সহকারী অধ্যাপক
২৭ জুন, ২০২০ ১১:৪৬ অপরাহ্ণ
ভূতের চাঁদ
ভূতের চাঁদ
*****-****
মিতু পড়তে বসেছে;কিন্তু পড়ায় তার মন নেই।
কারণ আজ বৃহস্পতিবার,কাল শুক্রবার স্কুল বন্ধ।ফলে পড়ার চাপ নেই। তাছাড়া আজ
প্রাইভেট স্যার নেই,তার বকা-যকাও নেই।
বৃহস্পতিবার এলেই মিতু খুশি হয়। এ দিন সে ইচ্ছেমত পড়তে পারে। আজ পড়ায় যখন
মন বসছে না তখন সে রঙ পেন্সিল দিয়ে আঁকাজোঁকা শুরু করল। কিন্তু কিছুতেই সে
রংএর সাথে রঙ মেলাতে পারছিল না।
কারণ তার কাছে নীল এবং হলুদ রং নেই। কি
করা যায়,কি করা যায় ভাবতে ভাবতে তার মাথায় বুদ্ধি এল,নিপার কাছ থেকে দু'টো
রঙ এর পেন্সিল নিয়ে আসলে মন্দ হয় না। কিন্তু বিপত্তি হল, মা দেখতে পেলে
বিপদ হবে। তাই সে চুপিচুপি নিপার কাছে যাওয়া ঠিক করল।বাইরে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি
হচ্ছিল। একটু আগে মুষলধারে বৃষ্টি হয়ে গেছে। গেইট খুলে চুপি চুপি সে বাইরে
এসে দেখে আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ জ্বলজ্বল করে আলো দিচ্ছে। এত সুন্দর চাঁদ
সে এর আগে কখনো দেখেনি। সে শুনেছে চাঁদে নাকি একটি বুড়ি আছে, যে বসে বসে
চরকায় সুতা কাটে। চাঁদ দেখতে দেখতে আর ভাবতে ভাবতে সে নিপার বাসার দিকে
এগুতে লাগল। হটাত করে কাদায় পা পিছলে সে পড়ে গেল এবং কাদায় তার জামা নোংরা
হয়ে গেল। এ অবস্থায় বাসায় গেলে নির্ঘাত মায়ের বকুনি খেতে হবে এবং মারও খেতে
হতে পারে। তাই বুদ্ধি করে সে এবার চাঁদ দেখতে দেখতেই পুকুর ঘাটে চলে গেল
ময়লা ধুতে। পুকুরে নামতেই সে দেখে চাঁদ এবার পানিতে। হাতের কাছেই চাঁদকে
পেয়ে যেই ধরতে গেল অমনি চাঁদ ভেঙে খান খান হয়ে গেল এবং মিতুও ধপাস করে
পানিতে পড়ে গেল। একটু একটু সাঁতার জানত বলে সে হাবুডুবু খেতে লাগল। অজু
করতে আসা এক মুসল্লি তাকে দেখে টেনে তুলল ; কিন্তু ততক্ষনে সে অনেক পানি
খেয়ে ফেলেছে। যখন তাকে বাসায় নিয়ে আসা হল তখন সে একেবারে বাকরুদ্ধ।
কোনভাবেই তার মুখ থেকে কেউ কোন কথা বের করতে পারল না। অবশেষে তাকিয়া
মসজিদের ইমাম সাহেবকে ডেকে আনা হল। তিনি অনেক ঝাড়ফুঁক করলেন,পড়ানো সরিষার
তেল মাখলেন। কিছুতেই মিতুর মুখে কথা নেই। ইমাম সাহেব তার গলায় তাবিজ কবয
পরালেন। অনেক পরে মিতুর মুখে কথা ফুটল। সে বলল, আকাশের চাঁদ পানিতে পড়ে
টুকরা টুকরা হয়ে গেছে। তার মুখে আরও বিস্তারিত শুনে ইমাম সাহেব তখন উপস্থিত
সকলকে নানান কথা বলে অবশেষে বললেন, মিতু যে চাঁদের কথা বলেছে সেটা আসল
চাঁদ নয়, সেটা হচ্ছে ভূতের চাঁদ।।