Loading..

ম্যাগাজিন

২৬ এপ্রিল, ২০২০ ১২:৪৫ অপরাহ্ণ

কীভাবে হবে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর।

শিক্ষাকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রদান করতে প্রাথমিক করণীয় কী হতে পারে।

ক. প্রথমত, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়টি শিশুশ্রেণি থেকে বাধ্যতামূলকভাবে পাঠ্য করতে হবে। প্রাথমিক স্তরে ৫০ নম্বর হলেও মাধ্যমিক স্তরে বিষয়টির মান হতে হবে ১০০। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এর মান হতে হবে ২০০। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, ইংরেজি-বাংলা-আরবি নির্বিশেষে সবার জন্য এটি অবশ্যপাঠ্য হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রোগ্রামিং ভাষা হিসেবে স্ক্র্যাচ জুনিয়র ও স্ক্র্যাচ এবং মাধ্যমিক স্তরে পাইথন ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সি++ পাঠ্য করা যেতে পারে। একই সঙ্গে প্রাথমিক স্তর থেকেই রোবোটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগডাটা, ব্লক চেইন, আইওটি ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা দিতে হবে। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ধীরে ধীরে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। উচ্চশিক্ষার সব স্তরে মৌলিক তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়াদি পাঠ্য করতে হবে। এমনকি সেটি মাদ্রাসার উচ্চস্তরেও করতে হবে।

খ. দ্বিতীয়ত, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতি ২০ জন ছাত্রের জন্য একটি করে কম্পিউটার হিসেবে কম্পিউটার ল্যাব গড়ে তুলতে হবে। এই কম্পিউটারগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার করতে শেখাবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীরা যাতে সহজে নিজেরা এমন যন্ত্রের স্বত্বাধিকারী হতে পারে রাষ্ট্রকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষায় ইন্টারনেট ব্যবহারকে শিক্ষার্থী-শিক্ষক-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয়ত্তের মাঝে আনতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট দেয়া রাষ্ট্রের বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। সরকার এখন যে পাঁচ শতাধিক সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট সংযোগ দিচ্ছে তা প্রাথমিক স্তর থেকে সব স্তরে প্রসারিত করতে হবে।

গ. তৃতীয়ত, প্রতিটি ক্লাসরুমকে ডিজিটাল ক্লাসরুম বানাতে হবে। প্রচলিত চক, ডাস্টার, খাতা, কলম, বইকে কম্পিউটার, ট্যাবলেট পিসি, স্মার্টফোন, বড় পর্দার মনিটর/টিভি বা প্রজেক্টর দিয়ে স্থলাভিষিক্ত করতে হবে। আমি নিজে খুব স্বল্প খরচে ডিজিটাল ক্লাসরুম গড়ে তোলার পদ্ধতি নিচে বর্ণনা করব।

ঘ. চতুর্থত, সব পাঠ্য বিষয়কে ডিজিটাল যুগের জ্ঞানকর্মী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উপযোগী পাঠক্রম ও বিষয় নির্ধারণ করে সেইসব কনটেন্টসকে ডিজিটাল কনটেন্টে পরিণত করতে হবে। পরীক্ষা পদ্ধতি বা মূল্যায়নকেও ডিজিটাল করতে হবে। অবশ্যই বিদ্যমান পাঠক্রম হুবহু অনুসরণ করা যাবে না এবং ডিজিটাল ক্লাসরুমে কাগজের বই দিয়ে শিক্ষা দান করা যাবে না। কনটেন্ট যদি ডিজিটাল না হয় তবে ডিজিটাল ক্লাসরুম অচল হয়ে যাবে। এসব কনটেন্টকে মাল্টিমিডিয়া ও ইন্টারঅ্যাকটিভ হতে হবে।

ঙ. পঞ্চমত, সব শিক্ষককে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদানের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সব আয়োজন বিফলে যাবে যদি শিক্ষকরা ডিজিটাল কনটেন্ট, ডিজিটাল ক্লাসরুম ব্যবহার করতে না পারেন বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করতে না জানেন। তারা নিজেরা যাতে কনটেন্ট তৈরি করতে পারেন তারও প্রশিক্ষণ তাদের দিতে হবে।

চ. সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে ও শিক্ষার্থীদের তাদের হাতের ডিজিটাল ডিভাইস দিয়ে ইন্টারনেটে যুক্ত থাকতে হবে।

কেমন করে ডিজিটাল স্কুল করবেন : ডিজিটাল বা মাল্টিমিডিয়া স্কুল সাধারণ স্কুলই হবে। স্কুল গড়ে তোলার সব অবকাঠামো নিজেকেই করতে হবে। এতে বিনিয়োগ হবে উদ্যোক্তার। সঙ্গতকারণেই এর স্বত্বও থাকবে উদ্যোক্তার। উদ্যোক্তা নিজেই এটি পরিচালনা করবেন। লাভ-লোকসান বা আয়-ব্যয় সবই উদ্যোক্তার। কেবল বিজয় ডিজিটাল স্কুল বা আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল নামে স্কুল করতে হলে ফ্রান্সাইসি চুক্তি করতে হবে। কারণ এই নামটি ট্রেডমার্ক নিবন্ধিত। প্রচলিত স্কুলের মতো করেই স্কুল গড়ে তোলার কথা ভাবতে হবে। অন্যদিকে বিদ্যমান সরকারি-বেসরকারি স্কুলকেও ডিজিটাল স্কুল বা মাল্টিমিডিয়া স্কুলে রূপান্তর করা যাবে। সব ক্ষেত্রেই ইতোপূর্বে বর্ণিত বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে। শিশুশ্রেণি থেকে কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ক্লাসরুমগুলো পর্যায়ক্রমে ডিজিটাল ক্লাসরুমে রূপান্তরিত করতে হবে। ডিজিটাল কনটেন্ট ব্যবহার করতে হবে। স্কুলের হাজিরা থেকে ব্যবস্থাপনা এবং ক্লাসরুম শিক্ষা ডিজিটাল করতে হবে। ডিজিটাল কনটেন্ট বা বিজয়ের ডিজিটাল শিক্ষামূলক সফটওয়্যার দিয়ে পড়াতে হবে।

প্লে-নার্সারি-কেজি, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি আছে বলে এই ক্লাসগুলো দিয়েই শুরু করা যায়। প্রচলিত স্কুলের পাঠক্রমে শিশুশ্রেণি থেকে ডিজিটাল প্রযুক্তি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এদের জন্য বাজারে আমার লেখা বইও রয়েছে। এখন কেবল একটি স্মার্ট টিভি যাতে এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম চলে সেটা দিয়ে ডিজিটাল ক্লাসরুম চালু করা যেতে পারে। আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি যে মাত্র হাজার চল্লিশেক টাকায় একটি ক্লাসে ডিজিটাল শিক্ষা দেয়ার জন্য ৫০ ইঞ্চি স্মার্ট টিভি সংগ্রহ করা যেতে পারে। গত ২ মে ২০১৯ আমি এমন একটি টিভিতে আমাদের সফটওয়্যার চালিয়ে দেখেছি যে এটি একটি চমৎকার সমাধান। গোয়ালন্দের একটি স্কুলে এখন এই পদ্ধতিতে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। আমরা এর একটি আরো উন্নত সংস্করণ পরীক্ষা করার চেষ্টা করছি যাতে প্রোগ্রামিংও শেখানো যেতে পারে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষাকে ডিজিটাল করার জন্য এ ধরনের সমাধান ব্যাপকভাবে সহায়ক হতে পারে। এর বাইরে ডিজিটাল ক্লাসরুম তৈরির জন্য অন্য উপায়ও গ্রহণ করা যায়। একটি ল্যাপটপ কম্পিউটার ও একটি ৫০ ইঞ্চি পর্দার টিভি যোগ করলেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষাদান শুরু করা সম্ভব।

মোস্তাফা জব্বার : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও কলাম লেখক।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি