষ লোকের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। পরবর্তী ২-৩ বছরের মধ্যে এর চাহিদা দ্বিগুণ হবে বলে আমার ধারনা।

 

বাংলাদেশেও ইতোমধ্যে বেশ কিছু সফটওয়্যার কোম্পানি তৈরি হয়েছে যারা বাংলাদেশে তৈরি বিভিন্ন সফটওয়্যার, মোবাইল অ্যাপস পৃথিবীর অন্যান্য দেশে রপ্তানি করছে। এটি আমাদের জন্য অবশ্যই গর্বের বিষয় বটে বর্তমান তরুণ প্রজন্মের অনেক শিক্ষার্থী এই পেশার সঙ্গে জড়িতভবিষ্যতে এই সেক্টরে আরো অনেক দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন হবে। কাজেই ক্যারিয়ার হিসেবে আইসিটির সম্ভাবনা অনেক উজ্জ্বল। এসব বিবেচনা করে বিশেষকরে আমাদের যারা তরুন প্রজন্ম তারা নিজেরা আইসিটিতে দক্ষতা বাড়িয়ে নিতে এখন থেকেই সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন ।

 

 বাংলাদেশে ক্যারিয়ার গঠনে আইসিটির ব্যবহারঃ

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এখন কর্মক্ষেত্রে আইসিটির বহুমুখী ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই প্রভাব ও পরিসর ক্রমাগত বেড়ে চলছে। কর্মক্ষেত্রে আইসিটির ২ ধরণের ব্যবহার লক্ষ্য করা জায়। প্রথমত প্রচলিত কর্মক্ষেত্র গুলোতে আইসিটির প্রয়োগের ফলে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণ, অন্যদিকে আইসিটি নিজেই নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করছে। প্রচলিত কর্মক্ষেত্র ও পুরাতন ব্যবসা-বাণিজ্যে আইসিটি ব্যাবহারের ফলে কর্মীদের দক্ষতা, জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে এর ফলে সেবার মান ও উন্নত হয়েছে। বর্তমানে দেশের অধিকাংশ চাকরির ক্ষেত্রে আইসিটি ব্যবহারে সাধারণ দক্ষতা একটি প্রাথমিক যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়। ব্যাংক, বীমা থেকে শুরু করে বহুজাতিক কোম্পানি, সরকারি  দপ্তরে কাজ করার জন্য ওয়ার্ড প্রসেসর থেকে উপস্থাপনা সফটওয়্যার, ইন্টারনেট ব্রাউজিং থেকে ই-মেইল, নানান ধরণের বিশ্লেষণী সফটওয়্যার ব্যবহারে দক্ষ হতে

হচ্ছে পাশাপাশি বিভিন্ন বিশেষায়িত সফটওয়্যার ব্যবহারে দক্ষ হতে হচ্ছে

 

অন্যদিকে আইসিটি নিজেই একটি বড় আকারের কর্মবাজার সৃষ্টি করেছে। হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার থেকে শুরু করে ওয়েবসাইট নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি এখন দক্ষ কর্মীদের জন্য একটি বিরাট কর্মক্ষেত্র। কেবল দেশে নয়। আইসিটিতে দক্ষ কর্মীরা দেশের বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠানে অথবা স্বতন্ত্রভাবে কাজ করতে পারে। এই কাজের একটি বড় অংশ দেশে বসেই সম্পন্ন করা যায়। আউটসোর্সিং করে এখন অনেকেই বাংলাদেশের জন্য মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে ক্যারিয়ার গঠনে আইসিটির সাথে সংযোগ স্থাপনকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্র গুলোও ঠিক সেভাবেই গঠিত, যেখানে ভালো করতে হলে একে অপরের সাথে আইসিটি বিষয়ক ভালো সংযোগ স্থাপনে পারদর্শী হতে হয়। আইসিটি এক্ষেত্রে পালন করছে প্রভাবকের ভূমিকা

 

ক্যারিয়ার গঠনে শিক্ষা এবং ইন্টারনেটের ব্যবহারঃ 

ক্যারিয়ার গঠনে শিক্ষাই হলো গিয়ে সবচাইতে বড় পরশ পাথর। পরশ পাথরের ছোঁয়ায় যেমন লোহাও সোনা হয়, তেমনি শিক্ষা নামক পরশ পাথরের ছোঁয়ায় বদলে যায় পুরো ক্যারিয়ার শিক্ষা বর্তমানে উল্লেখযোগ্য অবস্থানে গিয়ে পৌঁছেছে আর এই অবস্থানে আসার পেছনে রয়েছে আইসিটির বড় অবদান। আইসিটির অনেক উপাদানই এক্ষেত্রে ক্রিয়াশীল এবং এদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ইন্টারনেটবর্তমানে এমন জিনিস খুঁজে মেলা ভার যেখানে ইন্টারনেট এর উপস্থিতি নেই। শিক্ষাও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয় এবং আজকের শিক্ষা পদ্ধতি সহজতর হয়েছে ইন্টারনেটের পরশেই, এর তাক লাগানো সব কার্যাবলীর মাধ্যমে।

ভবিষ্যতে আইসিটিবিহীন একটি দিন ও কল্পনা করা সম্ভব নয়। তাই আমাদের ভাবতে হচ্ছে কি করে ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে আমরা অনেকটুকুই এগিয়ে গিয়েছি। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে আইসিটি ও ইন্টারনেট মিলে তৈরি করেছে একটা বিস্তৃত জগত এবং এই জগতের সিংহভাগই আমাদের জানা নেই। অর্থাৎ প্রায় অনেক অংশই আমাদের অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। অনাবিষ্কৃত ব্যাপার গুলো সম্পূর্ণ আয়ত্তে আনার আগে আমাদের বসে থাকলে চলবে না, বরং আমাদের জানা জিনিস গুলো কিভাবে কাজে লাগানো যায় সে সম্পর্কে ভাবা এখন সময়ের দাবি।

 

আইসিটি বিষয়ক ক্যারিয়ার গঠনে যোগ্যতাঃ

প্রযুক্তি খাতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রযুক্তির কল্যাণে আজকে আমরা উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছি আর দেশে বসেই বিদেশের নামি দামি কোম্পানির সঙ্গে কাজ করতে পারছি। যদি কেউ অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তা করে সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে যথা- কঠোর পরিশ্রমী, আইসিটিতে সেক্টরভিত্তিক বিশদ জ্ঞান, একাগ্রতা কাজের প্রতি যত্নশীল এবং সর্বোপরি ইংরেজিতে ভালো দক্ষতা।

 

পরিশ্রম সাফল্যের চাবিকাঠিএ কথাটা আমাদের সবার জানা আছে, ফ্রিল্যান্সিংয়ে আপনাকে ঠিক এই কাজটিই করতে হবে। মানে সফলতার জন্য কঠোর পরিশ্রম। ফ্রিল্যান্সিংয়ে দ্বিতীয় সুযোগ বলে কিছু নেই, একটু আলসেমির কারণে কাজ একটু খারাপ হয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেয়া হবে না। কারণ অনেক অনেক অভিজ্ঞ লোক বসে রয়েছে নির্ভুলভাবে কাজ করে দেওয়ার জন্য। মাঝে মাঝে একজন দক্ষ ফ্রিল্যান্সারকে টানা ১৫ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। এই ধরনের চাপের মধ্যে কাজ করার মনোবল থাকতে হবে।

 

আইসিটিতে সেক্টরভিত্তিক জ্ঞান যদি ১০০ তে ৯৯ হয় তাহলে তিনি ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য যোগ্য লোক নন যোগ্যতা ১০০ তে ১০০ হতেই হবে। কারণ ফ্রিল্যান্সিং এ ক্লায়েন্টরা মনে হয়’ ‘পারব’-এ ধরনের মতবাদে বিশ্বাসী নয়। তারা দুটো উত্তর শুনতে চাইবে তা হল হ্যাঁবা নাহ্যাঁ উত্তর আপনি তখনি দিতে পারবেন যখন যোগ্যতা ১০০ তে ১০০ থাকবে এবং আত্মবিশ্বাসী হওয়া যাবে। ব্যক্তিগত মত থেকে যোগ্যতা প্রসঙ্গে যদি বলতে যাই তাহলে বলতে হবে কম্পিউটারের সঙ্গে জড়িত এ রকম কিছু সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করাই ভালো। কারণ এতে করে আপনি আপনার মেধা সারা বিশ্বে সহজে তুলে ধরতে পারবেন। আমাদের দেশে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখান থেকে কম্পিউটার বিষয়ে ভালো দক্ষতা অর্জন করার সুযোগ পাওয়া যায়। কোর্সগুলো অনলাইন ক্যারিয়ার গড়ার জন্য যথেষ্ট ভূমিকা রাখে বলে আমি মনে করি। তবে মনে রাখতে হবে একটি প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করে, কিন্তু চলতে হবে আপনার নিজেকেইএছাড়া গুগল ও ইউটিউব থেকে বিভিন্ন বিষয়ে সার্চ আপনার দক্ষতা বাড়াতে পারেন।

 

ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে ইংরেজিতে ভালো দক্ষতা থাকা আবশ্যক। যেহেতু ফ্রিল্যান্সিংয়ে বেশিরভাগ ক্লায়েন্ট বিদেশি সেহেতু তাদের সঙ্গে ইংরেজিতেই কথোপকথন করতে হবে। ক্লায়েন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে না পারলে কোনো কাজই সফলভাবে করতে পারবেন না কারণ তার কাজের দরকারি জিনিসগুলো বুঝতে পারবেন না। ইংরেজিতে কথা বলতে ও লিখতে দুটোতেই পারদর্শী হতে হবে।  আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষের এ দুর্বলতা রয়েছে। সাধারণত একজন সফল ফ্রিল্যান্সার একটা সময় পরে উদ্যোক্তা হতে পারে কারণ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে যেয়ে, একজন উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য যে সকল বৈশিষ্ট্য লাগে তা তার মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে। তাই একজন দক্ষ লোক ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে নিজের ভবিষ্যৎ খুব সহজে তৈরি করে নিতে পারে।

            

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারের ভিশন-202:

আমেরিকা, ইংল্যান্ড, চীন, জাপানের মতো প্রযুক্তি নির্ভর দেশকে পেছনে ফেলে ফ্রিল্যান্সিং-এ বর্তমানে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে, প্রথমে আছে ভারত। 2021 সাল নাগাদ বাংলাদেশ পাবে 100% ইন্টারনেট পেনিট্রেশন, 90% -সার্ভিস, 20 লক্ষ তরুন-তরুনীর কর্মসংস্থান, 5 বিলিয়ন ডলারের আইসিটি রপ্তানির সুযোগ। এই লক্ষে বর্তমান সরকার 253 কোটি টাকা ব্যয়ে যশোরের বেজপাড়ায় 12 একর জমির উপর গড়ে তুলেছে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, যার কাজ শুরু হয় 2014 সালে, এখানে রয়েছে 15তলা বিশিষ্ট এনটিসি ভবন, তিনতলা বিশিষ্ট ডরমেটরি ভবন, অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের ক্যান্টিন ও ক্যাফেটরিয়া। এসকল ভবনে রয়েছে তিন তারকা বিশিষ্ট আন্তর্জাতিকমানের 90টি কক্ষ, জেমনেসিয়াম, 800 আসন বিশিষ্ট অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত কনফারেন্স রুম, ট্রেনিংরুম, পার্কের সামনে রয়েছে 5 একর জমির উপর গড়ে তোলা দৃষ্টিনন্দন জলাধার। প্রায় 12 হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে এ পার্ক। এছাড়াও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিল্পের বিকাশ ও এই খাতে বিশ্বমানের কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে 355 একর জমিতে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি নির্মাণের কাজ প্রায় সমাপ্তির দিকে, রাজশাহীতে তৈরি হচ্ছে সিলিকন সিটি, সিলেটে ইলেক্ট্রনিক সিটি, খুলনাতে আইসিটি হাইটেক পার্ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ শেষের পথে। এখানেও প্রায় 15হাজার আইসিটি এক্সপার্টের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা বেড়েই চলেছে হু হু করে। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকাটাই এখনকার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করার নিমিত্তে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হল আইসিটি।

 

2002 সালে নভেম্বরে ৬৮ হাজার ৫৬৩ বর্গফুট জায়গা নিয়ে ঢাকায় আইসিটি ইনকিউবেট্ট যাত্রা শুরু করে। এতে এখন ৪৮টি সফটওয়্যার ও তথ্য প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ৭ হাজার প্রশিক্ষিত কর্মী কাজ করছেন, এখানে মোট বিনিয়োগ 1৩৮ কোটি টাকা এবং রপ্তানি প্রায় ১২ কোটি ডলার এরকম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদাহরণ দেয়া যায়, যেগুলো সামগ্রিক উন্নতিকে তরান্বিত করে চলেছে নিরন্তর। যাই হোক,বাংলাদেশ একটা স্বল্প আয়ের দেশ থেকে ‍উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। আর এর পিছনে সিংহভাগ অবদানই আইসিটির।

 

পরিশেষে বলতে পারি, আইসিটির জন্মই হয়েছে সর্বোচ্চ মানবকল্যাণের জন্যে, তাই আইসিটি ক্ষেত্রে উন্নতি ত্বরান্বিত করতে না পারার মানেই জাতি হিসেবে এক বিরাট ব্যর্থতা।

-------- 0 -------

 

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি