Loading..

ম্যাগাজিন

০৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০৪:৫৬ অপরাহ্ণ

লাইব্রেরী, বিজ্ঞানাগার ও আইসিটি ল্যাবের ব্যবহার বাড়িয়ে মোবাইল, ফেইসবুকের নেশা দূর করতে হবে




দুই-একটি ব্যতিক্রম ঘটনা ছাড়া প্রায় সবাই একমত হবেন এবং একই সুরে বলবেন যেন শিক্ষার্থীরা পড়তে চায় না, জোর করে পড়ার টেবিলে বসাতে হয়৷ আবার পড়ার টেবিলে বসলেও পড়ায় মন থাকে না৷ বিভিন্ন অাড্ডাবাজিতে যে সময় কাটায় তা-ও নয়৷ বদভ্যাস একটাই- মোবাইল, ফেইসবুক, মোবাইল গেইম ইত্যাদি৷ এগুলো বড়ই নেশা৷ খাবারের কথাও ভুল যায় যখন হাতে একটা মোবাইল থাকে৷
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কক্ষের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের উপস্থিতি বেশি৷ পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল ও উচ্চ শিক্ষার ভর্তির ফলাফলও এর ব্যতিক্রম নয়৷ কেন এ রকম হচ্ছে? কারন মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় মোবাইল ও ফেইসবুক আসক্তি কম থাকে৷ পড়াশোনার বিমুখীতার পাশাপাশি দিন দিন নৈতিকতারও কবর রচিত হচ্ছে৷ পরীক্ষায় ঢালাওভাবে প্রায় শতভাগ পাস সেটাকে আরো উসকিয়ে দিচ্ছে! কিছু না জেনে সনদ অর্জন হতাশা বাড়িয়ে দিচ্ছে৷ যে যেটার যোগ্য নয় সেটা পেতে মরিয়া হয়ে নিজের ওপর নিজেই অন্যায় করছে এবং পরিবার ও সমাজের বোঝা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে৷
এক কালে শিক্ষার্থীরা অবসর সময় গাছ তলায় বসে, নদীতে নৌকা ভাঁসিয়ে নৌকাতে বসে, বাড়ির দক্ষিনে চেয়ার পেতে, গাছ তলায় বসে বই পড়ার প্রতিযোগিতা ছিল৷ কে কয়টা বই পড়েছে সেগুলো নিয়ে প্রতিযোগিতা চলতো৷ এমনকি ক্লাশের ফাঁকে-ফাঁকে শিক্ষার্থীরা শ্রেণি কক্ষেই বসে বই পড়তো৷ বই পড়া ছিল এক ধরনের অপ্রতিরোধ্য নেশা৷ অর্জিত গল্প, কবিতা, কাহিনী ইত্যাদি নিয়ে পরস্পর আলাপ-আলোচনা ও তর্কে মত্ত থাকতো৷ সে নেশা ও প্রতিযোগিতা এখন মোবাইল, ফেইসবুক  ও মেসেঞ্জার চেটিংয়ে দখল করে নিয়েছে
একটা খারাপ নেশাকে দূর করতে হলে অারেকটা ভালো নেশার আভির্ভাব ঘটাতে হবে৷ একটি বদভ্যাস দূর করতে হলে আরেকটি সু-অভ্যাসের অনুশীলন করতে হবে৷ মোবাইল ও ফেইসবুকের নেশা দূর করতে হলে হারানো ঐতিহ্য বই পড়ার নেশা শিক্ষার্থীদের মাঝে জাগিয়ে তোলার কৌশল বের করতে হবে৷ খেলার মাঠগুলো তাদের জন্য উম্মুক্ত করে দিতে হবে৷ স্কুল মানেই শুধু পড়া দেয়া আর নেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বই পড়ার জন্য অালাদা রুটিন করে বই পড়ার প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে হবে৷ 
এ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা হবে কীভাবে? বইয়ের ভারে শিক্ষার্থীরা বাঁকা হয়ে যাচ্ছে৷ কারিকুলামে বইয়ের সংখ্যা আরো যোগ হচ্ছে৷ ক্লাশ রুটিনে বই পড়ার জন্য এবং কম্পিউটার ল্যাব ব্যবহার করার জন্য আলাদা সময় বের করার কোনো সুযোগ নাই বললেই চলে৷ এত বই কেন? 
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি স্কুলেই লাইব্রেরিয়ান অাছেন৷ বইয়ের সংখ্যা কম হোক অার বেশি হোক দু'একটা তাক যুক্ত একটা লাইব্রেরীও আছে৷ কিন্তু কয়টা স্কুলে এ লাইব্ররীগুলোর তালা খোলা হয়? কতটা শিক্ষার্থীকে বই পড়ার জন্য ও লাইব্ররী থেকে বই ধার নেয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করা হয়? প্রতিষ্ঠানের কত শতাংশ শিক্ষার্থী নিয়মিত লাইব্ররীতে যায়, বই পড়ে ও বই ধার করে? লাইব্রেরিয়ানকে কি শিক্ষকদের চেয়ে ক্লাশ কম দেয়া হয়? ক'জন লাইব্রেরিয়ান কি স্ব ইচ্ছায় নিজ দায়িত্বটা শতভাগ পালন করতে পছন্দ করেন? কোনো কোনো লাইব্রেরিয়ান স্কুল লাইব্রেরিতে বসতেও নাকি লজ্জা পান! স্কুল পরিদর্শনে লাইব্রেরি ব্যবহার করার জন্য ভালোভাবে তদারকি হয় কি? তাহলে ঐ মোবাইল- ফেইসবুকের নেশা তাদের নিকট বই পড়াতে রিপ্লেস হবে কিভাবে?
সরকার প্রতিটি উপজেলায় কতিপয় স্কুলে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করেছে৷ এ ধারা অব্যাহত আছে৷ আশা করা যাচ্ছে সকলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি ল্যাব স্থাপন করা হবে৷ কিন্তু অনেক স্কুলে আইসিটি শিক্ষকই নাই৷ ল্যাব সহকারি আসবে আরো এক বছর পরে৷ যে ল্যাবগুলো স্থাপন করা হয়েছে সেগুলো কি যথাযথভাবে ব্যবহার করা হয়? শিক্ষার্থীরা সকাল বিকাল প্রাইভেট-কোচিংয়ের পেছনে দৌড়ায়৷ সারাদিন সিলেবাস শেষ করতে ক্লাশ আর ক্লাশ৷ ল্যাব ব্যবহার করার সুযোগ কোথায়? আবার শিক্ষক ব্যতীত তাদেরকে স্বাধীনভাবে ল্যাব ব্যবহারের সুযোগও দেয়া যায় না৷ সেখানেও আছে ফেইসবুক ও ইউটিউবের ঝুকিপূর্ণ সাইট ভিজিটের আশংকা৷
দেশের প্রতিটি স্কুলেই ছোট-বড় বিজ্ঞানাগার আছে৷ বিদ্যালয়ের নিজ খরচে ও সরকারিভাবে বিজ্ঞানের যন্ত্রপাতি দিয়ে বিজ্ঞানাগার পরিপূর্ণ করা হলেও অনেক বিজ্ঞানাগারের তালা বছরে একদিনও খুলে না৷ ব্যবহারি ক্লাশ রূপ নেয় তত্বীয় ক্লাশে৷ গালিভারের ভ্রমন কাহিনীরমত বিজ্ঞানের ব্যবহারিক ক্লাশ চলতেও দেখা যায়৷ এতে করে বিজ্ঞান পড়ার কোনো আনন্দ থাকে না শিক্ষার্থীদের৷ যদি বিজ্ঞানের মজার মজার এক্সপেরিমেন্ট বিজ্ঞানাগারে দেখানো হতো তাহলে হয় তা অনুশীলনের জন্য কেউ কেউ বিজ্ঞান বক্স কিনে বাড়িতে অনুশীলন করতো৷ এতে করে মোবাইলের নেশা বিজ্ঞান বক্সে ও গল্পের বইয়ে রিপ্লেস হতো৷ কিন্তু কতটা প্রতিষ্ঠানে তা কার্যকর করা হচ্ছে?

পরিশেষে বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের মাঝে পড়ার নেশা জাগরিত করতে হলে তাদের ব্রেইন ওয়াশ করতে হবে সুস্থ বিনোদন, বই পড়ার অভ্যাস সৃষ্টি করে, বিজ্ঞান ও কম্পিউটার ল্যাবের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে৷ শিশুরা স্বভাবতই অভ্যাস প্রিয় ও অভ্যাসে আসক্ত৷ তাই তাদের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা, নৈতিকতা সৃষ্টি ও পড়ার টেবিলে বসাকে  অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিতে হবে৷ এক গাদা পাঠ্য বইয়ের তালিকা কমিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে মস্তিস্ক সুস্থ রাখতে অন্য বই পড়ার সুযোগ দিতে হবে৷ বিজ্ঞানাগারের যথাযথ ব্যবহার হলে শিক্ষার্থীরা বাড়িতে গিয়েই এক্সপেরিমেন্ট করতে চাইবে৷ সময় পেলেই বই পড়তে চাইবে৷ যাদের বই পড়ার অভ্যাস আছে তারা কখনো ক্লাশ কিংবা শ্রেণি কার্যক্রমের কোনো অংশই ফাঁকি দেয় না৷ তাদের ব্রেইন সুস্থ থাকে দু:শ্চিন্তা তাদেরকে কাবু করতে পারে না৷ বই যার বন্ধু সে অবশ্যই সকলের জন্য নিরাপদ৷

লেখক- মোহাম্মদ মহসিন মিয়া
সহকারি প্রধান শিক্ষক
খেড়িহর আদর্শ উচ্চ  বিদ্যালয়
শাহরাস্তি, চাঁদপুর৷

















   

















   

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি