প্রধান শিক্ষক
২৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ণ
সন্ধি নিয়ে আলোচনা
স্বরসন্ধি সম্পাদনা
স্বরধ্বনির সাথে স্বরধ্বনির যে সন্ধি হয় তাকে স্বরসন্ধি বলে।
যেমন, সিংহাসন = সিংহ + আসন
সিংহ = স্+ই+ং+হ্+অ ; আসন = আ+স্+অ+ন্+অ
বিদ্যালয় = বিদ্যা + আলয়
হিমালয় = হিম + আলয়,
দেখা যাচ্ছে 'অ' এবং 'আ' মিলে স্বরসন্ধিতে 'আ' হয়।
স্বরসন্ধির সুত্র সম্পাদনা
১. অ/আ + অ/আ = আ সম্পাদনা
উদাহরণ: সিংহাসন = সিংহ + আসন (স্+ই+ং+হ্+অ + আ+স্+অ+ন্+অ = স্+ই+ং+হ্+আ+স্+অ+ন্+অ = সিংহাসন)
২. ই/ঈ + ই/ঈ = ঈ সম্পাদনা
উদাহরণ: সতীশ = সতী + ঈশ (স্+অ+ত্+ঈ + ঈ+শ্+অ = স্+অ+ত্+ঈ+শ্+অ = সতীশ)
৩. উ/ঊ + উ/ঊ = ঊ সম্পাদনা
উদাহরণ: বধূৎসব = বধূ + উৎসব (ব্+অ+ধ্+ঊ + উ+ত্+স্+অ+ব্+অ = ব্+অ+ধ্+ঊ+ত্+স্+অ+ব্+অ = বধূৎসব)
৪. অ/আ + ই/ঈ = এ সম্পাদনা
উদাহরণ: মহেশ = মহা + ঈশ (ম্+অ+হ্+আ + ঈ+শ্+অ = ম্+অ+হ্+এ+শ্+অ = মহেশ)
৫. অ/আ + উ/ঊ = ও সম্পাদনা
উদাহরণ: বঙ্গোপসাগর = বঙ্গ + উপসাগর (ব্+অ+ঙ্+গ্+অ + উ+প্+অ+স্+আ+গ্+অ+র্+অ = ব্+অ+ঙ্+গ্+ও+প্+অ+স্+আ+গ্+অ+র্+অ = বঙ্গোপসাগর)
৬. অ/আ + ঋ = অর্ সম্পাদনা
উদাহরণ: সপ্তর্ষি = সপ্ত + ঋষি (স্+অ+প্+ত্+অ + ঋ+ষ্+ই = স্+অ+প্+ত্+অ+র্+ষ্+ই = সপ্তর্ষি)
৭. অ/আ + এ/ঐ = ঐ সম্পাদনা
উদাহরণ: জনৈক = জন + এক
৮. অ/আ + ও/ঔ = ঔ সম্পাদনা
উদাহরণ: পরমৌষধ = পরম + ঔষধ
৯. ই/ঈ + ই/ঈ ছাড়া অন্য স্বরবর্ণ = ্য্ সম্পাদনা
উদাহরণ: ন্যূন = নি + ঊন
১০. উ/ঊ + উ/ঊ ছাড়া অন্য স্বরবর্ণ = ্ব সম্পাদনা
উদাহরণ: অনু + অয় = অন্বয়
১১. ঋ + ঋ ছাড়া অন্য স্বরবর্ণ = ্র্ সম্পাদনা
উদাহরণ: পিত্রালয় = পিতৃ + আলয়
১২. এ + অন্য স্বরবর্ণ = অয়্ সম্পাদনা
উদাহরণ: নয়ন = নে + অন
১৩. ঐ + অন্য স্বরবর্ণ = আয়্ সম্পাদনা
উদাহরণ: গায়ক = গৈ + অক
১৪. ও + অন্য স্বরবর্ণ = অব্ সম্পাদনা
উদাহরণ: গবেষণা = গো + এষণা
১৫. ঔ + অন্য স্বরবর্ণ = আব্ সম্পাদনা
উদাহরণ: নাবিক = নৌ + ইক
ব্যঞ্জনসন্ধি সম্পাদনা
স্বরে আর ব্যঞ্জনে অথবা ব্যঞ্জনে ও ব্যঞ্জনে অথবা ব্যঞ্জনে ও স্বরে যে সন্ধি হয় তাকে ব্যঞ্জন সন্ধি বলে। ব্যঞ্জনসন্ধি মূলত কথ্য রীতিতে সীমাবদ্ধ। প্রকৃত বাংলা ব্যঞ্জন সন্ধি মূলত সমীভবন এর নিয়মে হয়ে থাকে। ব্যঞ্জন সন্ধিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
যেমন, বিপজ্জনক = বিপদ + জনক
বিপদ = ব্+ই+প্+অ+দ্+অ ; জনক = জ্+অ+ন্+অ+ক্+অ
এখানে 'অ' এবং 'জ' মিলে 'জ্জ' হচ্ছে।
ব্যঞ্জনসন্ধির সূত্র সম্পাদনা
১. বর্গের প্রথম বর্ণ (ক, চ, ট, ত/ৎ, প) + স্বরবর্ণ = বর্গের তৃতীয় বর্ণ (গ, জ, ড/ড়, দ, ব) সম্পাদনা
ষড়ঋতু = ষট্ + ঋতু
২. বর্গের প্রথম বর্ণ + বর্গের পঞ্চম বর্ণ = বর্গের প্রথম বর্ণ বদলে সেই বর্গেরই পঞ্চম বর্ণ হয় সম্পাদনা
মৃন্ময় = মৃৎ + ময়
৩. ত/দ + জ/ঝ = জ্জ/জ্ঝ সম্পাদনা
বিপজ্জনক = বিপদ + জনক
৪. ত/দ + চ/ছ = চ্চ/চ্ছ সম্পাদনা
উচ্ছেদ = উৎ + ছেদ
৫. ত/দ + ল = ল্ল সম্পাদনা
তল্লিখিত = তদ্ + লিখিত
৬. ম + স্পর্শবর্ণ (ক-ম) = ম বদলে ং হয়, অথবা যেই বর্গের স্পর্শবর্ণ সেই বর্গেরই পঞ্চম বর্ণ হয় সম্পাদনা
সংগীত/সঙ্গীত = সম্ + গীত
৭. ম + অন্তঃস্থ বর্ণ (য, র, ল, ব)/ উষ্মবর্ণ (শ, ষ, স, হ) = ম বদলে ং হয় সম্পাদনা
বশংবদ = বশম্ + বদ
৮. স্বরবর্ণ + ছ = চ্ছ সম্পাদনা
পরিচ্ছেদ = পরি + ছেদ
৯. ত/দ + হ = দ্ধ সম্পাদনা
উদ্ধত = উৎ + হত
১০. ত-বর্গীয় বর্ণ (ত, থ, দ, ধ) + শ = চ্ছ সম্পাদনা
উচ্ছ্বাস = উৎ + শ্বাস
১১. শ/ষ + ত = ষ্ট সম্পাদনা
দৃষ্টি = দৃশ্ + তি
১২. শ/ষ + থ = ষ্ঠ সম্পাদনা
ষষ্ঠ = ষষ + থ
বিসর্গসন্ধি সম্পাদনা
বিসর্গসন্ধি ব্যঞ্জন সন্ধির অন্তর্গত। বিসর্গ সন্ধির প্রকারভেদগুলো হচ্ছেঃ র জাত বিসর্গ এবং স জাত বিসর্গ। বিসর্গসন্ধি র্ ও স্ এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
যেমন, আশীর্বাদ = আশীঃ + বাদ
আশীঃ = আ+শ্+ঈ+ঃ ; বাদ = ব্+আ+দ্+অ
এখানে 'ঃ' এবং 'ব' মিলে 'র্' হচ্ছে।
নিপাতনে সিদ্ধসন্ধি সম্পাদনা
যেসব সন্ধির নিদিষ্ট কোন নিয়ম নেই তাদেরকে নিপাতনে সিদ্ধসন্ধি বলে
যেমন, পরস্পর = পর + পর।
(সংগৃহীত)