Loading..

খবর-দার

০৯ এপ্রিল, ২০২০ ০১:৩৬ অপরাহ্ণ

করোনা: কয়েকটি কার্যকর ওষুধের স্বীকৃতি ডব্লিউএইচও’র

করোনা ভাইরাসের ওষুধ তৈরিতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে পুরো বিশ্ব। এরমধ্যে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও দক্ষিণ কোরিয়া বেশ কয়েকটি কার্যকর ওষুধের নাম ঘোষণা করেছে। ইতোমধ্যে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বেশ কয়েকটি ওষুধকে স্বীকৃতিও দিয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো দেশই শতভাগ সঠিক কোন ওষুধ আবিষ্কার করতে পারেনি। সারাবিশ্বে যেভাবে গবেষণা চলছে, যে কোনো সময় আসতে পারে শতভাগ কার্যকর ওষুধ।

এখন পর্যন্ত আগে থেকে বাজারে প্রচলিত কিছু ওষুধের কার্যকারিতার সঙ্গে করোনা ভাইরাসের কিছুটা মিল থাকায় আক্রান্ত কয়েকটি দেশে সম্প্রতি কিছু ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে। এ ওষুধগুলো করোনার রোগীদের সুস্থ করে তুলতে বেশ সহায়তা করেছে। এসব ওষুধের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন নামক একটি ওষুধ। ওষুধটি ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়ে আসছে এ পর্যন্ত। সারা বিশ্বেই ওষুধটির ব্যবহার হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনও (ইউএসএফডিএ) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ করতে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার অনুমোদন করেছে। চীন ও ফ্রান্সের ওষুধ উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থাও করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ওষুধটি ব্যবহার করেছে। ভারতের মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন করোনা আক্রান্ত রোগীদের পাশাপাশি যারা ক্রমাগত করোনা আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসছেন বা সেবা দিচ্ছেন, তাদের প্রতিরোধক হিসেবে ওষুধটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।

বাংলাদেশে ইনসেপ্টা ও ডেল্টা নামে দুটি ওষুধ কোম্পানি হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন উৎপাদন করে থাকে। ইনসেপ্টা রিকোনিল নামে এবং ডেল্টা রিউমাফ্লেক্স নামে ওষুধটি বাজারজাত করে থাকে। এই দুটি ওষুধ কোম্পানি হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন বিদেশেও রপ্তানি করে থাকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে গাইডলাইনের কিছু কিছু ক্ষেত্রে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার করতে বলেছে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এসব ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। কোনোভাবেই নিজে নিজে ওষুধগুলো ব্যবহার করা যাবে না।

এদিকে করোনা আতঙ্কে বিশ্ব পরিস্থিতি যখন একেবারেই টালমাটাল ঠিক তখন অনেকটা আশার খবর নিয়ে হাজির হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষক। দলটি বলছে, তাদের গবেষণায় আবিষ্কার করা ওষুধে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করোনা ধ্বংস হবে।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরে বলা হয়েছে, উকুন মারার ওষুধ কাজে লাগিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করোনার জীবাণু ধ্বংস করা যাচ্ছে। অবিশ্বাস্য হলেও এমনই দাবি করেছেন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের একদল গবেষক। প্রতিষেধক তৈরির জন্য দিনরাত এক করে কাজ করছেন বহু দেশের গবেষকরা। তবে এরইমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার গবেষকদের এমন দাবি ঘিরে হইচই পড়েছে গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে। মানুষের মাথার উকুন মারার ওষুধ দিয়েই নাকি করোনা ভাইরাস ঠেকানো সম্ভব হবে। আর সেই বিজ্ঞানীরা সেটা পরীক্ষা করেও দেখেছেন বলে দাবি করেছেন। মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, উকুন মারার ওষুধের ব্যবহারে করোনার জীবাণু মেরে ফেলা সম্ভব হচ্ছে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায়।

ছাড়পত্র দিয়ে দেয়া হলো পেনিসিলভেনিয়ার ছোট একটি বায়োটেক সংস্থাকে। তাদের তৈরি করোনার প্রতিষেধক তারা পরীক্ষামূলকভাবে দিতে পারবেন স্বেচ্ছাসেবক রোগীর শরীরে। তারপর সেটি সফল হলে পরবর্তী সময়ে এটি ব্যবহার করা হবে করোনা মোকাবিলায়। আগামী সপ্তাহে

প্রথম কোনো মানুষের শরীরে এই প্রতিষেধক প্রয়োগ করে দেখা হবে বলা জানিয়েছে একটি মার্কিন গণমাধ্যম।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় সম্ভাব্য দুটি ওষুধের নাম উল্লেখ করেছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প ক্লোরোকুইন ও রিমাদেসিভির নামের দুটি পুরনো ওষুধের কথা জানান। তবে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ সংস্থা (এফডিএ) বলছে, বড় ধরনের পরীক্ষার আগে এ নিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। ট্রাম্প ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত পুরনো একটি ওষুধ ক্লোরোকুইন-এর নাম উল্লেখ করেন।

অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার ওষুধ ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয় করোনার ওষুধের অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে একটির নাম ‘জিভি১০০১’। ‘জেমভ্যাক্স অ্যান্ড কায়েল’ নামের একটি কোম্পানি এই ওষুধ তৈরি করেছে। এটি বানানো হয়েছে মূলত আলঝেইমারে (স্মৃতিভ্রংশজনিত রোগ) আক্রান্তদের জন্য। ওষুধটি বর্তমানে আলঝেইমার রোগীদের ওপর পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। গত শুক্রবার দায়েগু শহরের ‘কাইউংপুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি চিলগক হসপিটালের’ কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত দুই রোগীর ওপর ওষুধটি প্রয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়। ‘জিভি ১০০১’ এক ধরনের পেপটাইড (একাধিক অ্যামিনো এসিড দ্বারা গঠিত উপাদান), যা মানুষের টেলোমেরাসি থেকে পাওয়া যায়। ‘জেমভ্যাক্স অ্যান্ড কায়েল’ দাবি করেছে, করোনা ভাইরাসের কারণে রোগীর শরীরে যে ‘সাইটোকাইন স্টর্ম’ হয়, ওষুধটি তার বিরুদ্ধে কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ওষুধটির ক্যানসারবিরোধী ক্ষমতাও আছে। এ ছাড়া অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেশন, অ্যান্টি-অক্সিডেশন ও সেলুলার প্রোটেকটিভের প্রভাবও আছে।

দ্বিতীয় ওষুধটির নাম ‘এইচজেডভিএসএফ’ (হিউম্যানাইজড ভাইরাস সাপ্রেসিং ফ্যাক্টর)। এটি বানিয়েছে ‘ইমিউনমেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাত করোনা রোগীর ওপর এই ওষুধ প্রয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তৃতীয় ওষুধটির নাম ‘সেলগ্রাম-একেআই’। এটি এক ধরনের ‘স্টিম সেল থেরাপি’। ওষুধটি বানিয়েছে ‘ফার্মিসেল’ নামের একটি কোম্পানি।