Loading..

প্রকাশনা

১০ এপ্রিল, ২০২০ ০৮:৫১ অপরাহ্ণ

যাপিত দিনের গল্প


যাপিত দিনের গল্প

ঘুম থেকে এখন ডাকতে হয় দিনের যদি দশটাও বাঝে। অথচ সপ্তাহ দুয়েক আগেও ছয়টায় ওঠেও চা বানিয়ে খেয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হতাম। দিন বদলের সাথে মানসিকতার যে পরিবর্তন হয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। যখন সময় কম ছিল, তখন বলতাম সময় পাইনা, এখন অঢেল সময়, তাই বলি মন ভাল নেই, তাই কাজে মন বসছেনা। 

মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারার জন্য কি বয়স হতে হয়? আসলে সবকিছু নিজের উপর।  আমরা নিজেকে কন্ট্রোল করার কায়দা শিখিনি।  ছোট বেলায় শিখলে হয়তো এখন আর এই বিরম্বনায় পড়তে হতোনা। যুক্তি দিয়ে বিচার করতে শিখিনি আমরা, করি আবেগ দিয়ে। তাইতো ডিলেমায় ভুগি। যেমন এই মুহুর্তে আমাদের ঘরে থাকা উচিত,  থাকছিনা। দুরত্ব মেনে চলা উচিত, চলছিনা। এখানে যুক্তিকে পাত্তাই দিচ্ছিনা, দিই আবেগকে যা আমাদের সমূহ বিপদের দিকে নিয়ে যাবে অচিরেই। 

করোনা মহামারিতে যাকেই জিজ্ঞেস করি, সবাই বলে, "টেনশনে আছি," এটা অবাক হওয়ার কিছু নয়, বরং খুবই  সাধারণ ব্যাপার। তবে আমাদের দেশে করোনা নিয়ে যে রকম সস্তি কাজ করেছিলো একমাস আগেও, এখন ঠিক তার বিপরীত দুশ্চিন্তার প্রহর গুনছে সবাই।

যেখানেই তাকাই মুখে মাস্ক; আমি নিজেও হাজার দেড়েক টাকার মাস্ক কিনেছি এরই মধ্যে। আর হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কথা কি বলবো,  রীতিমত যুদ্ধ করতে হচ্ছে ভাল মানের একটা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের জন্য। রাস্তায় বিক্রি করছেন অনেকেই কিন্তু  সেসব দামে পোষালেও মানে পোষাবে না। তাই দূরেই থাকি।  বাংলা সাবান তার চেয়ে ভালো! 

গৃহবন্দী থাকার যে কি কষ্ট সেটা এখন টের পাচ্ছি!  বাপরে দিনের পর দিন। মহিলারা যে কিভাবে দিন কাটায় সেটা এখন বুঝতে পারছি। যদিও বরাবরই তাদেরকে আমরা পুরুষজাতি দোষারোপই করে আসছি সবসময়। সে যাই হোক, এখন সময় এসেছে সবকিছু মিলিয়ে নেবার যা ভাবতাম আর যা বাস্তব। বাস্তবতা বড়ই নির্মম। যেমন বর্তমান বিশ্বের করোনা পরিস্থিতি।  কেউ কি ভেবেছিলাম এমন মারাত্মক আকার ধারন করবে করোনা! অথচ এখন এটাই বাস্তবতা। কিছুই  করারই নেই সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমা ছাড়া।

নরমাল দিনগুলোতে সরকারি ছুটির দিনে যে রকম ভাল লাগা কাজ করে মনে, এখন তার ছিটেফোঁটাও নেই। উল্টো খুব বোরিং লাগে প্রতিটা মুহূর্ত, কোন কিছুতেই কেন জানি মন বসছেনা,  কি যেন অজানা ভয় তাড়িয়ে বেড়ায় সারাটি দিন।  খবর দেখার নেশাটাও ইদানিং বেড়ে গেছে, কখন, কোথায় কত লোক প্রাণ হারালো নতুন করে  আক্রান্ত হলো কতজন। আগে কিছু অবসর পেলেই কম্পিউটার নিয়ে বসতাম, কিন্তু এখন বসতেই ভাল লাগেনা। এটা মানসিক সমস্যা হয়ে দাড়াতে পারে অনেকের জন্যই।

মনোবিদরাও ইদানিং টকশোতে বলছেন দৈনিক দুয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ খবর ছাড়া বেশি বেশি খবর না দেখতে। ঠিকই বলছেন উনারা। তাই খবর দেখাটাও কমিয়ে দিচ্ছি। আসলে পারছি কই, এইতো সেদিন টিভি রিমোটের ব্যাটারি নষ্ট হলো, অনেক চেষ্টা করেও টিভি দেখতে পারছিলামনা, বাবাকে বললাম কোথাও আগের কেনা ব্যাটারি আছে নাকি, পেলামনা। বাড়ির কাজের ছেলেটাকে পাঠাবো? দোকানও বন্ধ। একজনকে ফোন করলাম। সে বললো ব্যবস্থা একটা হবে।

আছি গ্রামের বাড়ি।  আশেপাশে দোকান যেগুলো আছে,  তাতে ভালো মানের তেমন কিছুই নেই ; থাকবে কেমনে, সরবরাহের ঘাটতি, গাড়ি চলেনা।  বাসায় লাউয়ের নাস্তা দুধ দিয়ে প্রতিদিন অন্তত একবার তৈরি হয়। পুকুর পাড়ে লাউ বাগান আছে,  পেঁপে আছে, আছে আরও কিছু সবজি। পেঁপের নাস্তাও অনেক মজা। আমরা প্রায়ই বাসায় খাই। তাছাড়া ময়দা বা আটার রুটি সাথে চা বা সবজিও হয়। বাচ্চারা যে বিস্কুট বাসায় ছুঁয়েও দেখতোনা, সেগুলো এখানে ভালোই খায়।

গ্রামের বাড়িতে সব ঘরের অবস্থা কম বেশি একই রকম। সবাই একই খাবার হয়তো খায়না, কিন্তু একটা জিনিস কমন, সেটা হলো পানতা ভাত। সবাই এখানে পানতা ভাত খায়। তাতে ওদের কাজের শক্তি বজায় থাকে। অনেকের ইদানিং কষ্ট হচ্ছে। কারন কাজ নেই,  রোজগার নেই।  ভরসা সরকারি ত্রান। কিন্তু তাও কি সবাই ঠিকঠাক পাচ্ছে? কেউ বেশি, কেউ কম, কেউ একদমই পায়না।

আরেকটা জিনিসের কথা না বললেই নয়, ফেলন ডালের ভাজা, অনেকটা ছোলার মতোই,  তবে এটা একটু বেশিই নরম আর খেতেও তুলনামূলকভাবে ভালো লাগে,  মনে হয় এটা ছোলার চেয়েও সহজে হজম হয়। এগুলোও  নিজেদের ক্ষেতের।

নামাজটা ঘরেই পড়ি। বাবাকেও বলেছি আপাতত সরকার যখম নিষেধ করেছে ঘরেই পড়েন।  আগে তেমন পাত্তা না দিলেও এখন ঠিকই ঘরেই নামাজ পরছেন নিয়মিত। জুমার দিন আমরা যোহর নামাজ আদায় করলাম। আজকে শুনলাম সাধারণ ছুটি বেড়েছে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত।  ( চলবে)

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি