Loading..

ম্যাগাজিন

০৫ ফেব্রুয়ারি , ২০২০ ০৯:০৬ অপরাহ্ণ

সর্তকীকরণ

নোভেল করোনা ভাইরাসের আগমন

 করোনা ভাইরাসের সূত্রপাত চীনের বাজারগুলি থেকে। এখানে বিপুল পরিমাণে মাছ জীবিত প্রাণী বিক্রি হয়। যদিও বিজ্ঞানীরা এখনও ধরতে পারেনি যে এই ভাইরাসের আসল সূত্রপাত কোথা থেকে। তবে মনে করা হচ্ছে ঘোড়া বাদুড় থেকেই এই রোগ মানুষের শরীরে বাসা বেঁধেছে। তাই কোনওভাবে যদি কোনও পর্যটক অসুস্থ হয়ে পড়েন তবে যেন অবশ্যই খবর দেওয়া হয় চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে। এই রোগের কোনও ভ্যাকসিন বা জীবাণু-প্রতিরোধ ওষুধ বের হয়নি, তাই এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে একটু সচেতন থাকতে হবে পর্যটকদের। এদিকে, বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক সাতটি ভারতীয় বিমানবন্দরকে হংকং সহ চীন থেকে আগত সমস্ত যাত্রীর তাপমাত্রা পরীক্ষা করার মতো পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে

সফরের সময় এই ভাইরাস থেকে সাবধান থাকুন

 হুওয়ানের রিপোর্টে জানা গিয়েছে, যাঁদের শরীরে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস (‌২০১৯-এনসিওভি)‌ ঢুকেছে তাঁদের লক্ষণগুলি হল গলা ব্যাথা, জ্বর, মাথাব্যাথা, শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া ইত্যাদি। তাই পর্যটকদের সতর্ক করা হয়েছে যে অসুস্থ মানুষদের কাছ থেকে দূরে থাকুন, বিশেষ করে যাঁদের মধ্যে ধরনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। যদি আপনি সফর করেন তবে নিউমোনিয়া বা সর্দি, নাক থেকে জল পড়ছে, কাশি হচ্ছে, এমন মানুষের থেকে দূরে থাকুন।

সিডিসি য়ের পরামর্শ   

সিডিসি হু-এর মতো স্বাস্থ্য সংস্থাগুলি পরামর্শ দিয়েছে যে পর্যটকরা হাত না ধুয়ে তাঁদের নাক, চোখ, মুখে যেন হাত না দেন। সিডিসির মতে, সাবান জল দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেণ্ড হাত রগড়ে পরিস্কার করা উচিত। যদি আপনি চীন সফরে যান তবে অবশ্যই খামার জীবিত পশুদের থেকে দূরে থাকুন।

নোভেল করোনা ভাইরাস সম্পর্কে এখন সচেতন মানুষ সবারই কম-বেশি ধারণা আছে। এজন্য নিয়ে ভূমিকা কম লিখলাম। আসলে জোর দিচ্ছি কীভাবে নিজেকে আর নিজের পরিবারকে এই রোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। কয়েকটি সাধারণ অভ্যাস মেনে চললে থেকে বেঁচে থাকা খুবই সহজ হয়ে যায়
ঘন ঘন ভালো করে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। যদি সম্ভব হয়, প্রতি ঘণ্টা পর পর হাত ধোয়া উচিত। ভালো করে বলতে অ্যালকোহল বেসড সলিউশন, যা বাজারে হেক্সিসল বা হেক্সিরাব নামে পাওয়া যায়, সেসব দিয়ে হাত ধুতে পারলে ভালো। না পারলে ভালো সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করা উচিৎ। অন্তত ২০ সেকেন্ড প্রবাহমান পানির নিচে হাতের তালু, আঙুলের ফাঁকা জায়গা, নখ ভালো করে ঘষে কবজি পর্যন্ত হাত ধোয়া। বাইরে থেকে এসে এবং খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো করে হাত ধুতে হবে।

বাইরে বের হওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করা ভীষণ জরুরি। এন৯৫ বা এন৯৯ মাস্ক ব্যবহার করতে পারলে ভালো। তবে, আমাদের দেশে এগুলো অপ্রতুল বিধায় আর যেহেতু এখনও দেশে করোনা ভাইরাসের আউটব্রেকের খবর পাওয়া যায়নি, অন্তত সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহারের অনুরোধ করছি। সার্জিক্যাল মাস্কগুলো সাধারণত লেয়ারের হয়। যেগুলো সাধারণ ক্ষেত্রে ভাইরাসকে আটকাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে নিয়ে গবেষণা চলছে। বিতর্কেরও শেষ নেই। এজন্য বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করে অন্তত ২টা মাস্ক একত্রে ব্যবহার করতে পারলে ভালো হয়। আর নীল-সাদা কোন পাশ বাইরে রাখতে হবে, সেটা নিতান্তই ব্যক্তিগত। উভয় ক্ষেত্রেই তিনটি লেয়ার থাকে যেহেতু, সুরক্ষাও একই থাকে। সাধারণত নীল পাশ বাইরেই রাখা হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, মাস্কের যে পাশ সামনে থাকে তাতে আড়াআড়িভাবে থাকা ভাঁজ গুলো যাতে নিম্নমুখী থাকে। তাহলে ভাঁজেভাঁজে ধুলোবালি আটকে থাকার সম্ভাবনা কমে যায়।
ভাইরাসগুলো সাধারণত কয়েক মিটার দূরত্ব গিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। এজন্য রোগাক্রান্ত ব্যক্তির থেকে অন্তত মিটার দূরত্ব বজায় রেখে চলাই উত্তম। আর যাদের উপসর্গ দেখা দেবে, তাদের থেকেও নিরাপদ দূরত্ব রেখে চলতে হবে। হাঁচি দেওয়ার সময় অবশ্যই নাক-মুখ ঢেকে হাঁচি দিতে হবে। প্রয়োজনে টিস্যু দিয়ে ঢেকে সেই টিস্যু ফেলে দিতে হবে যাতে সে টিস্যু থেকেও আবার জীবাণু না ছড়ায়। আর হাতের কাছে টিস্যু বা রুমাল না থাকলে হাতের কনুই বাকা করে সে ভাঁজ দিয়ে নাক ঢেকে হাঁচি দিতে হবে। হাতের তালু ব্যবহার না করাই ভালো। হাতের তালু দিয়ে সব জায়গায় স্পর্শ করা হয়, এজন্য হাতের তালু নাক বা মুখের কাছে নিলে তা থেকেও বাইরে থেকে শ্বাসনালীতে জীবাণু ঢুকার সম্ভাবনা থেকে যায়।
ভাইরাস রোদে বেশিক্ষণ থাকলে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। এজন্য বাইরে থেকে এসে ব্যবহৃত পোশাক-পরিচ্ছদ ভালো করে রোদে বা উচ্চ তাপমাত্রায় শুকাতে হবে। ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের পাবলিক প্লেস এড়িয়ে চলতে হবে। জ্বর-কাশি-সর্দি থাকলে তাদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব (অন্তত মিটার) বজায় রাখতে হবে। করমর্দন পরিহারযোগ্য।
বাজারে বা কসাইখানায় নাক ঢেকে প্রবেশ করতে হবে। বাজার থেকে কিনে আনা মাংস ভালো করে সেদ্ধ করে রান্না করতে হবে। পশু-পাখির সংস্পর্শ কিছুদিন পরিহার করাই ভালো।
এখন যেহেতু ঋতু পরিবর্তনের সময়, জ্বর-অ্যালার্জিজনিত হাঁচি কাশি বা কমন কোল্ড, কিছুটা শ্বাসকষ্ট- এগুলো খুবই নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। তাই জ্বর, মাথাব্যাথা, বমি বা শ্বাসকষ্ট হলেই প্যানিক না হয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। যদি কারোর এক্সপোজার হিস্ট্রি থাকে বা যে দেশগুলো বা শহরে কনফার্ম করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে বলে জানা গেছে কিংবা সাম্প্রতিককালে যদি চীনে ভ্রমণ করে থাকেন, তাদের মধ্যে যদি উপসর্গগুলি দেখা দেয়, তবে Institute of Epidemiology Disease Control And Research (IEDCR) এর কন্ট্রোল রুমের হটলাইনে নিজে থেকে জানানোর জন্য বলা হয়েছে।

 নম্বরগুলো হচ্ছে ০১৯৩৭১১০০১১, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯২৭৭১১৭৮৪
আশার কথা হলো, লেখার আগ পর্যন্ত জানা সংবাদ অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ভাইরাসটি ছড়ায়নি বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। এজন্য গুজব না ছড়িয়ে যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করাই শ্রেয়। ম্যাস হিস্টিরিয়া বা প্যানিক ছড়িয়ে পড়া কারোরই কাম্য নয়। আমরা নিজেরা সাবধান থাকি, অন্যকে সচেতন করি।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি