Loading..

প্রেজেন্টেশন

১৯ জুন, ২০২০ ১১:১৯ অপরাহ্ণ

টেলিভিশনের মাধ্যমে ভিডিও ক্লাস প্রচার শিক্ষার্থীদের পাঠ অনুশীলনে মনোযোগী করে তুলছে, যা প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

মহামারী করোনাভাইরাস জনজীবনকে অনেকটা স্তম্ভিত করে দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলেই তা সংক্রমিত হচ্ছে। এ দুর্যোগের সময় শিক্ষার্থীরা যাতে পিছিয়ে না যায় এবং একাডেমিক কার্যক্রম ভেঙে না পড়ে, এজন্য অনলাইন ও টিভির মাধ্যমে ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা যখন ঘরে বসে অলস সময় কাটাচ্ছে, ঠিক সেসময় টেলিভিশনের মাধ্যমে ভিডিও ক্লাস প্রচার শিক্ষার্থীদের পাঠ অনুশীলনে মনোযোগী করে তুলছে, যা প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

কিছু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অনলাইনের মাধ্যমে পাঠদানের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। দুর্যোগ-পরবর্তী সময়েও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নির্দিষ্ট টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে ভিডিও এবং অনলাইন শিক্ষার ধারাবাহিকতা চালু রাখলে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি মনোযোগী ও উপকৃত হবে বলে অভিভাবক মহলে দাবি উঠেছে। চীনে এ দুর্যোগে উইচ্যাট ও মেসেঞ্জারের মাধ্যমে শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছেন। একইভাবে বাড়ির কাজও দেয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির উপাদান মানুষের ড্রইংরুমে ও হাতে হাতে। ফলে ভিডিও ক্লাস, ই-লার্নিং, ই-বুক অধিক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

শিক্ষাক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত জ্ঞান অর্জনে ডিজিটাল ক্লাসরুম ও অনলাইন শিক্ষা একটি শুভসূচনা। শত শত বছরের পুরনো শিক্ষাদান পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটিয়ে ডিজিটাল ক্লাস এক অভিনবরূপে হাজির হয়ে কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে সবার কাছে সমাদৃত হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল পদ্ধতির ক্লাসে ভিডিও দেখে এবং লেসন শুনে শুনে আ ত্মস্থ করতে অধিক আগ্রহী। টিভিতে অথবা অনলাইনের মাধ্যমে পাঠ ও বিষয়বস্তু আয়ত্ত করে নেয়।

প্রচলিত পদ্ধতির পাঠদান শিক্ষার্থীদের কাছে কঠিন ও নীরস। পরীক্ষায় ভালো ফল করলেও অনেকে কর্মজীবনে দক্ষতা দেখাতে পারে না। প্রকৃত ও জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা থাকলে কাজের অভাব হয় না।

শিক্ষাব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। ডিজিটাল শিক্ষায় ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের মাধ্যমে অল্পসময়ে অধিক ও সর্বশেষ তথ্য দেয়া সম্ভব হয়। ই-শিক্ষার মাধ্যমে দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর মাঝে একসঙ্গে জ্ঞানের আলো পৌঁছে দেয়া সম্ভব।

যেসব প্রতিষ্ঠান মাল্টিমিডিয়া ও ভিডিওর মাধ্যমে ক্লাস নিচ্ছে, আধুনিক পদ্ধতি হিসেবে সেসব প্রতিষ্ঠান জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। শিক্ষকরাও বেশি কার্যকর শিক্ষা দিতে সক্ষম হচ্ছেন। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে শিক্ষকদের কর্মক্ষমতাও বাড়ানো সম্ভব।

ডিজিটাল শিক্ষা শিক্ষার্থীদের কাছে অনেক বেশি আনন্দময় ও সহজবোধ্য। ডিজিটাল কনটেন্ট পাঠ্যপুস্তকে বর্ণিত বিষয়কে শব্দে, ছবিতে, এনিমেশন, ই-তথ্যকোষ ও গতিময়তায় উপস্থাপন করা হয়। তথ্যচিত্রের মাধ্যমে যে কোনো জটিল বিষয় সহজে উপস্থাপন করা যায়।

অনলাইনে ওয়েব লিংক ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা নিজে নিজে স্টাডি করতে পারে। ফলে শিক্ষার্থীরা অনলাইন শিক্ষার দিকেই বেশি আগ্রহী হচ্ছে।

বাংলাদেশে কয়েকটি ওয়েবসাইট চালু রয়েছে। শিক্ষা হতে পারে মডিউলার ফরমের স্বশিক্ষণ পদ্ধতির, যা থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েই শিখতে পারে এবং একা একা শিখতে পারে।

শিক্ষার্থীদের চিন্তাশক্তি যাতে বিকশিত হয়, এ বিষয় খেয়াল রেখে পাঠদান পদ্ধতি আকর্ষণীয় এবং আনন্দময় করে তোলা প্রয়োজন। দেশীয় সম্পদ ও কালচারের সঙ্গে মিল রেখে উদ্ভাবনী ও দক্ষতামূলক শিক্ষা এবং বাস্তব জীবনে কাজে লাগবে এরূপ শিক্ষা কনটেন্ট তৈরি করা প্রয়োজন।

অনলাইনের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী নিজের ভবিষ্যৎ উপযোগী ডিগ্রি বেছে নিয়ে তা সম্পন্ন করতে পারেন। অনেক সময় দেখা যায়, একজন শিক্ষার্থী নিজের পছন্দমতো বিষয়ে ভর্তি হতে পারে না। তখন সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারে না।

শিক্ষা কোনো গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা একসময় একটি প্রত্যয় ও স্বপ্ন ছিল। মানুষ এখন এর সুফল পাচ্ছে।

শিক্ষাক্ষেত্রে জিজিটাল বা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের আন্দোলন সফলতা পেয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবস্থা এখন গ্রাম শহর সর্বত্র বিস্তৃত। ফলে আধুনিক মানের শিক্ষা এখন সর্বত্র সমান।

বিভিন্ন দুর্যোগের সময় শিক্ষাব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্য তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন কৌশল উদ্ঘাটন করতে হবে।

এক্ষেত্রে শিক্ষার বিষয়বস্তুগুলো ডিজিটালাইজেশন হতে পারে। এদেশে দূরশিক্ষণ ও ডিজিটাল শিক্ষার পথিকৃৎ হিসেবে কাজ করেছে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রতিষ্ঠানটি গোড়া থেকেই অডিও ভিডিও’র মাধ্যমে শিক্ষাসেবা দিয়ে আসছে। বর্তমানে ই-বুক, ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ওপেন বাংলা ওয়েব টিভি, ওপেন বাংলা ওয়েব রেডিও, বাউবি টিউব, বাউবি অ্যাপস, মোবাইল অ্যাপস, অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম, ইন্টার একটিভ ভার্চুয়াল ক্লাসরুম ও ই প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে এখন বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিবান্ধব শিক্ষাধারা বিকশিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ফরমাল ও ননফরমাল শিক্ষা প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী পর্যন্ত শিক্ষাসেবা দিয়ে যাচ্ছে।

প্রযুক্তি মেধা ও মননের সমন্বয় ঘটিয়ে একটি জাতি সামনের দিকে এগিয়ে যায়। এক্ষেত্রে প্রযুক্তি উন্নয়নের অন্যতম চাবি হিসেবে কাজ করে।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন কর্তৃক উদ্ভাবিত মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের ধারণা এক বিশেষ পদক্ষেপ। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে কম খরচে বা বিনামূল্যে লেখাপড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

ইতোমধ্যে সরকার দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল ক্লাস নির্মাণে কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয়েছে ডিজিটাল ল্যাব কিন্তু সেসব প্রতিষ্ঠান কতটুকু ডিজিটাল পদ্ধতিতে ক্লাস নিচ্ছে এবং ল্যাব ব্যবহার করছে, তা নিয়ে শিক্ষার্থী ও সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের এসব প্রকল্প থেকে শিক্ষার্থীরা যাতে যথাযথভাবে উপকৃত হতে পারে এজন্য জোরালো নজরদারি প্রয়োজন।

ডিজিটাল ক্লাস অব্যাহত থাকলে প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্যের হাত থেকেও রেহাই পাবে শিক্ষার্থীরা। বর্তমান ও আগামী দিনের অনেক চ্যালেঞ্জ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমেই মোকাবেলা করতে হবে। করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম যখন বন্ধ, তখন ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থাই শিক্ষাকে টিকিয়ে রেখেছে