Loading..

খবর-দার

০৯ এপ্রিল, ২০২০ ০৪:৩২ অপরাহ্ণ

কোরআন, হাদিসের আলোকে শবে- বরাতের তাৎপর্য ও গুরুত্ব ।

কোরআন হাদীসের আলোকে শবে বরাত 

ইসলামী বর্ষপঞ্জির দ্বাদশ মাসের প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র মাহাত্ম্য ও গুরুতের অধীকারী। মহান আল্লাহ পাকের তরফ থেকে প্রদত্ত ফজিলতের কারনে কোন কোন মাস, দিন, সময় কখনো হয়ে ওঠে অসাধারণ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত এবং বরকতময়-মুবারক। মানব জাতির জন্য তাতে থাকে রহমত -বরকত, কল্যান,পাপমুক্তি এবং মাগফেরাত। চান্দ্র বর্ষের সপ্তম মাস রজব এবং এবং নবম মাসরমদ্বানের মধ্যবর্তী রাত অর্থাৎ ১৪ ই শাবান দিবাগতরাত শবে বরাত -এক বরকতময় রজনী যা আল্লাহু পাকের নৈকট্য -সান্নিধ্য লাভের এক সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে আসে দুনিয়াবাসীর জন্য। 

স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এই রাতকে ‘লাইলাতুল মুবারাকাহ ‘বা বরকতময় রাত বলে ঘোষণা করেছেন।মুফাসসিরীনে কেরাম -এর অনেকেই এই রাতকে ‘।লাইলাতুল বরাত’ বা শবে বরাত’ বলে উল্লেখ করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই রাতে বাড়তি সওয়াব লাভের জন্য সকলকে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করেছেন এবং রমদ্বানের আগাম সুসংবাদও জানিয়ে দিয়েছেন শাবান মাসে। পবিত্র রমদ্বান মাসের তাৎপর্য ও গুরুত্ব বৃদ্ধি করে ইহাকে মহিমান্বিত ও সৌভাগ্যমন্ডিত করা হয়েছে। প্রবিত্র কুরআনের ২৬ পারায় ‘দুখান’ নামক সূরায় আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ“আমি ইহা অবতীর্ণ করেছি এক মুবারক রজনীতে,অবশ্যই আমি শতর্ককারী। এই রজনীতে আমার আদেশক্রমে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণবিষয় স্হিরকৃত হয়। ” (সূরা দুখান;আয়ত-৩-৪)

মুফাসসিরীনে কেরাম আলোচ্য আয়াতে ‘লাইলাতুল মুবারাকাহ’ বা বরকতময় রাত বলতে “শবে বরাত’ উভয় অর্থই গ্রহণ করেছেন।যারা শবে বরাত অর্থ গ্রহণ করেছেন তাঁদের মধ্যে বিখ্যাত তাফসীরকারও রয়েছেন। উদাহরণ স্বরূপ এখানে কয়েকটি তাফসীরী ব্যাখ্যা উদ্ধৃত করা হলো;১.তাফসীরে মা’আরিফুল কুরআনঃমরহুম মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ শফী (রহ) কর্তৃক রচিত এই বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্হে সুরা দুখানের আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে ;“ইকরামা (রাঃ) প্রমুখ কয়েকজন তাফসীরবিদ থেকে বর্ণিত আছে, এ আয়াতে বরকতের রাত্রি বলেশবে -বরাত অর্থাৎ শা’বান মাসের পনের তারিখের রাতকে বুঝনো হয়েছে। 1. কিন্তুু এ রাতে কুরআন অবতরণ -কুরআন ও হাদীসের অন্যান্য বর্ণনার পরিপন্থী। 2. তবে কোন কোন রেওয়ায়েতে শাবানের পনের তারিখকে শবে বরাত অথবা ‘লাইলাতুসসফ’ নামে অভিহিত করা হয়েছে এবং এর বরকতময় হওয়া ও এতে রহমত নাযিল হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। “(মাআরিফুল কোরআন বাঃ সঃ১২৩৫পৃঃ২. মোকামমাল বয়ানুল কোরআনঃহযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) তাঁরবিখ্যাত উর্দু তাফর্সীর ‘বয়ানুল কোরআনে’ সূরা দুখানের আলোচ্য আয়াতে ‘লাইলাতুল মিবারাকাহ’ এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেনঃ “কেউ কেউ ‘লাইলাতুল মুবারাকাহ’ এর ব্যাখ্যা লাইলাতুল বরাতকরেছেন। এর কারণ এই যে, বিভিন্ন বর্ণনায় এ সম্পর্কেও বার্ষিক ঘটনাবলীর সিদ্ধান্তের বিষয় এসেছে”। (পৃ৯৯২য় খন্ড)৩. তাফসীরে খাজেনঃআল্লামা আলাউদ্দিন আলী ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম আল-বাগদাদী (ওফাত-৭২৫হিঃ)কৃত ” নুবাবুত তাবীল ফি মা’আনিয়িত তানযীল ‘ সংক্ষেপে তাফসীরে খাজেননামে পরিচিত এই বিখ্যাত গ্রন্হে লেখক ‘লাইলাতুল মুবারাকাহ’-এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কারো কারো মত হিসাবে বলেন, “উহা শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত, যাতে সারা বছরের বিষয়াবলী চূড়ান্ত করা হয় এবং কারা জন্মগ্রহণ করবে এবং কারা মৃত্যুবরণ করবে তাদের নাম লেখা হয়।অর্থাৎ মৃত্যুবরণকারীদের মুদ্দত-সময় লিপিবদ্ধ করা হয়।”ইমাম বাগবী (রহঃ)তাঁর নিজস্ব সূত্রে বলেন যে,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ; এক শা’বান হতে অপর শা’বান পর্যন্ত মৃত্যুগুলি বন্ধ রাখা হয়, এমনকি কোন ব্যক্তি বিবাহ করে এবং তার সন্তান জন্মলাভ করে; আর তার নামমৃতদের থেকে খারিজ করে দেয়া হয়।

হযরত ইবনে আব্বাস (রা) কর্তৃক বর্ণিত, নিশ্চয় শা’বানের মধ্যবর্তী রাতে আল্লাহতায়ালা সকল বিষয় ফয়সালা করেন এবং সেগুলি শবে কদরে অধীকারীদের নিকট সম্পন্ন করে থাকেন (পৃঃ১৮৮,খন্ড -৬অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হল -বর্তমান মুসলিম বিশ্বের কোন দেশে এই মহিমান্বিত শবে বরাতের কোন গুরুত্বই নেই। অতচ আল্লাহর নবী হযরত রাসূলে মাকবূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই রাতের ফজিলত ও মহাত্ব্য বর্ণনায় অসংখ্য বাণী প্রদান করছেন। কোন বিষয়ে কুরআন শরীফে স্পষ্ট ইংগিত না থাকলে শরীয়তের উসুল মোতাবিক আমাদেরকে অবশ্যই হাদীসে নববীর আশ্রয় নিতে হবে।অথচ শবে বরাত এমন একটি বিষয় যা পবিত্র কুরআনের ইংগিত থেকে জ্ঞানী-গুনী তাফসীরকারগণের অনেকেই স্পষ্ট বর্ণনার মাধ্যমে বিষয়টি খোলাসা করে তুলে ধরেছেন। আর মহনবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অসংখ্য হাদীসেতো এর সবল প্রমাণ রয়েছেই।তাছাড়া ফজিলত সম্পর্কিত দুর্বল রেওয়ায়তও কবুল করার অবকাশ রয়েছে। এর পরও যদি কেউ শবে বরাতের কোন দলিল নেই বলে প্রচার করে থাকেন, তবে ধরে নিতে হয় যে, কুরআন ও হাদীস সম্বন্ধে তাদের ধারণা খুবই দুর্বল।


আমরা এই প্রসঙ্গে শরীয়তের দ্বিতীয় উসুল হাদীসে নববীতে যে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে তার মধ্য থেকেও যথাসাধ্য পাঠক সমক্ষে তুলে ধরার চেষ্টা করব।হযরত আলী (রাঃ) বর্ণনা করেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমায়েছেন;“যখন শা’বানের ১৫ই রাত আসবে তখন ঐ রাতে জাগ্রত থেকে মহান আল্লাহ পাকের বন্দেগী করবে ওদিনের বেলা রোজা রাখবে। [ ] কেননা রাতের সূর্যাস্ত হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাক দুনিয়ার আকাশে এসে মানুষকে ডেকে বলেন, যদি গোনাহগার থাক আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেব।[ ] যদি অভাবী থাক, তবে মুক্তির দোয়া কর, অভাবমুক্ত করে দেব। [ ] যদি অভাবী থাক, তবে মুক্তির দোয়া কর, অভাবমুক্ত করে দেব। [ ] রোগাক্রান্ত থাকলে রোগ মুক্তির প্রার্থনা কর, আমি শিফা দান করব। [ ] এ ধরনের যে কোন রকমের হাজত থাকলে আমার দরবারে দোয়া কর, আমি হাজত পূরণ [ ] করবো। “(তিরমিযী শরীফ)[ ] হযরত আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে হযরত [ ] আয়েশা (রাঃ)-কে সম্বোধন করে প্রিয় নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ[ ] তুমি কি জান -এ রাতে (শা’বানের পনের তারিখ) [ ] কি হয়? হযরত আয়েশা (রাঃ) বললেন -“আল্লাহ পাক ও তাঁর রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ।