সহকারী শিক্ষক
১২ মে, ২০২০ ০১:১০ অপরাহ্ণ
জীবন সঙ্গীত_হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব-১)_jibon songit - 1
ধরন: সাধারণ শিক্ষা
শ্রেণি: নবম
বিষয়: বাংলা সাহিত্য
অধ্যায়: অষ্টদশ অধ্যায়
জীবন সঙ্গীত
হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
কবি পরিচিতি:
হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৩৮ সালের ১৭ই এপ্রিল হুগলি জেলার গুলিটা রাজবল্লভহাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর পিতা কৈলাশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার খিদিরপুর বাংলা স্কুলে পড়াশোনাকালে আর্থিক সংকটের কারণে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়।অতপর কলকাতা সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ প্রসন্নকুমার সর্বাধিকারীর আশ্রয়ে তিনি ইংরেজি শেখেন।পরবর্তীতে হিন্দু কলেজে সিনিয়র স্কুল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।পরে তিনি ১৮৫৯ সালে সলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।কর্মজীবনের তিনি সরকারি চাকরি, স্কুল শিক্ষকতা এবং পরিশেষে আইন ব্যবসায় নিয়োজিত হন।মাইকেল মধুসূদন দত্তের পরে কাব্য রচনায় তিনিই ছিলেন সবচেয়ে খ্যাতিমান।স্বদেশপ্রেমের অনুপ্রেরণায় তিনি‘বৃত্রসংহার’ নামক মহাকাব্য রচনা করেন।এছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ:চিন্তাতরঙ্গিনী,বীরবাহু,আশাকানন,ছায়াময়ী ইত্যাদি।২৪শে মে ১৯০৩ সালে হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন।
বলো না কাতর স্বরে বৃথা জন্ম এ সংসারে
এ জীবন নিশার স্বপন,
দারা পুত্র পরিবার, তুমি কার কে তোমার
ব’লে জীব করো না ক্রন্দন;
মানব-জনম সার, এমন পাবে না আর
বাহ্যদৃশ্যে ভুলো না রে মন;
কর যত্ন হবে জয়, জীবাত্মা অনিত্য নয়,
ওহে জীব কর আকিঞ্চন।
করো না সুখের আশ, পরো না দুখের ফাঁস,
জীবনের উদ্দেশ্য তা নয়,
সংসারে সংসারী সাজ, করো নিত্য নিজ কাজ,
ভবের উন্নতি যাতে হয়।
দিন যায় ক্ষণ যায়, সময় কাহারো নয়,
বেগে ধায় নাহি রহে স্থির,
সহায় সম্পদ বল, সকলি ঘুচায় কাল,
আয়ু যেন শৈবালের নীর।
সংসারে-সমরাঙ্গনে যুদ্ধ কর দৃঢ়পণে,
ভয়ে ভীত হইও না মানব;
কর যুদ্ধ বীর্যবান, যায় যাবে যাক প্রাণ
মহিমাই জগতে দুর্লভ।
মনোহর মূর্তি হেরে, ওহে জীব অন্ধকারে,
ভবিষ্যতে ক’রো না নির্ভর;
অতীত সুখের দিন, পুনঃ আর ডেকে এনে,
চিন্তা ক’রে হইও না কাতর।
মহাজ্ঞানী মহাজন, যে পথে ক’রে গমন,
হয়েছেন প্রাতঃস্মরণীয়,
সেই পথ লক্ষ্য ক’রে স্বীয় কীর্তি ধ্বজা ধ’রে
(১৭৯)
আমরাও হব বরণীয়
সমর-সাগর-তীরে, পদাঙ্ক অঙ্কিত ক’রে
আমরাও হব হে অমর;
সেই চিহ্ন লক্ষ ক’রে, অন্য কোনো জন পরে,
যশোদ্বারে আসিবে সত্বর।
ক’রো না মানবগণ, বৃথা ক্ষয় এ জীবন,
সংসার-সমরাঙ্গন মাঝে;
সঙ্কল্প করেছ যাহা, সাধন করহ তাহা,
রত হয়ে নিজ নিজ কাজে।
শব্দার্থ ও টীকা :
কাতর স্বরে- দুর্বল কণ্ঠে, করুণভাবে;
দারা- স্ত্রী;
বাহ্যদৃশ্যে- বাইরের জগতের চাকচিক্যময় রূপে বা জিনিসে;
জীবাত্মা- মানুষের আত্মা, আত্মা যদিও অমর,কিন্তু মানুষের মৃত্যু অনিবার্য, কাজের দেহ ছেড়ে আত্মা একদিন চলে যাবে চিরকাল দেহকে আঁকড়ে থাকতে পারবে না;
অনিত্য- অস্থায়ী,যা চিরকালের নয়;
আকিঞ্চন- চেষ্টা,আকাঙ্ক্ষা;
আশ- আশা;
ভবের- জগতের, সংসারের;
সমরাঙ্গনে- যুদ্ধক্ষেত্রে(কবি মানুষের জীবনকে যুদ্ধক্ষেত্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন);
বীর্যবান- শক্তিমান;
মহিমা- গৌরব;
প্রাতঃস্বরণীয়- সকাল বেলায় স্মরণ করার যোগ্য, অর্থাৎ সকালের শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র;
ধ্বজা- পতাকা,নিশান;
বরণীয়- সম্মানের যোগ্য;
সংসার-সমরাঙ্গন- যুদ্ধক্ষেত্রে সাহসী সৈনিকের মতো সংসারেও নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মোকাবেলা করে বেঁচে থাকতে হবে;
স্বপন - রাতের স্বপ্নের মতোই মিথ্যা বা অসার;
আয়ু যেন শৈবালের নীর- শেওলার ওপর পানির ফোঁটার মতো ক্ষণস্থায়ী।
পাঠ পরিচিতি :
আমাদের জীবন কেবল নিছক স্বপ্ন নয়। কাজেই এ পৃথিবীতে স্বপ্ন ও মায়ার জগৎ বলে দেওয়া যায় না। স্ত্রী-পুত্র-কন্যা এবং পরিজনবর্গ কেউ কারও নয়, একথাও ঠিক নয়। মানব-জন্ম অত্যন্ত মূল্যবান। মিথ্যা সুখের কল্পনা করে দুঃখ বাড়িয়ে লাভ নেই, তা আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যও নয়। সংসারে বাস করতে হলে সংসারের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। কেননা বৈরাগ্যে কোন মুক্তি নেই। আমাদের জীবন যেন শৈবালের শিশর বিন্দুর মতো ক্ষণস্থায়ী। সুতরাং মানুষকে এ পৃথিবীতে সাহসী যোদ্ধার মতো সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হবে। মহাজ্ঞানী ও মহান ব্যক্তিদের পথ অনুসরণ করে আমাদেরও বরণীয় হতে হবে। কেননা জীবন তো একবারই। ‘জীবন সঙ্গীত’ কবিতাটি কবি ‘Henry Wordworth Longfellow এর A Paslm of life’ ইংরেজি কবিতার ভাবানুবাদ।
অনুশীলনী
কর্ম-অনুশীলন
তুমি আর্দশ মনে কর এমন একজন মানুষের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১।হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় আয়ুকে কিসের সাথে তুলনা করেছেন ?
ক. নদীর জল
খ. পুকুরের জল
গ. শৈবালের নীর
ঘ. ফটিক জল
(১৮০)
২।কবি ‘সংসার সমরাঙ্গণ’ বলতে কী বুঝিয়েছেন ?
ক. যুদ্ধক্ষেত্রকে
খ. জীবনযুদ্ধকে
গ. প্রতিরোধ যুদ্ধকে
ঘ. অস্তিত্তকে
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
শুকুর মিয়া একজন ক্ষুদে ব্যবসায়ী। সামান্য পুজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। প্রথম প্রথম ভালো পান। এক সময় তার ব্যবসায়ে ভাটি লাগে। এতে কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়ে। তখন বন্ধু হাতেম তাকে দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে চলার পরামর্শ দেয়। শুকুর মিয়া তার পরামর্শকে সাদরে গ্রহণ করে।
৩। উদ্দীপকের শুকুর মিয়ার লক্ষ্য কী ?
ক. যশোদ্ধার সত্তর
খ. অমরত্ব লাভ
গ. সংসার সমরাঙ্গন টিকে থাকা
ঘ. বরণীয় হওয়া
৪। অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছাতে শুকুর যে গুণের আবশ্যক তা হলো -
ক. সাহস
খ. সংগ্রাম
গ. আত্মবিশ্বাস
ঘ. সথুল্প
সৃজনশীল:
রবাট ব্রুস পর পর ছয়বার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে এক সময়ে হতাশ হয়ে বনে চলে যান। সেখানে দেখেন একটা মাকড়শা জাল বুনতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। অবমেষে সে সপ্তমবারে সফল হয়। এ ঘটনা রবাট ব্রুসের মনে উৎসাহ জাগায়। তিনি বুঝতে পারেন জীবনে সাফল্য ও ব্যর্থতা অঙ্গাআঙ্গিভাবে জড়িত। তাই তিনি আবার পূর্ণ উদ্যমে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হন।
ক.কবি কোন দৃশ্য ভুলতে নিষেধ করেছেন?
খ.কীভাবে ভবের উন্নতি করা যায়?
গ.পরাজয়ের গ্লানি রবাট ব্রুসের মাঝে যে প্রভাব বিস্তার করে সেটি ‘জীবন সঙ্গীত’ কবিতার সাথে যেভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ তা তুলে ধর।
ঘ.‘হতাশা নয় বরং সহিষ্ণুতা ও ধৈর্য্যই মানুষের জীবনে চরম সাফল্য বয়ে আনে।’-উদ্দিপক ও জীবন সঙ্গীত কবিতা অবলম্বনে উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।