Loading..

ভিডিও ক্লাস

১৮ এপ্রিল, ২০২০ ০৮:০২ অপরাহ্ণ

মোঃ আব্দুল হক, সহকারী শিক্ষক ( আইসিটি ), মাড়েয়া সিংরোড মৌলভী পাড়া দাখিল মাদ্রাসা

শারীরিক সক্ষমতায় ব্যায়ামের প্রভাব

শারীরিক সক্ষমতার জন্য ব্যায়াম অপরিহার্য। ব্যায়াম না করলে কখনও শারীরিক সক্ষমতা অর্জন সম্ভব নয়। সেজন্য সব বয়সের লোকদের নিয়ম মোতাবেক নির্দিষ্ট ব্যায়াম করা প্রয়োজন। ব্যায়ামের প্রভাবে শরীরের ভেতর বিভিন্ন রকম পরিবর্তন হয় যা শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ব্যায়ামের প্রভাবে শরীরের ভিতর যে পরিবর্তন হয় তা এখানে তুলে ধরা হলো-

১.হৃৎপিন্ডের  (Heart)পেশি শক্তিশালী হয় : খেলাধুলা বা ব্যায়াম করলে শরীরের রক্ত চলাচল বেড়ে যায় ফলে হৃৎপিন্ডের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে হৃৎপিন্ডের পেশি শক্তিশালী, হৃৎপিন্ড বড় ও নীরোগ হয়। এরুপ হার্টকে “অ্যাথলেটিক হার্ট” বলে।

২. হৃৎপিন্ডে রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা বাড়ে: একজন সাধারণ লোকের হৃৎপিন্ড প্রতি মিনিট ১৩০ মিলিলিটার রক্ত পাম্প করে। খেলাধুলা বা ব্যায়াম করার সময় রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে হৃৎপিন্ডের পাম্প করার ক্ষমতা বেড়ে যায়। এতে হৃৎপিন্ড সবল ও কর্মক্ষম হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। 

৩. পালস রেট (Pulse rate) বৃদ্ধি পায় : একজন সাধারণ লোক পরিশ্রম করলে তার পালস রেট বেড়ে যায়। পুনরায় স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লাগে। ফলে ক্লান্তি সহজে দূর হয় না। অপর দিকে একজন ভালো  খেলোয়াড় যখন খেলাধুলা বা ব্যায়াম করে তখন তার পালস রেট বেশি বাড়ে না এবং দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসে। ফলে তার ক্লান্তি তাড়াতাড়ি দূর হয়।

৪. রক্ত চলাচল বাড়ে: খেলাধুলা বা ব্যায়াম করলে শরীরের রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। ফলে সাধারণ লোকের চেয়ে মাংসপেশি, হৃৎপিন্ড ইত্যাদির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি ও মজবুত হয়।

৫. রক্ত কণিকা : রক্তে তিন ধরনের কণিকা থাকে-

ক. লোহিত কণিকা খ. শ্বেত কণিকা গ. অনুচক্রিকা

ক. লোহিত কণিকা : শরীরের লোহিত কণিকার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। পুরুষদেহে এক ঘন মিলিলিটার রক্তে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ এবং মহিলাদের রক্তে প্রায় পঁয়তাল্লিশ লক্ষ লোহিত কণিকা থাকে। এটি অস্থি মজ্জায় উৎপন্ন হয় ও ১২০ দিন পর প্লীহায় বিনষ্ট হয়। ব্যায়াম করলে লোহিত কণিকার সংখ্যাও বেড়ে যায় ও বেশি দিন বাঁচে। এটি হিমোগ্লোবিনের সহায়তায় দেহের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অক্সিজেন সরবারাহ করে এবং শরীরের সমস্ত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে।

খ. শ্বেত কণিকা : আমাদের শরীরে শ্বেত কণিকার সংখ্যা অনেক কম। এক মিলিলিটার রক্তে ছয় থেকে আট হাজার শ্বেত কণিকা থাকে। এরা বর্ণহীন ও নিউক্লিয়াসযুক্ত। এরা সাধারণত ১২-১৩ দিন বেঁচে থাকে। ব্যায়াম করলে এরা বেশিদিন বাঁচে ও সংখ্যা বেড়ে যায়। শ্বেত কণিকা রক্তে প্রবেশকারী শত্রুকে ঘিরে ধরে বিনষ্ট করে দেহকে রক্ষা করে। ফলে শারীরিক সক্ষমতা মজবুত ও শক্তিশালী হয়।

গ. অনুচক্রিকা : অনুচক্রিকা দেখতে ডিম্বাকার ও বিভিন্ন আকৃতি বিশিষ্ট অনেকটা ডিসকের মতো দেখতে। দেহের বৃহদাকার কোষ ভেঙ্গে অনুচক্রিকা সৃষ্টি হয়। দেহের স্থানে ক্ষত হলে সেখানে ৩ মিনিটের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।

৬. শ্বাস প্রশ্বাস (Respiration): খেলাধুলা ও ব্যায়াম করার সময় ঘন ঘন শ্বাস প্রশ্বাস গ্রহণ করতে হয়। ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন গ্রহণ ও প্রশ্বাসের সাথে কার্বন ডাইঅক্সাইড বের হয়ে যায়। ঘন ঘন শ্বাস প্রশ্বাসের ফলে বুকের গভীরতাও বৃদ্ধি  পায়। ফলে শারীরিক ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।

৭. মাংসবেশি (Muscle) : শরীরে বিভিন্ন ধরনের মাংসপেশী থাকে। খেলাধুলা ও ব্যায়ামের ফলে মাংসপেশি সংখ্যায় বাড়ে না তবে আকৃতিতে বড় হয়, টিস্যুগুলো মোটা ও শক্তিশালী হয়। ফলে শারীরিক সক্ষমতাও অনেক বেড়ে যায়। ব্যায়ামের ফলে শরীরের যে বিভিন্ন পরিবর্তন বা বৃদ্ধি ঘটে তা শারীরিক সক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করে।