Loading..

খবর-দার

০৯ জুন, ২০২০ ০১:৩৬ অপরাহ্ণ

২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে কৃষিখাতে আসছে নতুন ২০৫ প্রকল্প

করোনাকালে একমাত্র আশার আলো দেখিয়েছে কৃষিখাত। এজন্য আগামী অর্থবছরে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে কৃষি। খাতটির উন্নয়নে নতুন করে ভাবছে সরকার। এর অংশ হিসেবে আসছে ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ২০৫টি নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পুরো কৃষিখাত মিলে (কৃষি, খাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় হতে পারে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা।                                                                                                                                    পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো.নূরুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এডিপিতে বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের তালিকায় এসব প্রকল্প যুক্ত করা হয়েছে। তবে ঢালাওভাবে প্রকল্পগুলো অনুমোদন পাবে না। আগামী অর্থবছরের শুরুতেই জুলাই মাসের শেষ দিকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে গুরুত্ব নির্ধারণ করা হবে। প্রকল্পগুলো প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় এই তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হবে। যেসব প্রকল্প প্রথম গুরুত্বের তালিকায় থাকবে সেগুলো আগে প্রক্রিয়াকরণ করে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হবে।’ গুরুত্ব নির্ধারণে করোনার প্রভাব মোকাবিলার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে জানান তিনি।           তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের এডিপিতে চলমান প্রকল্পে বরাদ্দের ক্ষেত্রেও কৃষিখাত বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ৬২৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে ১ হাজার ৭৫৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়িয়ে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৩৮২ কোটি ১২ লাখ টাকা।’                                                       পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, কৃষিখাতের বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্পগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের প্রকল্প রয়েছে দুটি। এছাড়া বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের তিনটি, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ১৭টি, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের চারটি, ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের দুটি, বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষের তিনটি, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের ১৫টি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ৩৩টি, বীজ প্রত্যায়ন এজেন্সির একটি, কৃষি বিপনণ অধিদফতরের পাঁচটি, মৃত্তিকা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের দুটি, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের একটি, জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমির একটি এবং গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি প্রকল্প রয়েছে।                                                                                           কমিশন সূত্রে আরও জানা যায়, কৃষিখাতের সব সেক্টরের মধ্যে বনের অননুমোদিত নতুন প্রকল্প রয়েছে ১৭টি। এছাড়া মৎস্য সাব সেক্টরে রয়েছে ২৬টি নতুন প্রকল্প। প্রাণিসম্পদ সাব সেক্টরে প্রকল্পের সংখ্যা ২৩টি এবং সেচ সাব সেক্টরে ২৭টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া খাদ্য সাব সেক্টরে নতুন প্রকল্পের সংখ্যা ১৮টি।                                                                                                কৃষিখাতের গুরুত্ব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) এবং বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সাবেক সভাপতি ড. শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার এই চরম দুর্দিনে বন্ধু হিসেবে দাঁড়িয়েছে কৃষিখাত। ব্যাপক বোরো ধান চাষ হওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে না। তাছাড়া লকডাউনের মধ্যেও কৃষি পণ্যের সরবরাহ ভালো থাকায় মানুষ খেতে পেরেছে।’

তিনি বলেন, ‘করোনায় মূল্যস্ফীতিও অসহনীয় পর্যায়ে যায়নি। করোনার প্রভাববে শিল্প ও সেবাখাত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলেও কৃষিখাত কিন্তু চালুই ছিল। করোনাভাইরাস কৃষিখাতের গুরুত্বকে বুঝিয়ে দিয়েছে। তাই আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি হতে যাওয়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়ও বিশেষ গুরুত্ব পচ্ছে স্বাস্থ্য ও কৃষিখাত। সেইসঙ্গে আগামী বাজেটেও এই দুই খাতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’                                                                                                                                                                   আগামী অর্থবছরের জন্য উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নতুন প্রকল্প হচ্ছে- অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতে সবজি ও ফল চাষ জোরদার করা। এটি বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এছাড়া সিলেট অঞ্চলে আধুনিক প্রযুক্তির বিস্তার, পতিত জমিতে চাষাবাদ ও শস্য বহুমুখীকরণ চর্চার মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প। এটিতে ব্যয় হবে ২২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এছাড়া উত্তরবঙ্গের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক এবং অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কৃষি সহায়তা ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭৬ কোটি টাকা।

এছাড়া কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, পুষ্টি উন্নয়ন ও নারীরর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এনজেল মডেল সম্প্রসারণ প্রকল্পের ব্যয় ৩৬৩ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। পরিবেশ বান্ধব ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে আধুনিক বালাই নাশক পরীক্ষাগার এবং প্লান্ট ডায়াগনেসিস সেন্টার শক্ষিশালীকরণ ও স্থাপন বাবদ ব্যয় হবে ৭৯০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধির সমন্বিত প্রকল্পের জন্য ৬৭০ কোটি টাকা এবং পার্বত্য এলাকায় কাজুবাদাম এবং কফি চাষ গবেষণা,উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য ৩২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম