Loading..

প্রকাশনা

১৫ মে, ২০২০ ০৫:২৭ অপরাহ্ণ

লকডাউন বনাম শিশুদের মোবাইল ফোনের অপব্যবহার

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় লকডাউনে থেকে আমাদের শিশুদের মস্তিষ্ক যেন লকডাউন হয়ে না যায় সে দিকটা যেমন খেয়াল রাখা দরকার ঠিক তেমনি শিশুরা যেন মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্ত না হয় কিংবা মোবাইল ফোনের অপব্যবহার করতে না পারে সে দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে ।

একটা গল্প দিয়েই শুরু করি, ছোট চাচা ভাইঝিকে বলল মা তুমি খেলাধুলা করনা? ভাইঝির উত্তর করি চাচ্চু।
-কতক্ষণ খেল মা,
-মোবাইলের চার্জ শেষ না হওয়া পর্যন্ত খেলি চাচ্চু।
হ্যা এটাই! যেখানে গবেষকরা বলছে শরীরের ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য শারীরিক পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই
সেখানে আমার সন্তান মোবাইলের চার্জ শেষ না হওয়া পর্যন্ত খেলে ।
শিশুরা একটু -আধটু জেদ করবে এটা স্বাভাবিক কিন্তু অনেক মা-বাবাই শিশুর জেদ বা কান্নার জন্য তাদের
মোবাইল ফোনটি তুলে দেয় শিশুটির হাতে। তৎক্ষণাৎ হয়তো শিশুটির কান্না থামে,জেদ বন্ধ হয় কিন্তু শিশুটির ভবিষ্যতের জন্য এটা কতবড় ক্ষতি ,কত বড় হুমকি তা তারা নিজেরাও জানে না। অনেক মা-বাবাই আছে শিশু খেতে না চাইলে তাদের মোবাইল ফোনটি শিশুর হাতে দিয়ে কিংবা ফোনের স্কিনে ভিডিও দেখিয়ে শিশুকে খাওয়ায় ।এটা আর একটা বড় সমস্যা ,শিশুর ভবিষ্যতের জন্য। এভাবেই শিশুরা আসক্ত হয়ে যায় মোবাইল ফোনের প্রতি । এক গবেষণায় দেখা গেছে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশের শিশুরা মোবাইলের প্রতি বেশি আসক্ত ।
মোবাইল ফোনের প্রতি বেশি আসক্তির কারনে আজ নানা রোগের জন্ম নিচ্ছে শিশুদের শরীরে । ডাঃ প্রানগোপাল দত্ত তার এক প্রবন্ধে বলেছেন –মোবাইল ফোন শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর , মোবাইল ফোন থেকে নির্গত রশ্মি শিশুদের দৃষ্টিশক্তির ভীষণ ক্ষতি করে। যেসব শিশু দৈনিক পাঁচ –ছয় ঘন্টা মোবাইল ফোনে ভিডিও গেম খেলে বা অ্যানিমেশন ছবি দেখে , খুব অল্প বয়সে তারা চোখের সমস্যায় পরে।
তিনি আরও বলেছেন – “সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যেদিন মোবাইল ফোনকে সিগারেটের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর হিসাবে চিহ্নিত করা হবে”।
মোবাইল ফোন বা অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স গেজেট এর প্রতি আসক্ত শিশুদের সামাজিক দক্ষতা নষ্ট হচ্ছে । ফলে তারা ভুগছে নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় । দীর্ঘ সময় স্কিনে চোখ রাখার ফলে তৈরি হচ্ছে চোখের সমস্যা , বসে থাকার ফলে বেড়ে যাচ্ছে স্থুলতা আর কমে যাচ্ছে কল্পনাশক্তি , যা একটি শিশুর বিকাশের জন্য অপরিহার্য । মনের প্রশান্তি , কল্পনাশক্তি, সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধির উপায়সহ আর অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন , কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত তথ্যমতে “বয়স ১৮ হওয়ার আগে স্মার্টফোন থেকে সন্তানকে নিরাপদে রাখুন “।
“ফেসবুক ও স্মার্টফোন হতাশা ও বিষণ্নতা বাড়ায়।“
বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলের উপর ভিত্তি করে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন কতৃক প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বলেছেন “ভার্চুয়াল ভাইরাস অন্যান্য ভাইরাস থেকেও বেশি ভয়ানক “।ভার্চুয়াল ভাইরাসের ফলে সৃষ্ট বিপদ হচ্ছে ভার্চুয়াল বিপদ । ভার্চুয়াল বিপদগুলো হচ্ছে –
১। সেলফাইটিস –সেলফি তোলা রোগ
২। মোবাইল ফোন রেডিয়েশনের ফলে –বাড়ছে ক্যান্সার ও টিউমার
৩। স্মার্টফোন –অস্থিরতা উদ্বেগ বাড়ায় ।
ভার্চুয়াল বিপদ থেকে সাবধানে রাখতে হলে শুধু এই লকডাউনের সময় নয় , অন্য সময়ও মোবাইল ফোন থেকে দূরে রেখে শিশুর মানসিক বিকাশ সাধন করাতে হবে ,বাড়াতে হবে কল্পনা শক্তি , তৈরি করতে হবে যোগ্য জনশক্তি । ভুলিয়ে দিতে হবে কবিগুরুর সেই উক্তি-“সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী
রেখেছ বাঙ্গালি করে -মানুষ কর নি।“
শিশুকে মানুষ করার জন্য শিশুর মানসিক বিকাশের উপায় সম্পর্কে বলতে গিয়ে ডাঃনাফিসা আবেদীন বলেছেন – শিশুর মানসিক বিকাশের পাচটি উপায় –
১। সুস্থ পারিপার্শ্বিক পরিবেশ
২। সৃজনশীল খেলনা
৩। ছবি আঁকা
৪। সংগীতচর্চা
৫। বই পড়া
এই লকডাউনের সময় প্রতিটি শিশুর এগুলো চর্চা করা উচিৎ ।
করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় শরীরের ইমিউনিটি বাড়ানোর ব্যাপারে ডাঃ উম্মে শায়লা রুমকি মনে করেন শিশুদের খেলার ছলে ব্যায়াম করানো যেতে পারে ।
একজন অভিবাভক- একজন মা-বাবা চাইলেই শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য লকডাউনে ঘরে থেকে শিশুর মানসিক বিকাশের উপায়গুলো এবং খেলার ছলে ব্যায়াম শিখিয়ে বা করিয়ে ভবিষ্যতের একজন যোগ্য নাগরিক জাতিকে উপহার দিতে পারে ।
সর্বশেষ বলতে চাই করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় শিশুদের মোবাইল ফোনের অপব্যবহার থেকে দূরে রাখুন । শিশুর মানসিক বিকাশের সুযোগ করে দিন । শিশুকে ঘরেই রাখুন, ঘরে থাকুন , সুস্থ থাকুন।

পতি রায়  

সহকারী শিক্ষক (ব্যাচ-২০১৮)
দুহুলী বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
কালীগঞ্জ, লালমনিরহাট।
প্রাক্তন তথ্য প্রযুক্তি কর্মকর্তা(স্কয়ার হসপিটাল)
সদস্য -বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটি ।

 

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি