Loading..

খবর-দার

০৫ জুলাই, ২০২০ ০৮:৫৪ অপরাহ্ণ

দেশে শেষ ৫০০ মৃত্যু ১৩ দিনে, শেষ দেড় হাজার ৪১ দিনে

দেশে ৮ মার্চ থেকে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর ধীরে ধীরে সারা দেশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। দিনে দিনে শনাক্তের পাশাপাশি মৃত্যুও বাড়তে থাকে। দেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার ৭৯ দিনের মাথায় মৃত্যুর সংখ্যা ৫০০ ছাড়ায়। আর পরের ৪১ দিনে মৃত্যু ছাড়িয়ে যায় আরও দেড় হাজার।

দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৮ মার্চ থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে এমনটাই দেখা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, আজ রোববার পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২ হাজার ৫২ জন। দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। আর আজ রোববার মারা গেছেন ৫৫ জন। আর একদিনে সর্বোচ্চ ৬৪ জন মারা গেছেন গত ৩০ জুন।

দেশে করোনা সংক্রমণের পর প্রথম ৫০০ মৃত্যু পার হতে লেগেছিল ৭৯দিন। এরপর ১৬ দিনে দ্বিতীয় ৫০০, ১২ দিনে তৃতীয় ৫০০ ও ১৩ দিনে চতুর্থ ৫০০ মানুষের মৃত্যু হলো করোনায়।

করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৬২ হাজার ৪১৭ জন। প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিন হাজার নতুন শনাক্ত রোগী যুক্ত হচ্ছে। এত মানুষের যথাযথ চিকিৎসা দিতে না পারায় মৃত্যু বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অনেক দেশের তুলনায় দেশে মৃত্যুহার এখনো কম।দেশে শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুহার ১ দশমিক ২৬ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, মার্চে সব মিলে করোনায় মারা যান ৫ জন। এপ্রিলে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়ায় ১৬৩ জনে। এরপর মে মাসে মারা যান ৪৮২ জন। আর জুনে মারা গেছেন ১ হাজার ১৯৭ জন।

করোনাভাইরাস নিয়ে নিয়মিত তথ্য প্রদানকারী অনলাইন পোর্টাল ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য বলছে, বিশ্বে একদিনে সাড়ে ৮ হাজার মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তবে এটি কমে এখন সাড়ে তিন থেকে চার হাজারে নেমে এসেছে। অধিকাংশ দেশেই মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসছে।

করোনা শনাক্তের সংখ্যায় বিশ্বে ১৮তম অবস্থানে এখন বাংলাদেশ। আর মোট মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশে অবস্থান ২৭ নম্বরে। তবে দিনে নতুন মৃত্যুর হিসেবে ২১ নম্বরে বাংলাদেশ। শনাক্ত রোগী বেড়ে যাওয়া, চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা, রোগীর জন্য হাসপাতালে শয্যার অপ্রতুলতা, অক্সিজেন ঘাটতি এবং বয়স্ক ও অন্য রোগে আক্রান্তদের মধ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়ায় দেশে মৃত্যু বাড়ছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

করোনায় মৃতের ৭৯ শতাংশ পুরুষ

জাতিসংঘের নারী উন্নয়ন তহবিল ইউএন উইমেন বলছে, সব দেশেই করোনা আক্রান্ত হয়ে নারীর তুলনায় পুরুষ বেশি হারে মারা গেছেন। জার্মানিতে পুরুষ মৃত্যুর হার ৫৫ এবং নারী ৪৫ শতাংশ। ইতালিতে ৫৮ শতাংশ পুরুষ ও ৪২ শতাংশ নারী মারা গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ৫৪ শতাংশ পুরুষ ও ৪৬ শতাংশ নারী মারা গেছেন।আর করোনা শুরুর দেশ চীনে ৬৩ শতাংশ পুরুষ ৩৭ শতাংশ নারী মারা গেছেন। এ ছাড়া করোনায় মৃতদের মধ্যে ভারতে ৬৩ শতাংশ ও পাকিস্তানে ৭১ শতাংশ পুরুষ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দেশে করোনায় ‍মৃতের ৭৯ শতাংশ পুরুষ ও ৩১ শতাংশ নারী। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬২৪ জন পুরুষ ও ৪৯৭ জন নারী মারা গেছেন করোনা আক্রান্ত হয়ে। তবে এর বাইরে করোনার উপসর্গ নিয়ে আরও অনেকের মুত্যু ঘটলেও তার কোনো সরকারি হিসাব নেই।

গত ২৩ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) নাসিমা সুলতানা অনলাইন ব্রিফিংয়ে বলেন, একটি আর্ন্তজাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, নারীর তুলনায় পুরুষের মৃত্যুহার বেশি। জিনগতভাবে নারীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হয়ে থাকে।এ ছাড়া নারীর তুলনায় পুরুষেরা বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে ভোগেন। ধূমপান, মদ্যপানের মতো ক্ষতিকর জিনিসে নারীর তুলনায় পুরষের অভ্যস্ততা বেশি।সামাজিক দূরত্ব রক্ষা না করার প্রবণতাও বেশি পুরুষের।

অন্য দেশের তুলনায় কম বয়সীরা মারা যাচ্ছে

বয়স বিবেচনায় অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুর ধরণে মিল পাওয়া যাচ্ছে না।অধিকাংশ দেশেই তুলনামূলক বৃদ্ধরা মারা যাচ্ছেন বেশি। ইউরোপে মারা যাওয়া ৭০ শতাংশের বয়স ৭০ বছরের বেশি। ভারতেও মৃতদের প্রায় ৭৫ শতাংশ হচ্ছেন ৬০ বছরের বেশি বয়সী।যুক্তরাষ্ট্রে মারা যাওয়া ৯০ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের বেশি।

তবে দেশে তুলনামূলক মধ্যবয়সীরা বেশি মারা যাচ্ছে। দেশে করোনায় মৃতের ৫৭ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের কম। অধিদপ্তর বলছে, করোনায় মৃতের ৪৩ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের বেশি।৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ২৯ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১৫ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৭ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৩ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী ১ শতাংশ করোনা রোগী মারা গেছেন। ১০ বছরের কম বয়সীরাও করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন দেশে। এটি এক শতাংশের কাছাকাছি।

জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মৃত ব্যক্তির বয়স ও লৈঙ্গিক পরিচয় দিলেও মৃত্যুর কারণ, উপসর্গ বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রকাশ করে না। জেলাওয়ারী করোনা শনাক্তের সংখ্যা বলা হলেও মৃত্যুর সংখ্যা বলা হয় শুধু বিভাগওয়ারী। এতে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে ঢাকা বিভাগে। এর মধ্যে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ শহর এলাকায় মৃত্যুর হার বেশি।